কারা আসছেন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে
আলী আদনান
প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:০৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের একটি ঐতিহ্য আছে। এখানে একদিকে যেমন নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন হয় তেমনি বেরিয়ে আসে নতুন নেতৃত্ব। প্রত্যেক সম্মেলনের আগেই কারা কারা নতুন নেতৃত্বে আসতে পারেন তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-গুঞ্জন। বিশেষ করে সংগঠনের প্রধান দুটি পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসতে পারেন সেদিকে থাকে সবার দৃষ্টি। সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণার সময় থেকেই শুরু হয় পদ প্রত্যাশীদের জোর লবিং তদবির। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে কাজ করে এক ধরনের স্নায়ু চাপ। নিজ নিজ বলয়ে চলে লবিং গ্রুপিং। কে কতো ত্যাগী, কার কতোটুকু গ্রহণযোগ্যতা তা প্রমাণের জন্য নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা হয়ে উঠেন মরিয়া।
ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনও তার ব্যতিক্রম নয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ২৯ তম সম্মেলন। গঠণতন্ত্রে দুই বছর পর পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় এবারে মূল নেতৃত্ব প্রত্যাশীর সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই বেশী।
আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যেমনি ঐতিহ্যবাহী তেমনি বড় সংগঠন। ১১০ টি সাংগঠনিক জেলায় এর কার্যক্রম বিস্তৃত। তবে দু`একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব আছে এমন কাউকে মূল নেতৃত্বের জন্য বাছাই করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না এমনটাই বলছেন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাইকারীরা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগে আলাদা ভাবে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নেই। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদেরকে নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্ব দেন তারা নানা যোগ বিয়োগ করে দু`জন কে বাছাই করেন। সেখান থেকে বয়স,আঞ্চলিকতা এসব বিবেচনায় নিয়ে কে সভাপতি কে সাধারন সম্পাদক হবেন তা নির্ধারণ করা হয়। তবে সবকিছুর শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হয়। তবে একাধিক প্রার্থী থাকলে যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব না হয় তাহলে নির্বাচন আবশ্যক হয়ে পড়ে।
উনত্রিশতম সম্মেলনে কীভাবে নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে বা কারা কারা মূল নেতৃত্বে আসবে তা এখন নিশ্চিত করে বলা না গেলেও মূল নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের চলছে জোর তৎপরতা। কর্মী সমর্থকদের মধ্যেও চলছে উৎসাহ উদ্দীপনা। বরাবরের মতো এবারো আলোচিত প্রার্থীদের পাশে এলাকার পরিচিতি উঠে আসছে। সে হিসেবে এবারো বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ ও ফরিদপুরের প্রার্থীদের নাম শোনা যাচ্ছে জোরে।
তবে পিছিয়ে নেই বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ ও খুলনা অঞ্চলের নাম। মূল নেতৃত্বে আসতে পারে এমন কিছু নারী নেতৃত্বের নাম আছে বেশ আলোচনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট ও ঢাকা মহানগর ইউনিটের দায়িত্ব পালনকারী নেতাদের নামও আলোচনায় আছে।
ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বে আসতে পারেন এমন আলোচনায় আছেন জহুরুল হক হলের সাবেক সাধারন সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়ের নাম। বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক সাধারন সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক খাদেমুল বাশার জয়ের নামও জোরোশোরে আলোচিত হচ্ছে। এরা তিনজনই বরিশাল এলাকার সন্তান।
চট্টগ্রামের অনেকেই মূল নেতৃত্ব প্রত্যাশী হলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আদিত্য নন্দী সভাপতি পদে বেশ আলোচনায় আছেন। পিছিয়ে নেই কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম ও স্কুল ছাত্র বিষয়ক উপসম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আরাফাতও।
কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল শাখার সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী দু`জনেই উত্তরবঙ্গের সন্তান। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বের জন্য তাদের নামও আসছে নানা আলোচনায়।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আরেফিন সিদ্দিক সুজনের কথা অনেকে বলছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নামও আছে শীর্ষ দুই পদের একটির আলোচনায়। মূল নেতৃত্বের দৌড়ে ফরিদপুরের এই দু`জনও এগিয়ে আছেন।
সিলেটের সন্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুল ইসলাম জুয়েল মূল নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে জানালেন অনেকে। ময়মনসিংহের সন্তান ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হাবীবুল্লাহ বিপ্লব ও এসএম হলের সাধারন সম্পাদক মেহেদি হাসান তাপস নেতৃত্বের দৌড়ে বেশ এগিয়ে। খুলনার সন্তান বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক সাগর হোসেন সোহাগও সভাপতি-সম্পাদক পদ পাওয়ার দাবিদার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারন সম্পাদক বায়েজিদ আহমেদ খানকেও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বে চাচ্ছেন অনেকে। তবে ঢাবি কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বে থাকায় প্রিন্সকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাও দেখা যেতে পারে।
এদিকে এবার প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকজন নারী নেত্রীর নামও উঠে আসছে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক পদের দাবিদার হিসেবে। তাদের মধ্যে বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতির নাম উঠে আসছে জোরেশোরে। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইশাত কাশফিয়া ইরা, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শেখ মারুফা নাবিলা, সহ সম্পাদক শিরীন শিলার নামও আলোচিত হচ্ছে। সুফিয়া কামাল হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ বিষয়ক উপ সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদারের কথাও কেউ কেউ বলছেন।
এছাড়াও বর্তমান কমিটির কৃষিশিক্ষা বিষয়ক উপসম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার, উপপ্রচার সম্পাদক সাইফুর রহমান সাইফ, আপ্যায়ন বিষয়ক উপসম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসম্পাদক এইচ এম তাজউদ্দিন, উপদপ্তর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ছাত্রবিষয়ক উপসম্পাদক খাজা খায়ের সুজন, মুক্তিযোদ্ধ জিয়াউর রহমান হলের সাধারন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, স্যার এএফ রহমান হল শাখার সাধারন সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার, কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপসম্পাদক আল মামুন, সহ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, উপকৃষি বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি বিদ্যুত শাহরিয়ার কবির ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য রেজওয়ানুল হক শোভন- এর মধ্য থেকেও উঠে আসতে পারে আগামী কমিটির মূল নেতৃত্ব।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্ব ক্লিন ইমেজের নেতারা আসবেন সেটি কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতারাও প্রত্যাশা করেন। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইছহাক আলী খান পান্না একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড। তাই সংগঠনে এমন নেতৃত্ব আসা উচিত যাতে করে সংগঠনের সব নেতাকর্মী ও দেশবাসী ছাত্রলীগের উপর আস্থা রাখতে পারে। পুরোনো ঐতিহ্য যেনো ফিরিয়ে আনতে পারে তেমন নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস এক সুতোয় গাঁথা। তা থেকে প্রমাণ হয় ছাত্রলীগের অতীত যোগ্যদের হাতে ছিল। আমার বিশ্বাস আগামী দিনেও অতীতের মতো আমরা উজ্জ্বল নেতৃত্ব পাবো।
/ এআর /