ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার আহ্বান অর্থমন্ত্রীর

প্রকাশিত : ০৪:৪৫ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ দেশের সাবলীল উন্নয়নে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংস্থাটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক) আয়োজিত উন্নয়নে অর্থায়নবিষয়ক (এফএফডি) তৃতীয় ফোরামে কান্ট্রি স্টেটমেন্টে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।

নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় পাওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ মঙ্গলবার এ কথা জানানো হয়।

মন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন সুবিধা এবং অন্যান্য মৌলিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতি সাধন করেছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে জিডিপি ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের ওপরে এ কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের জিডিপির গড় ৭ শতাংশের বেশি। এর ফলে ২০০৫ সালের দারিদ্র্যসীমা ৪০ শতাংশ থেকে ২০১৬ সালে ২৩ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ এ বছর প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং এ ক্ষেত্রে তিনটি নির্দিষ্ট ধাপে কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবধান নিয়ে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

মুহিত বলেন, রাজস্ব প্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কার শুরু হয়েছে। নতুন সরাসরি ট্যাক্স কোড ও নতুন কাস্টম আইন প্রণয়নেরও কাজ চলছে। সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইলেকট্রনিকভাবে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও ই-জিপির সফল বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ‘সরকারি দপ্তরসমূহে ফলাফলভিত্তিক কর্মসম্পাদন ব্যবস্থা প্রবর্তন’, ‘ভূমি-ব্যবস্থাপনা জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণের আধুনিকীকরণ’, প্রকল্প প্রণয়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং আর্থিক খাত স্থিতিশীল রাখার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ।

মুহিত বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, এতে নারী, বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অক্ষমদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সরকার নারী ও শিশু সংবেদনশীল বাজেটও প্রণয়ন করছে।

দেশের বেসরকারি খাতের সামর্থ্য বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ১২টি হাই-টেক পার্ক স্থাপনসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করেছে। বাজেটে জলবায়ু-সংক্রান্ত কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিতে ২০১৪ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে জলবায়ু-সংক্রান্ত আর্থিক কাঠামো।

রোহিঙ্গা সমস্যার উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকরা আমাদের উন্নয়নের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিজ ভূমিতে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় সমর্থন প্রত্যাশা করছি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে তিনি ‘আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা’র পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে এসডিজির সফল বাস্তবায়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উত্তম সহায়তা দিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অর্থায়ন ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অর্থমন্ত্রী ‘এসডিজির জন্য উদ্ভাবনীমূলক অর্থায়ন : ইসলামিক অর্থব্যবস্থার ভূমিকা’ এবং ‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আর্থিক রূপান্তর : অর্থ-প্রযুক্তির বিপ্লব’ শীর্ষক দুটি সাইড ইভেন্টে বক্তব্য দেন। উভয় ইভেন্টেই বাংলাদেশ ছিল সহ-আয়োজক।

‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আর্থিক রূপান্তর : অর্থ-প্রযুক্তির বিপ্লব’ শীর্ষক সাইড ইভেন্টে কি-নোট স্পিকার হিসেবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থ-প্রযুক্তির বিপ্লব বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে এসেছে। এ ছাড়া তিনি মোবাইল ব্যাংকিং, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ডিজিটাল এজেন্ট ব্যাংকিং, ডিজিটাইজড পেমেন্ট, ক্ষুদ্রঋণ ও মাইক্রো ফাইন্যান্সসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর অর্থ-ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন। ইভেন্টটিতে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়কমন্ত্রী বামব্যাং পি.এস. ব্রোডজোনেগোরো, আফগানিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুস্তফা মাসতুর এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএনএস ক্যাপের নির্বাহী সচিব মিজ্ সামসাদ আক্তার বক্তব্য দেন।

এর আগে ইকোসকের উন্নয়নে অর্থায়নবিষয়ক তৃতীয় ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে এসডিজি অর্থায়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান সংবলিত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একটি ভিডিও বার্তা সরবরাহ করা হয়। উচ্চ পর্যায়ের এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ লাইচ্যাক, ইকোসকের সভাপতি ম্যারি চ্যাটারডোভা এবং ডেপুটি মহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ বক্তব্য দেন।

এফএফডির চলতি কর্মসূচি ২৬ এপ্রিল শেষ হবে। এফএফডির এই তৃতীয় ফোরামে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তথ্যসূত্র: বাসস।

এসএইচ/