সংরক্ষণশীল কৃষি
চাষাবাদের নতুন দিগন্ত
প্রকাশিত : ০৫:১৭ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার
সংরক্ষণশীল কৃষি আবাদ মূলত একটি চাষাবাদের পদ্ধতি, যার মাধ্যমে স্বল্প চাষে পূর্ববর্তী ফসলের কিছু অবশিষ্টাংশ রেখে কম সময়ে ও কম খরচে লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এ আবাদ পদ্ধতিতে গম, ভুট্টা, ডাল, তৈলবীজ, পাট ও রবিশস্যে স্বাভাবিক চাষ পদ্ধতির চেয়ে ফলন ১৫ শতাংশ বেশি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তা ছাড়া এ পদ্ধতিতে কৃষকের উৎপাদন খরচ শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ কম হয়।
সংরক্ষণশীল কৃষি পদ্ধতি বলতে সামগ্রিকভাবে তিনটি পদ্ধতিকে বুঝায়। যথাসম্ভব কম চাষ করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও মাটির রস বজায় রাখা, মাটির রস ধরে রাখতে পূর্ববর্তী ফসলের কিছু অবশিষ্টাংশ মাটির উপরিভাগে রেখে দেওয়া এবং ধান ও অন্যান্য ফসলের মধ্যে লাভজনক শস্য পর্যায় অবলম্বন করা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের অপরিকল্পিত ব্যবহারে মাটির উর্বরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে।
ফলে অদূর ভবিষ্যতে কৃষি কাজ মারাত্মক হুমকির সম্মুক্ষীন হবে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৃষি কাজ টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন কৃষি কাজের ধরনের পরিবর্তন ও সচেতনতা বৃদ্ধি। যাতে প্রাকৃতিক সম্পদেরও ক্ষতি না হয় এবং ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়। এ জন্য উন্নত দেশগুলোতে (অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ব্রাজিল) সংরক্ষণশীল কৃষি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংরক্ষণশীল কৃষি আবাদ পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে এটি যান্ত্রিক উপায়ে ফসল উৎপাদনের একটি অংশ, জমিতে পূর্ববর্তী ফসলের ৮-১০ ইঞ্চি নাড়া রেখে সিডার মেশিনের সাহায্যে একই সঙ্গে সরু লাইনে জমি চাষ ও বীজ বপন করা যায়। আলাদা করে চাষ দিয়ে জমি তৈরির প্রয়োজন হয় না। তবে এটি নিয়ে আরও বেশি পরিমাণে গবেষণা করা দরকার বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ওয়াইস কাবির।
কম চাষ জমির রস সংরক্ষণ করে, ক্ষয় রোধ করে ও মাটির উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করে, অধিক চাষে খরচ ও সময়ের অপচয় হয় কিন্তু কম চাষে খরচ কম হয় সময়ের অপচয় কম হয়, শ্রমিক কম লাগে ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়, জমিতে নাড়া রাখার ফলে জমিতে জৈব পদার্থ যোগ হয়, মাটির পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং লবণাক্ততা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ধান, গম, ভুট্টা, ডাল শস্য এমনকি পাটও চাষ করা যায়। স্বাভাবিক চাষের চেয়ে আগাম বীজ বপন করা যায় যা শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক। সংরক্ষণশীল কৃষি সময়, সেচ, শ্রমিক, সার, বীজ সর্বোপরি উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করে এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
একে//এসি