কোটা পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনার সময় এসেছে : রাশেদা কে চৌধুরী
প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:২১ এএম, ৮ মে ২০১৮ মঙ্গলবার
একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী। চাকরি মিলছে না। স্নাতকোত্তর পাশের পর ৩ থেকে ৪ বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সর্বোচ্চ সনদ নিয়ে করতে হচ্ছে কোচিংও। তাতেও অনেকের চাকরি মিলছে না। আবার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোটার মারপ্যাঁচে ধুঁকছে মেধাবীরা। কোটা সুবিধা নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা ক্ষেত্রবিশেষে মেধাহীনরাও চাকরি পেয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরি পরীক্ষা সর্বত্র দেদারসে চলছে প্রশ্নফাঁস। এতে লেখাপড়া না করেও ফাঁকফোকরে সনদ পেয়ে যাচ্ছে মেধাহীনরা। তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গলদটা কোথায়? এর সুলোক সন্ধানে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় সাবেক ত্বত্তবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ রুবেল।
একুশে টিভি অনলাইন: শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। শিক্ষা ব্যবস্থায় কি ধরণের পরিবর্তন আনা এই মুহূর্তে জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
রাশেদাকে চৌধুরী: অনেকেই শিক্ষার আমূল পরিবর্তনের কথা বলে থাকেন। শিক্ষা ব্যবস্থা তো উল্টিয়ে ফেলা যাবে না। শিক্ষার মান উন্নয়ন তো রাতারাতি করে ফেলা যাবে না। এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। তবে অবশ্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যেখানে যতটুকু ত্রুটি আছে, ঘাটতি আছে সেগুলোকে চিহ্নিত করেযুগোপযোগী করতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা পদ্ধতি চালু রয়েছে। এর ফলে মেধাবীরা চাকরির ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা এ ব্যবস্থা বাতিলের দাবি তুলেছে। একইসঙ্গে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ করারও দাবি উঠে আসছে। এ বিষয়ে একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে আপনার মত কি?
রাশেদা কে চৌধুরী: পৃথিবীর সর্বত্রই কোটা পদ্ধতি একটি সাময়িক ব্যবস্থা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার জন্যই কোটা ব্যবস্থা। আমাদের দেশে একটি বিশেষ কোটা রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধা কোটা। মুক্তিযুদ্ধারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধারের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ কোটা ব্যবস্থা রাখার দরকার আছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য যে কোটাগুলো আছে, সেগুলো সময়ের প্রয়োজনে অবশ্যই পর্যলোচনা করা যেতে পারে। এবং সেটা করা প্রয়োজন। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। তারা নিশ্চই এটি বিচার-বিবেচনা করবেন। আমি যেটা মনে করি সেটি হচ্ছে, নানা কারণেই নানা চক্রে পড়ে শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে যায়। যার কারণে পড়ালেখা শেষ করে বের হয়ে আসতে না আসতেই অনেকের শিক্ষার্থীদের সরকারী চাকুরীর বয়সসীমা শেষ যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সরকারি চাকরির বয়স ৩৫-ই করে ফেলতে হবে। বিষয়টি যুক্তিতর্ক হলে তা খতিয়ে দেখতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: উন্নত দেশগুলো যেখানে শিক্ষাখাতে জন্য বাজেটের মোট জাতীয় আয় থেকে ৬ ভাগের বেশি ব্যয় করে। যেমন মালদ্বীপে বরাদ্দের পরিমাণ জিডিপির ৭ শতাংশের বেশি, মালয়েশিয়ায় জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ,৬ দশমিক ২ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ ২ ভাগের মধ্যেই ঘুড়পাক খাচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বৈষ্যম দূর করতে এই বরাদ্দ কি যথেষ্ট?
রাশেদা কে চৌধুরী: শিক্ষাখাতের জন্য আদর্শ ব্যয় বলতে কিছুই নেই। তবে, বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর সরকার প্রধান এবং নীতি নির্ধারকরা যে ঘোষণা পত্রে সাক্ষর করেছেন, সেটা হলো টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। সেখানে কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ জিডিপির নূন্যতম ৪ শতাংশের কথা বলা আছে। অথবা মূল বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দের কথা বলা আছে। আমরা সেখানেও ১০থেকে ১১এর উপরে উঠতে পারি না। জিডিপির ২ এর উপরেও উঠতে পারছি না। শিক্ষায় এই বিনিয়োগটা আমাদের অবশ্যই বাড়াতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি ও বাজারমুখী শিক্ষা অনেকটাই উপেক্ষিত। একটি রাষ্ট্রের জন্য কেমন শিক্ষাব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন?
রাশেদা কে চৌধুরী: উচ্চতর শিক্ষা পৃথীবীর কোথাও বাধ্যতামূলক নয় বা সবার জন্যও নয়। উচ্চতর শিক্ষায় যারা যাবেন তারা হয় তো ভবিষ্যতে শিক্ষক হবেন, প্রশিক্ষক অথবা পেশাগত প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে ডাক্তার হবেন, ইঞ্জিনিয়ার হবেন, বৈজ্ঞানিক হবেন। বর্তমান যুগে মানুষকে তো নানা ধরনের অপশন দিতে হবে। সে কোন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করবে সেটা তার পছন্দ। কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সব নাগরিকের জন্য মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। আমাদের শিক্ষানীতিতে একাট ভালো নির্দেশনা দিয়েছিল, অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে নিয়ে যাওয়া এবং তা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা। তারপরে শিক্ষার্থীরা বা অভিভাবকরা চিন্তা করবে কারগরি শিক্ষা, না সাধারণ শিক্ষা নাকি অন্যশিক্ষায় যাবে। তবে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সহযোগিতা লাগবে।
একুশে টিভি অনলাইন: পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাসের হার বাড়ছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির সঙ্গে কি শিক্ষার গুণগত মান বাড়ছে? না বেড়ে থাকলে কেন বাড়ছে না?
রাশেদাকে চৌধুরী: শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। শুধু পাবলিক পরীক্ষা নয়, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়েই প্রশ্ন আছে। পরীক্ষা হচ্ছে মান নির্ধারণে একটি পন্থা মাত্র। শুধুমাত্র পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার মান যাচাই করা যায় না। পরীক্ষা ভিত্তিক মূল্যায়ন সঠিক মূল্যায়ন নয়। মান যাচাই করণের নানা ধরণের ব্যবস্থা আছে। যেমন শ্রেণী কক্ষের ধারাবাহিক মূল্যায়ন। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো কি করে? তারা তো প্রায়ই শ্রেণীকক্ষে পরীক্ষা নেয়। উচ্চ শিক্ষায় যাওয়ার আগে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো তো চারটি পাবলিক পরীক্ষা নেয় না। ও লেভেলে যাওয়ার আগে তো তাদের চারটি পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয় না। কেবল সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার আগে চারটি পাবলিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শিক্ষার মান রাতারাতি হয় না। এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক জড়িত। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে শিক্ষক। শিক্ষক যদি মানসম্পন্ন হন তাহলে শিক্ষাও মানসম্পন্ন হবে না। কিন্তু সেই জায়গায়ও আমাদের ঘাটতি ঘাটটি আছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে এ ঘাটতি পূরণ করা আবশ্যক।
একুশে টিভি অনলাইন: প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পরীক্ষা আগের দিন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। যেটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। কোনো কোনো শিক্ষাবিদরা বলছেন, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করার আগে দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে প্রাক নিয়োগ প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরী ছিল, তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটতো না। আবার ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁস রোধে সৃজনশীল পদ্ধতিসহ পিইসি ও জেএসসি এবং নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা পদ্ধতি উঠিয়ে দেওয়ার কথাও বলছেন কেউ। এক্ষেত্রে আপনার মত কি?
রাশেদা কে চৌধুরী: প্রথম কথা হলো মাথা ব্যাথা হলেই, মাথা কেটে ফেলা যাবে না। প্রশ্ন ফাঁসের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতিকে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রশ্নফাঁসের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতি দায়ী নয়। প্রশ্নফাঁসের জন্য দায়ী হচ্ছে নীতি ও নৈতিকতার অভাব এবং অসাধু চক্র। আর এর জন্য দায়ী সমাজে মূল্যবোধের অভাব, প্রশাসনের তদারকির অভাব, প্রযুক্তির অপব্যবহার। প্রশ্নপত্র তৈরির শুরু থেকে বিতরণ পর্যন্ত দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্নফাঁসের উৎস কোথায় তা খুঁজে বের করতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত হোতাদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না করে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতিকে দায়ী করে লাভ নেই। দ্বিতীয় হলো- সৃজনশীল পদ্ধতি প্রাক নিয়োগ প্রশিক্ষণ। আমাদের প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষা পর্যন্ত কোথাও প্রাক নিয়োগ প্রশিক্ষণ তো নেই। প্রাক নিয়োগ প্রশিক্ষণ অনেক দিনের দাবি, আমাদের দাবি, শিক্ষাবিদদের দাবি এমনকি প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক সহ সর্বস্তরের দাবি। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে দেওয়ার আগে প্রশিক্ষণ দিতে গেলে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধত আছে। হঠাৎ করে কেন প্রশ্নফাঁসের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতিকে দায়ী করা হচ্ছে? কোথায় প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থা তো সৃজনশীলতার কোনো সম্পর্ক পাইনি। তারা তো পেয়েছে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য কিছু শিক্ষক দায়ী, কোচিং সেন্টার দায়ী। আর আমি বলব নীতি নৈতিকতাকে গুরুত্ব দেয় না নতুন প্রজন্মের এমন কিছু শিক্ষার্থী দায়ী। অন্যদিকে যারা শিক্ষা নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে তারা প্রশ্নফাঁস করছে। এখানেই সরকারকে কঠোর হতে হবে। সৃজনশীল পদ্ধতি বন্ধ করে প্রশ্নফাঁস রোধ করা যাবে না। অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁস করছে। এরা সুযোগটা পায় কি করে? পাচ্ছে ভুরিভুরি পরীক্ষার কারণে। উচ্চ শিক্ষায় যাওয়ার আগে কেন চারটি পাবলিক পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের? কই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে ও লেভেলের আগে তো এত পরীক্ষা নেই। এত পরীক্ষার ছড়াছড়ি অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্ম দিয়েছে অভিভাবক, শিক্ষকসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। এমনকি শিক্ষার্থীদের মাঝে। সবাই প্রতিযোগিতায় নেমেছে যেকোনো মূল্যে জিপিএ ফাইভ পাওয়ার।
এগুলোর সুযোগ নিচ্ছে অসাধু চক্র। অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিছু শিক্ষার্থীদের ধরা হয়েছে চট্টগ্রামে। কিন্তু প্রশ্নফাঁসের জন্য তো শিক্ষার্থীরা দোষী নয়। প্রশ্ন ফাঁসের হোতারা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফেলেছে। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসকারী আসল হোতাদের ধরা যাচ্ছে না। তাদেরকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিৎ। শিক্ষাব্যস্থায় যেখানে যেখানে ফাকফোকর আছে সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশ্ন ফাঁসের হোতা এবং উৎস না খুঁজে সৃনজনশীল পদ্ধতিকে দায়ী করে লাভ নেই।
একুশে টিভি অনলাইন: প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস করা হচ্ছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না কেন?
রাশেদা কে চৌধুরী: সেটাই তো প্রশ্ন। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যদি অপরাধ করা যায়, তাহলে সেই প্রযুক্তিও তো আছে যা অপরাধ রোধ করে। অতীতে দেখা গেছে ফেসবুক সামাজিক মাধ্যমে কারো নামে কোনো কটুক্তি করা হলে, কারো কোন লেখা এবং স্টাটাসের কারণে কারো ধর্মীয় মূলবোধে আঘাত লাগালে সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী তাদের ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তাহলে কেন প্রশ্ন ফাঁসের হোতাদের ধরা হচ্ছে না? তাদেরকে ধরে কেন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা হচ্ছে না? এখন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: প্রশ্ন ফাঁস রোধে করণীয় কি?
রাশেদাকে চৌধুরী: প্রশ্নফাঁস রোধে তাৎক্ষণিক যে ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার শিক্ষা মন্ত্রণলায় তা নিয়েছে। যেমন- ইন্টারনেটের গতি কমানো হয়েছে, পরীক্ষার হলে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের পৌছানোর নির্দেশ দিয়েছে। পরীক্ষা শুরু ২৫ মিনিট পূর্বে লটারী সিস্টেমে প্রশ্ন সেট র্নিণয় করা। এগুলো সবই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্নফাঁস রোধে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা হিসেবে পুরো পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করতে হবে।
দ্বিতীয়টি হলো, যারা বা যে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ধরা পড়বে তাদের বিচার করা। এ পর্যন্ত ১৫০টি মামলা হয়েছে। কিন্তু একটিরও বিচার হয়নি। আমি তো মনে করি আমাদের জাতিকে বাঁচতে হলে, এ ধরনের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয় হলো, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে মূলত ৪টি পক্ষ জড়িত। এরা হলেন- শিক্ষক,শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষা প্রশাসন। তার মধ্যে এখন ডুকেছে অপরাধ চক্র, অপরাধীরা। এই ৪টি পক্ষ এক হয়ে অপরাধীদের ধরার কথা। অথচ আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? অনেক অভিভাবকরা উৎসাহি হয়ে সন্তাদেরকে অনৈতিক কাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তাদের বুঝা উচিৎ জিপিএ ফাইভ পাওয়াই জীবনের শেষ অর্জন নয়। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফল হয় তো তারা পাবে। কিন্তু শিক্ষার আলো তারা পাবে না। তাই অভিভাবকদের উচিত হবে না অনৈতিক কাজের দিকে সন্তানদের ঠেলে দেওয়া।
আরেকটি বিষয় হলো প্রযুক্তির সঙ্গে কারা জড়িত। মূলত ৪ টি পক্ষ জড়িত, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রশাসন। এই চারটি পক্ষকে এক হয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে অপরাধীদের ধরার। এছাড়া আইন করে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: কুদরত-ই খোদা কমিশনের শিক্ষানীতি বর্তমান কোন পর্যায়ে আছে?
রাশেদা কে চৌধুরী: বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ কুদরত-ই খোদা কমিশন করেছিলেন। কিন্তু আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে কমিটি হয়েছে,শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি। পরে আর কমিশন নিয়ে কোনো কাজই হয়নি। সর্বশেষ যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি হয়েছিল। তারা যে শিক্ষানীতি তৈরি করেছিলেন, সেটা তো ২০১০সালে সংসদে গৃহিত হয়ে গেছে। কমিশন করার তো প্রয়োজন নাই এই মূহুর্তে। শিক্ষনীতি প্রণয়ন কমিটি অনেকগুলো কমিশন করার কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটা হচ্ছে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন। শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন কমিশন ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়েছে ২০১০ সালের শিক্ষনীতিতে। কিন্তু সেগুলো এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়নে আমরা যেতে পারিনি।
/ এআর /