ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মাদ্রাসায় বাধ্যতামুলক হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ১১:৪৭ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৪৫ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার

দেশের ধর্মীয় শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের কর্ম ও বাজারমুখী শিক্ষা নিশ্চিতে স্কুল-কলেজের মতো এবার মাদ্রাসায়ও কারিগরি শিক্ষা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।  দুই এক বছরের মধ্যে মাধ্যমিকের সব স্তরে এই শিক্ষা চালু করা হবে। প্রথমে অষ্টম বা নবম শ্রেণিতে একটি বা দুটি ট্রেড চালু করা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি বড় পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে চালু করা হলেও প্রতিটি মাদ্রাসায় আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা দেওয়া হবে এবং নম্বর দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না। নানা ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদের নম্বর দেওয়া হবে। কম্পিউটার, বাংলা, ইংরেজি, জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, অংক, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার দু‘একটি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের জীবনে কাজে লাগাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসডিজি অর্জন ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের যোগ্যতা অর্জনে কারিগরি শিক্ষাকে অন্যতম টার্গেট ধরে এগোচ্ছে সরকার। মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা চালু করা হলে দেশে বেকারত্ব ঘুচবে বলে আশা করছে সরকার।

মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব হাইস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় কারিগরি শাখা চালু করা হবে পর্যায়ক্রমে। প্রাথমিক স্তর থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা হবে সিলেবাসে। ইতোমধ্যে শিক্ষক সংকট, সিলেবাস, অবকাঠামোসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে ১৪ শাতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য। নারীদের ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা আরও কম। বর্তমানে কারিগরিতে নারী শিক্ষার্থী ২০ শতাংশেরও কম। নারীদের কারিগরি শিক্ষায় আরও বেশি যুক্ত করার লক্ষ্যে আটটি বিভাগীয় শহরে মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনসহ নতুন আরও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আধুনিক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক মাদ্রাসা শিক্ষা চালু করতে মাদ্রাসায় কারিগরি ও ভোকেশনাল কোর্স বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, সারাদেশে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের টেন্ডার হয়ে গেছে। দেশের যে ২৩ জেলায় পলিটেকনিক কলেজ নেই সেসব জেলায় পলিটেকনিক কলেজ নির্মাণের কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় একটি করে ট্রেডের ওপর কারিগরি শিক্ষা চালু করার পরিকল্পনা আছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী  একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কর্ম ও বাজারমুখী করার জন্য প্রতিটি মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা ব্যধত্যামূলক করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয় শিক্ষা সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক কবে নাগাদ করা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আগামী বছর থেকে কারিগরি শিক্ষা চালু করা হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে করা হচ্ছে হয়তো তার পরের বছর থেকে। মানে আশা করি দু’এক বছরের মধ্যে চালু হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা সচিব মো. আলমগীর একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ডেমোগ্রোফিক ডিভিডেন্ড (জনসংখ্যার বোনাস কাল) সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলতে হলে কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। যে কারণে স্কুল কলেজের পাশাপাশি মাদ্রাসাতে কারিগরি শিক্ষা ব্যধত্যামুলক করা হবে। তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামুলক করা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। সর্বোপরি কারিগরি শিক্ষা ছাড়া ক্রমবর্ধমান জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা অসম্ভব। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী বলতে স্বনির্ভর অর্থনীতি, যার অর্থ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে উপযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক নিজস্ব প্রযুক্তি সম্বলিত উন্নয়ন আবশ্যক, তার ধারাবাহিকতা এবং মাধ্যম হল কারিগরি শিক্ষা। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে সামগ্রিভাবেই কাজ করছে সরকার। এজন্য সরকার  স্কুল কলেজের মতো মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা চালু করা হবে।

টিআর/এস এইচ এস//