ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

দেশে দেশে বুদ্ধ পূর্ণিমা

ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়

প্রকাশিত : ০৭:০৮ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৭:১৮ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশগুলোতে অত্যন্ত ঝাকঝমক ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপন করে থাকে।বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ নেপাল, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, থাইল্যাণ্ড, কম্ভোডিয়া, মালয়শিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভূটান, মিয়ানমার, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ইত্যাদি। বুদ্ধ জন্মোৎসব হলেও মূলত: বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণের ত্রি’স্মৃতি বিজড়িত দিবস হিসাবে পালিত হয়। বাংলাদেশেও বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হিসেবে বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় উদযাপিত হয়। বিশাখা নক্ষত্র যোগে বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল বলে অনেকে বৈশাখী পূর্ণিমা হিসেবে এ উৎসবকে অভিহিত করেন। এদিন বাংলাদেশ সরকার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে।

এ বৎসর অর্থাৎ ২০১৮খ্রিস্টাব্দ বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা দিবস এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। The United Nations Day of Vesak International Council ব্যাংকক শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতি সংঘ এ দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে। নিউইর্য়ক জাতিসংঘের সদর দপ্তরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশ গ্রহণে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হচ্ছে।

থেরবাদী বৌদ্ধরা চন্দ্র মাসকে অবলম্বন করে দিবসটি উদযাপন করে। আর মহাযানী বৌদ্ধরা বিশেষ করে চীন, জাপান, হংকং, ম্যাকাউ, তাইওয়ান চাইনিজ Lunar  ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। ১৯৫০ সালে বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ বৈশাখকে বুদ্ধের জন্ম বার্ষিকী হিসেবে প্রথম কলম্বোতে আর্ন্তজাতিক সন্মেলন করেন। তাদের আবেদনে নেপালের মহামান্য প্রয়াত রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহদেব ঐ দেশে বুদ্ধের জন্মবাষির্কী হিসেবে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। ভগবান বুদ্ধকে পৃথিবীতে একজন শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী হিসেবে মনে করে থাকেন। কারণ তিনি জীবনব্যাপী মানবতা, অহিংসা ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন। সকল প্রাণী সুখী হোক, এছিল বুদ্ধের অসীম মৈত্রী করুণার গুণ। তিনিই একমাত্র মহামানব ভোগের পৃথিবীকে ত্যাগের পৃথিবী রূপে দেখেছেন।

বুদ্ধের জীবন থেকে আমরা তিনটি মূল্যবোধের শিক্ষা পেয়ে থাকি- রাজ ঐশ্বর্য ত্যাগ করে সন্ন্যাস জীবন, মৈত্রী ও করুণার অপার মহিমা এবং প্রজ্ঞার সাধনা। এ তিনটি গুণই নির্বাণ সাধনার ফল স্বরুপ। বৈরাগ্য হচ্ছে সকল তৃঞ্চার বন্ধন ছেদন, মৈত্রী ও করুণা হচ্ছে দ্বেষের প্রতিষেধক এবং প্রজ্ঞা হচ্ছে অবিদ্যার নির্মূল। নির্বাণ লাভ করতে হলে বুদ্ধের এ শিক্ষা অনুশীলন করতে হবে।

বিভিন্ন দেশে বুদ্ধ পূর্ণিমাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করেন। ইংরেজিতে এভাবেই লিখে থাকে  Vesakha, Vesak, Wesak, Waisak, Visakah Puja, Vaishaka, Buddha Purnima,Visakha Bucha, Saga Dawa, (fodan), FatDaehb and Wei SaiJie ইত্যাদি।মহাযানী বৌদ্ধরা ঐতিহ্যগত ভাবে ঠধরংধশযধ’সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত। সিংহলী বৌদ্ধরা Vesakha কে Vesak অথবা Wesak হিসেবে অভিহিত করে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এটাকে বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা, বুদ্ধ জয়ন্তী বলে থাকে। জাপানে, Hanamatsuri  কোরিয়াতে Seokka Tanshin-il (Hanja), চীনা ভাষাবাসীরা Mandarin, Dodan, Cantonese:Fat Daahn, ভিয়েতনামীরা, Phat Dan তিববতি বৌদ্ধরা Saga Dawa (sa ga zla ba) বার্মিজরা (Kasone la- pyae Bodane ) ঐতিহ্যগত ভাবে বার্মিজ ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় মাস, কম্ভোডিয়ান বৌদ্ধরা Visak Bocher in Khmer হিসেবে, লাওসের বৌদ্ধরা Vixakha Bouxa in Laotian, থাইল্যান্ডের বৌদ্ধরা Visakhah Puja অথবা Visakho Bucha, ইন্দোনেশিয়ার বৌদ্ধরা Waisak আর মালয়শিয়ান বৌদ্ধরা শ্রীলঙ্কান বৌদ্ধদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে Vesak/Wesak হিসেবে অভিহিত করে থাকে। বিশেষ করে ইংরেজির মে মাসে আর বাংলায় বৈশাখ মাসে স্বভাবত হয়। যেহেতু বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ লাভ বৈশাখে সংগঠিত হয়েছিল।

জাপানের বৌদ্ধরা ব্যতিক্রমীভাবে একটা নির্দিষ্ট তারিখ অবলম্বন করে দিবসটি উদযাপন করে থাকেন। তারা মনে করেন জন্ম দিন একটা নিদিষ্ট তারিখে হয়ে থাকে, তার সে তারিখটি ৮ এপ্রিল নির্ধারিত করেন। প্রতি বৎসর ৮ এপ্রিল তারা নির্ধারিত দিনে দিবসটি উদযাপন করেন। ঐদিন কোন সরকারি ছুটি নাই। ঐচ্ছিক ছুটি যা প্রয়োজন মতো নিয়ে থাকেন। Vesakha সংস্কৃত ভাষায় আর জাপানী Hanamatsuri‡K Kanbutsu-e. Goutan-e, Busshou-e, Yokubutsu-e,Ryuge-e. Hana-eshiki  অভিহিত করে থাকেন।

দিবসটিকে মহিমান্বিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন

email: sougata95@gmail.com