‘কোটার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি’
প্রকাশিত : ০২:৪৭ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার
অামি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু অামি কোটার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা দেওয়া হয়েছিল। তখনকার প্রেক্ষাপটে সেটা সঠিক ছিল। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেদের ছেলেদের ছেলেরা কোটা সুবিধা পাবে এটা অনুচিত, অন্যায়। সে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের হলেও মুক্তিযুদ্ধের অাদর্শ বিরোধী হতে পারে। এমন উদাহরণ কম নয়। অাজ সোমবার সকালে এক মতবিনিময়ে এভাবেই নিজের মতামত ব্যক্ত করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম অাকাশ।
ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিবেশ ও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক মতবিনিময় ও অালোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। টিএসসি মিলনায়তনে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক এমএম অাকাশ এ সময় বলেন, শিক্ষক ছাত্রদের সম্পর্ক পিতা মাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের মতো। সন্তান অন্যায় করলে শাস্তি দেওয়া যায়। কিন্তু যদি তাদের ওপর গুলি চলে, টিয়ারসেল নিক্ষেপ হয় তখন শিক্ষক হয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
কোটা সংস্কারের লক্ষে গড়ে উঠা অান্দোলনকে উদ্দেশ্য করে অধ্যাপক এমএম অাকাশ বলেন, সাধারণ ছাত্রদের এই অান্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অান্দোলন। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই অান্দোলন পরিচালিত হয়নি। শুধু মাত্র বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া এই অান্দোলনে অন্য কারো ছবি ছিল না। একটি মাত্র স্লোগান ছিল যা সংবিধানের সঙ্গে একাত্মতা করে। তা হলো `... বৈষম্যের ঠাঁই নাই`। তাই এটাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
অর্থনীতিবিদ এমএম অাকাশ অারও বলেন, অামাদের সমাজে, রাষ্ট্রে যারা পিছিয়ে অাছে তাদেরকে কিছুটা সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। তবে সেটা হবে পিছিয়ে পড়া বিশেষ লোকদের জন্য ও অল্প সময়ের জন্য। পৃথিবীতে যেসব জাতি দাঁড়িয়েছে তারা মেধার ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়েছে।
এ সময় তিনি বলেন, অামাদের সমাজে নারী, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ- অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে এক প্রজন্মের জন্য কোটা দেওয়া যেতে পারে। তবে সেটা কোনোভাবেই ১৫ শতাংশের এর বেশী নয়। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য পাঁচ শতাংশ ও নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা দেওয়া যেতে পারে।
মতবিনিময়ে এমএম অাকাশ অারও প্রস্তাব করেন, কেউ যদি একেবার কোটা সুবিধা পেয়ে যায় তাকে দ্বিতীয়বার কোটা সুবিধা দেওয়া অন্যায় হবে।
অধ্যাপক এমএম অাকাশ অান্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অান্দোলনে শত্রু পক্ষ ঢুকে অান্দোলকে ঘোলা করতে পারে। তার অন্যতম উদাহরণ ভিসির বাসভবন অাক্রমন। ভিসি নিজে বলেছেন, যারা অাক্রমন করেছে তারা প্রশিক্ষিত ও বহিরাগত। অামার শিক্ষার্থীরা যারা আন্দোলনে জড়িত তারা বহিরাগত বা প্রশিক্ষিত নয়।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের লক্ষে গড়ে উঠা অান্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী কোটা প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি না করায় অতিসত্বর প্রজ্ঞাপন জারি করার আহ্বান জানানো হয় মতবিনিময় থেকে।
অা অা/ এসএইচ/