ঢাকা, শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫,   পৌষ ২৮ ১৪৩১

সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও নেতৃত্বে নেই বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা    

প্রকাশিত : ১০:৪৭ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার

বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরতদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক সামরিক সদস্য নিয়োজিত আছে বাংলাদেশ থেকে। বহুদিন ধরে প্রথম স্থানে থাকলেও কোন মিশনে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশের কোন সামরিক কর্মকর্তা। অন্যান্য দেশের কর্মকর্তাদের অধীনেই কাজ করতে হয় জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য শহীদ হওয়া বাংলাদেশি সামরিক সদস্যদের। এর কারণ হিসেবে  জাতিসংঘে প্রভাব খাটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নীতি নির্ধারকদের পিছিয়ে থাকা এবং অভিজ্ঞতার অভাবকে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে তিন দশক চলছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের আন্ত:বাহিনী জন সংযোগ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ নিয়ে প্রায় ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য অংশ নিয়েছে। 

জাতিসংঘের র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী সামরিক সদস্যের অংশগ্রহণের দিক থেকে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে। এর আগে বাংলাদেশ একটানা শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলো। দেশ ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী সুনাম অর্জন করলেও কোন মিশনে বাংলাদেশের কেউ নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন নজির নেই।

এ বিষয়ে সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহি আকবর বিবিসি বাংলাকে বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশে দুর্বল লবিংয়ের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে জাতিসংঘের ১৩টি মিশন চলছে। এরমধ্যে ১০টি দেশের ১৩টি মিশনে আছে বাংলাদেশের নাম। সেখানে নারী পুরুষ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার সদস্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো অথবা সুদানের মতো বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোতে কাজ করছে বাংলাদেশী সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যান্য বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। নীল পতাকা হাতে আর নীল হেলমেট পরে কাজ করছে তারা। 

এরমধ্যে শুধুমাত্র সাইপ্রাসে ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞতার অভাব সেইসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা থাকায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলে জানান মেজর জেনারেল (অবঃ) ফজলে এলাহি।

শান্তির পথে আসা দেশগুলোর মানবাধিকার রক্ষা, বেসামরিক নাগরিক বিশেষত শিশু ও নারীদের সুরক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে গেছে বাংলাদেশিরা।

এছাড়া সড়ক ও স্থাপনা নির্মাণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সুনাম অর্জন করেছেন। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৩২ বাংলাদেশীর আত্মত্যাগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে হয়।

তারপরও কেন বাংলাদেশ পিছিয়ে? এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোয় দেনদরবারের দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে শান্তিরক্ষা মিশন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয় বাংলাদেশ। ওই মিশনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১৫ সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিলো।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

//এস এইচ এস//এসি