ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

মৃতদেহ সংগ্রহ করেন তারা

প্রকাশিত : ০৮:৫২ পিএম, ২ মে ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৮:৫২ পিএম, ২ মে ২০১৮ বুধবার

ইরাকের মসুল থেকে ইসলামিক স্টেট আইএসকে বিতারণ করা হয়েছে নয় মাস আগে। ২০১৬ এর নভেম্বর থেকে ২০১৭ এর জুন পর্যন্ত টানা আট মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে আইএস মুক্ত হয় উত্তর ইরাকের সব থেকে বড় শহর মসুল। কিন্তু লাশের মিছিল এখনও থামেনি সেখানে।

যুদ্ধ শেষে কয়েকশ’ মৃতদেহ মসুলের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখনও বিভিন্ন ধ্বংসস্তুপ থেকে মাঝে মাঝে পাওয়া যাচ্ছে লাশ। লাশ উদ্ধারকারী এমনই একদল স্বেচ্ছাসেবক তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে বিবিসিকে। ভবিষ্যৎ রেকর্ডের জন্য সেসব লাশের ছবি তুলেছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

বিগত ছয় মাস যাবত মসুলের পুরাতন শহরের লাশ বা মৃতদেশ সংগ্রহ করছে স্রুর আল হুসাইনির নেতৃত্বে থাকা একদল স্বেচ্ছাভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগেও এখান থেকে আমরা ৮০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আরও ১০টি লাশ পেয়েছি আমরা। লাশ উদ্ধারের এই কাজ এখনও অব্যাহত আছে”।

“যখন খুব অন্ধকার হয় অথবা আমরা ক্লান্ত হয়ে পরি শুধু তখনই কাজ বন্ধ থাকে”- বলছিলেন এই স্বেচ্ছাসেবক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজ দলে ২০ জন সদস্য পেয়েছেন স্রুর। এদের মধ্যে কয়েকজন কিশোর-কিশোরীও আছে। প্রতিটি স্থানে নতুন মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেগুলোর সাথে নিজেদের ছবি তোলেন এই দলটি।

এ বিষয়ে স্রুর বলেন, “বিষয়টি শুনতে প্রথমে খটকা লাগতে পারে। আমাদেরকে অনেকে ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে যে, এর মাধ্যমে আমরা আমাদের উদ্ধারকৃত লাশের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখি। এমনটা করতে আমাদের যে ভাল লাগে তা না। বরং খুব কষ্ট হয়। কিন্তু আমরা করি”।

মসুল থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের মধ্যে সাধারণ বেসামরিক নাগরিকদের পাশাপাশি আছে আইএস জঙ্গিদের লাশও। প্রতি সপ্তাহে উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যা একশ থেকে দেড়শ বলেও জানায় স্রুর। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করে এই দলটি।

বিবিসির ঐ প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, মসুলের একটি বাড়ি থেকেই অন্তত ১০০টি মৃতদেহ এবং দেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে আনছে স্রুর দলের কর্মীরা। ঐ একটি বাড়িতে উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করতে দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়।

মসুলের এই মৃতদেহের সংখ্যা এত বেশি যে, বিবিসি প্রতিবেদক যখন তার প্রতিবেদনের জন্য ক্যামেরার সামনে কথা বলছিলেন তখন তার পিছনের ধ্বংসস্তূপ থেকে একের পর এক লাশি নিয়ে বের হচ্ছিল স্বেচ্ছাসেবীরা।

শুধু তাই নয়, মসুলের বিভিন্ন স্থানে এখনও পরে আছে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম। আইএস যোদ্ধাদের ব্যবহার করা সুইসাইড ভেস্ট, গ্রেনেড লঞ্চার এ জাতীয় বস্তু পরে আছে যেখানে সেখানে। মসুলকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অস্ত্রপূর্ণ শহর হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে এসব মৃতদেহ উদ্ধারে যেসব স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন তাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। এসব মৃতদেহ থেকে যেন সংক্রমণ না ছড়ায় সেই কারনেই কাজ করছেন তারা। দেশটির কর্তৃপক্ষের সাহায্যও সেভাবে পাচ্ছে না তারা। অনেকটা নিজ গরজ আর উদ্যোগেই কাজ করছেন তারা।

মসুলে ঠিক কতজন মানুষ মারা গেছেন তা এখনও অনিশ্চিত। ধারণা করা হচ্ছে সংখ্যাটি এক থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত বা তার থেকেও বেশি হতে পারে।

*বিবিসি অবলম্বনে

এসএইচএস/টিকে