ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সারাদেশে রক্তদানে কাজ করছে ব্লাড ডোনারস ফোরাম বাংলাদেশ    

প্রকাশিত : ০৭:২৫ পিএম, ৪ মে ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:২১ এএম, ৫ মে ২০১৮ শনিবার

স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করণে এদেশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেশকিছু সংগঠন, এরমধ্যে খুবই কার্যকর প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টিতে এগিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের সন্দ্বীপের ছেলে মো.কামরুল হাসান। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন "বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরাম নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন" বর্তমানে দেশের সবকটি জেলায় কাজ করছে বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরামের সক্রিয় টিম।   

শুরু আগে কামরুল হাসানের এক আত্বীয় গুরুতর অসুস্থ হয়। তার জন্য বিরল রক্তের গ্রুপের প্রয়োজন হয়। এ সময় তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন। কোনোভাবেই রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন তিনি নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন "রক্ত দরকার, ব্লাড গ্রুপ, ঠিকানা সহ"। এর কিছুক্ষন পরেই পরিচিত একজনের মাধ্যমে রক্ত পেয়ে যান তিনি। তখন কামরুলের মনে হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম করা উচিত যেটার মাধ্যমে এধরনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। 

কামরুল হাসান প্রথমে ফেসবুকে সংগঠিত করেন সারাদেশের সংগঠকদের, কথা বলেন দেশের প্রথম সারির স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন গুলোর সাথে। জেনে নেন, কে কিভাবে কাজ করছে। বুঝতে পারলেন সারাদেশে রক্তদান কার্যক্রম নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয় না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সারাদেশে ছড়িয়ে দেবেন বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরামের কার্যক্রম।

অনলাইনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়েও শুরু করেন বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও রক্তদানে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি। তার এই মহৎ কার্যক্রম দেখে কিছু গুণী ব্যাক্তি যুক্ত হলেন তাদের সাথে। কামরুল হাসান তাদেরকে জানালেন রক্ত দাতাদের আরো উৎসাহিত করতে সংবর্ধনা আয়োজনের কথা তাতে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাই জাতীয় রক্তদাতা দিবস ২০১৫ উপলক্ষে চট্রগ্রামে ২০০ জন স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ও ৩০ টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সংবর্ধিত করে তারা।

উক্ত প্রোগ্রামে রক্তদাতা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয়। এর পর ২০১৬ সালে ২য় বর্ষপূতি উপলক্ষে ৩০০ স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ও ৪০ টি সংগঠনকে সংবর্ধিত করে। রক্তদাতা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যাপক উৎসাহ দেখে তার স্বপ্ন জাগে দেশের প্রতিটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে রক্তদাতা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সংবর্ধিত করার। সে ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে জাতীয় রক্তদাতা উপলক্ষে ঢাকাতে ৫০০ স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ও ৫০ টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সংবর্ধিত করে উক্ত প্রোগ্রামে দেশের ৫৪ জেলার রক্তদাতা ও স্বেচ্ছাসেবক অংগ্রহন করে। এরপর ৩য় বর্ষপূতি উপলক্ষে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ৪০০ জন রক্তদাতা ও ৫০ টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকে সংবর্ধিত করে।

এছাড়া সন্দ্বীপেও রক্তদানের পর ৩৫০ জন স্বেচ্ছায় রক্তদাতাকে সংবর্ধিত করে। রক্তদানে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সংগঠনটি পথে প্রান্তরে বিলি করেছে ৫০ হাজার লিফলেট ও ৬ হাজার ফেন্টুন।

শুধু রক্তদান ও রক্তদানে সচেতনতা বা রক্তদাতাদের সংবর্ধিত করার মধ্যে থেমে থাকেনি সংগঠনটির কার্যক্রম। রোহিঙ্গাদের নির্মম হত্যার প্রতিবাদে চট্রগ্রাম, ঢাকা, সিলেটে মানববন্ধন করে সংগঠটি, এছাড়াও রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ, দেশের প্রতিকূল অবস্থান বর্ন্যাতদের ত্রাণ বিতরণ, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, পরিস্কার পরিছন্ন কর্মসূচি, অসহায়দের আর্থিক সহায়তা প্রদান,বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন সহ নানা ধরনের সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমে সক্রিয় সংগঠনটি।

রক্তদান কার্যক্রমকে আরো সহজ করতে সম্প্রতি তারা চালু করেছে ব্লাড ম্যানেজার নামে একটি ডিজিটাল অ্যাপস। অ্যাপস সম্পর্কে কামরুল হাসান জানালেন, অ্যাপসে ৬৪ জেলার আমাদের স্বেচ্ছাসেবক এর তালিকা দেয়া আছে অর্থাৎ যার যে জেলায় রক্তের প্রয়োজন হবে অ্যাপসের মাধ্যমে রক্তগ্রহীতারা সে জেলার আমাদের স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে কাংঙ্খিত রক্তদাতার সন্ধান নিতে পারবে। এছাড়াও সরাসরি অ্যাপস থেকে উক্ত গ্রুপের রক্তদাতা খুঁজে নিতে পারবে।

অ্যাপসের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে যাদের ৪ মাস রক্তদানের সময় হয়েছে তাদের অটো গ্রীন সিগনাল কালার চলে আসবে। যাদের সময় হয়নি তাদের লাল কালার আসবে। অ্যাপসে রক্তদাতারা নিজের ছবি সহ নিবন্ধন করতে পারবে সহজেই। অ্যাপসের মাধ্যমে মেডিক্যাল টিম এর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবে। রক্তদানের সচেতনতা ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে। তিনি সকল রক্তদাতাদের অ্যাপসে রক্তদাতা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য অনুরোধ জানান। রক্তদান কেন্দ্রিক এই ধরনের ব্যাতিক্রমি অ্যাপস এটি বাংলাদেশে প্রথম দেখা গেল।

বর্তমান প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে কামরুল হাসান জানালেন রক্তের প্রয়োজনে ফেসবুকে রোগীর যাবতীয় তথ্য ও ফোন নাম্বার সহ আমরা পোস্ট করে থাকি। পোস্ট থেকে খুব দ্রুত রক্তদাতার সাড়া পাওয়া যেত কিন্তু এখন একদল দালাল চক্র সেই ফেসবুক পোস্ট থেকে রোগীর নাম্বার নিয়ে রোগীর লোককে রক্ত দিতে বলে এবং গাড়িভাড়া বাবদ বিকাশে টাকা চায়। টাকা পাওয়ার পর ঐ লোক ফোন বন্ধ করে দেয়। এতে রোগী রক্তদাতার আশায় আশায় আরো মূর্ষূষু অবস্থায় পরে। তাই পোস্ট কারী আগে রোগীর লোককে অবশ্যই বলে রাখা উচিত পোস্ট থেকে কেউ রক্ত দিবে বলে টাকা চাইলে বুঝে নিবেন সে দালাল চক্রের সদস্য।

ফেসবুকে স্বীকৃতি মিলছে এর মধ্যেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক টিম বাংলাদেশে এসে রক্তদান নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করে গতবছর। এরপর থেকে ফেসবুকে রক্ত ম্যানেজ করা আরো সহজতর করা হয়েছে, সে আয়োজনে বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরামকে সম্মাননা তুলে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কামরুল বললেন, আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম প্রোগ্রামে যাবো কিনা, যাবার পর তাদের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে কাজের গতি আরো বেড়ে গেল। তাছাড়া পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, লায়ন ক্লাব, বীর প্রতীক কর্নেল (অবঃ) দিদারুল ফাউন্ডেশন সহ ১২ সংগঠন থেকে সংবর্ধিত হয় সংগঠনটি।

কামরুল হাসানের কাছে প্রশ্ন ছিলো, এইযে এত কার্যক্রম। এর পেছনে সমর্থন দিচ্ছেন কারা। কারা করছেন অর্থনৈতিক সহযোগীতা। কামরুল জানালেন, আমাদের উপদেষ্টা ও একাধিক পূষ্ঠপোষক রয়েছেন যারা কেউ পরামর্শ দিয়ে, কেউ অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগীতা করছেন। তারা হলেন- বীর প্রতীক কর্নেল ( অবঃ) মোহাম্মেদ দিদারুল আলম, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এর পরিচালক এবিএম ওয়াহিদুর রহমান, আহসান জামীল টেকনিক্যাল সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি সারওয়ার এহসান জামীল, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন মুন্না, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ লিয়াকত জাহান, মৃত্তিকা প্রপার্টিজ এর চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ফরহাদ, রোটারি গর্ভনর এইড আমিন সোহেল, দেশ বিদেশ টুয়েন্টিফোর ডট কম সম্পাদক লায়ন কাজী জিয়া উদ্দিন সোহেল, একেএইচ গ্রুপ এর কমার্শিয়াল ম্যানেজার আনোয়ারুল মঞ্জু, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।

কামরুল হাসান তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদেশের রক্তদাতাদের আমাদের ব্লাড ম্যানেজার অ্যাপসের আওতায় আনতে ৫০ হাজার স্টিকার করার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় কার্যকরি টিম গঠন করে রক্তদানের এই সেবা পৌঁছে দিতে চাই। রক্তের অভাবে যাতে একটি রোগীরও মূত্যৃ না হয় সেই স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তিনি এটাও মনে করেন এই প্রজম্মেই রক্তের চাহিদা সমাধা করবে।

এসি