ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর এবং আমার কবিতা

মারজানা সাবিহা শুচি

প্রকাশিত : ০৮:১৩ পিএম, ৪ মে ২০১৮ শুক্রবার

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। একটি নাম। একটি ইতিহাস। এই নাম এক নদী অশ্রু গড়িয়ে একটি দেশের জন্মের জন্য নিদারুণ আত্মত্যাগের। এই ইতিহাস স্বাধীন বাংলাকে একাত্তরের ঘাতক মুক্ত করার এক দুর্বার আন্দোলনের। এই নাম সংগ্রামের, দেশপ্রেমের, প্রেরণার!

গতকাল (৩ মে) ছিলো এই মমতাময়ী সংগ্রামী জননীর জন্মবার্ষিকী। আমি অসীম শ্রদ্ধায় তাঁকে আজ স্মরণ করি। সেই সাথে, তাঁকে নিয়ে আমার একটি ব্যক্তিগত স্মৃতি এবং তাঁর স্মরণে নির্মিত শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরের কথা আপনাদের জানাতে চাই।

 

শহীদ জননীর হাতে আমার কবিতা

১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ। আমি তখন ছোট, বয়স বারো বছর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় আমাদের একটি সংগঠন ছিলো-মুক্তিযুদ্ধ চর্চা কেন্দ্র। সেদিন সেখানে সাজ সাজ রব। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আসছেন। রাজশাহীতে অন্য একটি সভার কাজে এসে একটি বিকেল-সন্ধ্যা তিনি আমাদেরকে সময় দিতে রাজি হয়েছেন। তাঁর সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমি নিজের লেখা একটি ছড়া আবৃত্তি করবো। ছোট থেকেই ছড়া কবিতা লেখার সুবাদে আমাদের সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে আমি মাঝে মাঝেই আবৃত্তি করতাম।

ছড়াটি আমি কাগজে ভাল করে লিখে এনেছিলাম দেখে দেখে পড়বো বলে, যেন ভুল না হয়। কাগজটা হাতে নিয়েই যথাসময়ে আবৃত্তি করলাম। পড়া শেষে দেখি শহীদ জননী আমাকে ডাকছেন। আমি খুব মুখচোরা ছিলাম। অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় অসীম শ্রদ্ধায় ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলেও সামনে গিয়ে কথা বলার সাহস হয় নি। ডাকছেন দেখে দুরু দুরু বুকে কাছে গেলাম।

উনি আমার নাম জানতে চেয়েছিলেন প্রথমে, তবে আমি ওনার উচ্চারণ বুঝতে পারি নি। ক্যান্সার আক্রান্ত মুখে ওনার উচ্চারণ একটু অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো তখন। শহীদ জননীর পাশে বসা ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে আমি চাচা ডাকি। হাসান চাচা বললেন, ‘ওর নাম শুচি, আমার মেয়ের নামে নাম।’ চাচার এক মেয়ের নামও শুচি। জাহানার ইমাম বোধহয় কথাটা ভালোমতো শুনতে পান নি, অবাক হয়ে বললেন, ‘আপনার মেয়ে?’ চাচা তাড়াতাড়ি ভুল শুধরে দিয়ে বললেন, ‘না, না, বলছি আমার মেয়ের নামও শুচি, ওর নামও শুচি।’

জাহানারা ইমাম আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে খুব স্নেহের সুরে বললেন, ‘তোমার কবিতাটি আমি নেবো।’

আমি তো অভিভূত! শহীদ রুমীর মা আমার সাথে কথা বলছেন! একাত্তরের দিনগুলির লেখক জাহানারা ইমাম আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন! আবেগে বিহবল আমি কোনো রকমে একটু মাথা নেড়ে হাতের কাগজটা ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম। কিছু বলেছিলাম কি না তা আর আজ মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে, উনি তখন কাগজটা একটু দেখে বলেছিলেন আমার নাম আর বয়স সেখানে লিখে দিতে। কে যেন কলম দিলেন, আমি লিখে ওনাকে কাগজটা দিয়ে সরে এলাম।

এটুকুই আমার স্মৃতি। অমূল্য কয়েকটি মুহূর্ত। সেই কবিতা যে উনি যত্ন করে রেখে দেবেন, আর একদিন তাঁর স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি করা জাদুঘরে সেটি স্থান পাবে, তা কখনো স্বপ্নেও চিন্তা করি নি। হ্যাঁ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরে আমার বারো বছর বয়সে লেখা কবিতাটি এখনো আছে। সেই ২৫ বছর আগের কবিতা! ড্রেসিং টেবিলের উপর, ফ্রেমে বাঁধাই করা। আমার জীবনের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে গৌরবের অর্জন এটি।

 

এক সকালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরে

গত ফেব্রুয়ারির এক শনিবার সকালে আবেগ-কম্পিত হৃদয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম বাড়িটার সামনে। কণিকা। জাহানারা ইমামের লেখা একাত্তরের দিনগুলি বইটি যারা পড়েছেন, তারা জানেন এই বাড়ির কথা। পুরনো এলিফ্যান্ট রোডের শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সরণিতে এর অবস্থান।

এই কণিকাতেই কেটেছে রুমী আর জামী দুই ভাইয়ের মায়ের মমতা, বাবার আদর মাখা হাসিখুশি দিনগুলি, যুদ্ধ এই পরিবারটির সব আনন্দ কেড়ে নেওয়ার আগ পর্যন্ত। এই বাড়িতেই তিনি পার করেছেন একাত্তরের ভয়াল দিনগুলি। রুমীর সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধারা চুপিচুপি এখানে এসেছে, লুকিয়ে রেখেছে অস্ত্র, পরিকল্পনা করেছে গেরিলা আক্রমণের। এই বাড়িতেই পাক সেনাদের হাতে ধরা পড়েছে রুমী। বিজয়ের পর এখানে তাঁর শহীদ ছেলের সহযোদ্ধারা এসে তাঁকে ঘিরে বসে থাকতো। খুব তরুণ বয়সে হত্যা, নিপীড়ন আর নিষ্ঠুরতার ভয়ানক স্মৃতি এই বিষাদগ্রস্থ তরুণদের হয়তো বিপথে ভাসিয়ে নিতে যেতো, যদি না সন্তানহারা এই জননী শত মুক্তিযোদ্ধার মা হয়ে তাদের নির্ভরতার জায়গা হয়ে উঠতেন।

শনিবার এবং বিশেষ বিশেষ জাতীয় দিবস ছাড়া জাদুঘরটি খোলা হয় না, তাই এর আগে একবার এসেও বন্ধ পেয়ে ফিরে গিয়েছিলাম। এবার একদিনের জন্য ঢাকা গিয়েছিলাম বইমেলায় যাবো বলে, এক ঝুলি পেন্সিল ঘরে আনবো বলে, তবে সেই একদিনটা বেছে নিয়েছিলাম শনিবার, যেন জাদুঘরেও যেতে পারি।

তবে প্রথমবার গিয়েই বাহির থেকে বাড়িটি দেখে খুব হতাশ হয়েছিলাম। নেই, একাত্তরের দিনগুলি পড়ে যে সুন্দর বাড়িটির ছবি মনে আঁকা হয়ে গিয়েছিলো, বাড়িটি সেই চেহারায় আর নেই। ভেঙ্গে কয়েকতলা বিল্ডিং তোলা হয়েছে। তবু, সেই সময়টাতো আটকে আছে এই বাড়ির দোতলায়, তাই কেমন এক উত্তেজনা নিয়ে বাড়িটির সামনে দাঁড়াতেই মনে হলো টুকরো টুকরো ইতিহাস আমার চারপাশে জড়িয়ে ধরেছে।

দোতলায়, মিউজিয়ামে প্রবেশের আগে পা একটু থমকে গিয়েছিলো। একাত্তরের দিনগুলি বইটি পড়ে কতই না ভালোবেসেছি জাহানারা ইমামকে, কত আপন মনে হয়েছে রুমী জামী দুই ভাইকে, সেই তাঁদের বাড়িতে এখন আমি ঢুকছি!

দরজা খুলে মিউজিয়ামের এক আপু হাসিমুখে স্বাগত জানালেন। আর কোন দর্শনার্থী ছিলো না সেই সময়। আরো কয়েকটা আলো জ্বেলে দেশাত্ববোধক গানের মিউজিক চালু করে দিলেন তিনি। পরে আলাপ হয়েছিলো, তিনি ইয়াসমিন আপু।

সব মানুষই বোধহয় নিজেকেই বেশি ভালোবাসে। চারপাশে শহীদ জননীর কত কি স্মৃতিচিহ্ন, আমার চোখ প্রথমেই খুঁজতে লাগলো আমার নিজের কবিতাটি। প্রবেশ দরজার খুব কাছেই ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা ছিলো সেটি। মেয়ে বৈশালী আর তার বাবাকে দেখালাম সেদিকে। তিন জনেই গিয়ে দাঁড়ালাম ড্রেসিং টেবিলের সামনে। চোখে বোধহয় বাষ্প জমে এলো, মনে পড়ে গেলো শহীদ জননীর সাথে দেখা হওয়া সেই বিকেলটার কথা।

জানি, যে কোন মিউজিয়ামের কোনো জিনিসেই হাত দেওয়া নিষেধ, তাই খুব ইচ্ছা হলেও ফ্রেমে বাঁধানো আমার কবিতায় তখন হাত দেই নি। বরং বৈশালীকে বললাম, সামনে বসো একটা ছবি তুলি। ছবি তোলাও যে নিষেধ এখানে তা শুনেছিলাম, ওই মুহূর্তে মনে ছিলো না। কিন্তু হাতের মোবাইল তাক করতেই হাঁ হাঁ করে ছুটে এলেন ইয়াসমিন আপু। ছবি তোলা যাবে না।

অগত্যা বলেই ফেললাম, আপু, এই কবিতাটা আমার লেখা তো, প্লিজ শুধু এখানে একটা ছবি তুলি।

আপু খুব অবাক হলেন, ডেকে আনলেন মিউজিয়ামের আরো দুইজনকে, জয়া আপু আর বাবু ভাইকে। পরের ঘণ্টাখানেক ঘুরে দেখার ফাঁকে অনেক গল্প হলো সহৃদয় মানুষগুলোর সাথে, ছোটবেলার স্মৃতিটুকুও ওনারা শুনলেন। আর মিউজিয়ামের ক্যামেরায় আমাদের ছবিও তুলে দিলেন, এমনকি কবিতার ফ্রেমটা হাতেও দিলেন ছবি তোলার জন্য; পরে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মেইল করে।

নিজের কথা থাক, এবার বলি মিউজিয়ামে আর কি কি দেখলাম। অনেক, অনেক কিছু আছে এই মিউজিয়ামে। সাজানোটা চমৎকার, খুব গোছানো আর দৃষ্টি নন্দন। এই শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র জামী। সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক এবং কর্মী। স্বল্প পরিসরে দারুণ সমৃদ্ধ সংগ্রহ এই পারিবারিক জাদুঘরের।

এখানে দেখলাম শহীদ জননীর ব্যবহার করা বা গৃহস্থালীর অনেক সামগ্রী। তাঁর শোওয়ার খাট, পড়ালেখার টেবিল, দেরাজ, সোফাসেট, ব্যায়াম মেশিন, কর্নার টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, আয়রন করার টেবিল আরো কতো কি! সব এতো সুন্দর করে সাজানো, মনে হয় এখনি জাহানারা ইমাম এসে তাঁর লেখার চেয়ার টেবিলে বসে লিখতে শুরু করবেন।

তিনি যে একজন খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন তা তাঁর জিনিসপত্র দেখলেই বোঝা যায়। গ্রামোফোন বৈশালী এই প্রথম দেখলো। ওকে বুঝিয়ে দিলাম কিভাবে এখান থেকে গান বাজতো। গান শোনার একটি ক্যাসেট প্লেয়ারও আছে দেখলাম।

ফুলদানি, পট, ঘর সাজানোর আরো অনেক কিছু রয়েছে যা তিনি ব্যবহার করতেন। ঘরের মাঝে নানা পার্টিশন বসিয়ে সেগুলোকেও কাজে লাগানো হয়েছে এপিঠ ওপিঠ ভরে আলোকচিত্র, পত্রিকা কাটিং বা নানা উদ্ধৃতি বাক্য দিয়ে সাজিয়ে। দেখার জিনিস অজস্র।

কাঁচের পাল্লা দেওয়া একটা আলমারিতে পেলাম তাঁর ব্যবহৃত কিছু কাপড়-চোপড়। কিশোরী বয়সে বাবার কাছে উপহার পাওয়া প্রথম শাড়িটি দেখলাম। আরেকটি আলমারিতে আছে তাঁর রান্নাঘরের কিছু তৈজস পত্র। এদেশের মাটিতে যখন সহস্র শহীদের আত্মত্যাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একাত্তরের ঘাতক রাজাকার আলবদররা বক্রহাস্যে ঘুরে বেরিয়েছে, তখন শহীদ জননী সারা দেশে ঘুরে ঘুরে মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছেন একাত্তরে রাজাকারদের ঘৃণ্য এবং নৃশংস স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকা, হত্যা আর নারী নির্যাতনের কথা। একাত্তরের ঘাতকদের পৃষ্ঠপোষক সরকারের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা কিংবা মরণ ব্যাধি ক্যান্সার, কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারে নি। সেই সব গণ আন্দোলনের সময়ের কিছু ছবিও আছে। আছে নানা রকম পোস্টার বা সেই সময়ের নানা টুকরো কথা।

জাহানারা ইমাম সেই মা, ছেলে রুমী মুক্তিযুদ্ধে যাবার অনুমতি চাইলে যিনি বলেছিলেন, যা, দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানী। মুক্তিযোদ্ধা রুমী একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্যাতনেই শহীদ হয়েছেন। শহীদ রুমীর স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে আলাদা একটি কর্ণার আছে এখানে। অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলাম সেখানে, দেখলাম রুমীর শৈশব, কৈশোর, বড় হয়ে ওঠার সময়ের অজস্র আলোকচিত্র। আছে গেরিলার বেশে রুমীর ছবি, প্রোট্রেট, শিল্পীর কল্পনায় আঁকা রুমী। রুমীর সংগ্রহ করা নানা জিনিস, একাত্তরের দিনগুলি বইটি থেকে নানা উদ্ধৃতি, অথবা রুমী সম্পর্কে বলা বিভিন্ন জনের উক্তি বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে। রুমীকে লেখা তার বাবা মায়ের চিঠি, জন্মদিনের শুভেচ্ছাপত্র পড়ে দেখলাম।

প্রতিটি দেয়ালে বা পার্টিশানে রয়েছে অনেক ছবি। প্রোর্ট্রেট, আলোকচিত্র, তৈলচিত্র বা তাঁর ঘর সাজানোর দেয়াল চিত্র। শিল্পীর তুলিতে আঁকা শহীদ জননীর প্রোর্ট্রেট রয়েছে, বাবা মায়ের সাথে রুমীর হাস্যোজ্জ্বল মুখের একটি তৈলচিত্র মন খারাপ করে দেয়।

অজস্র আলোকচিত্রে শহীদ জননীর সারা জীবনের অসংখ্য ঘটনা পেয়ে গেলাম। তাঁর বিয়ের আগের কিশোরীকালের ছবি থেকে শুরু করে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তোলা অসংখ্য আলোকচিত্র দিয়ে দেওয়াল গুলো সাজানো। বা কোথায় বোর্ডে লাগানো। সুন্দর হাসিখুশী একটি পরিবারকে এসব ছবিতে খুঁজে পেলাম। শুধু দেয়ালে টানানোই নয়, শহীদ জননীর নিজের এবং তার পরিবারের সকলের আলোকচিত্র ভরা বেশ কয়েকটি এলবামও রয়েছে র‌্যাকে।

আর আছে অজস্র বই। এই পরিবারের সকলেই পড়ুয়া ছিলেন। শহীদ জননীর ব্যক্তিগত সংগ্রহের প্রচুর বই, শহীদ রুমীর সংগ্রহ করা বই সব মিলিয়ে বেশ কয়েকটি আলমারি বা বুকসেলফ সাজানো। আরেকটি বুকশেলফে জাহানারা ইমামের নিজের লেখা সকল বই রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণের এক অতুলনীয় দলিল-একাত্তরের দিনগুলি নামের বইটি ছাড়াও আরো বেশ কিছু গল্প উপন্যাস বা স্মৃতিকথা লিখেছেন তিনি। এখান থেকে বই কেনাও যায়। আমি কয়েকটি বই বেছে নিলাম কেনার জন্য। তার মধ্যে ছিলো এই মিউজিয়াম থেকেই প্রকাশিত শহীদ রুমী স্মারকগ্রন্থ। বৈশালী নিলো জাহানারা ইমামের অনুদিত ‘তেপান্তরের ছোট্ট শহর’।

বইমেলায় যেতে হবে, তাই আরো বেশিক্ষণ থাকার আগ্রহ সামলে একসময় বিদায় নিলাম। ও হ্যাঁ, ফেরার আগে, মিউজিয়ামের মন্তব্য খাতায় আমি তো লিখেইছি, বৈশালীও দেখলাম প্রায় একপাতা লিখে ফেললো। ফেরার গলি পথটায় যেতে যেতে বারবার ঘুরে তাকাতে হলো পিছনে। আবার আসবো, নিশ্চয়ই আবার আসবো কোনো একদিন- সান্ত্বনা দিলাম নিজেকেই।

দেখার মতো অনেক কিছু আছে। সব বললাম না। আপনারা যাবেন, দেখবেন। এই জাদুঘর এক ইতিহাসের ছোঁয়া মাখা, এক সংগ্রামী জননীর স্পর্শ মাখা মায়াময় জায়গা। গেলে ফিরতে ইচ্ছা হবে না সহজে। বৈশালীকে কেন আরো আগে নিয়ে যাই নি, আফসোস হচ্ছিলো সেদিন। আমাদের নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের এই প্রাঙ্গনে নিয়ে যাওয়া অবশ্যই উচিৎ। আমাদের কর্তব্য তাদেরকে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আর শহীদ রুমী সম্পর্কে জানানো, যাঁরা এখনো আমাদের অনুপ্রাণিত করেন, এখনো শেখান সবার আগে দেশ, সবার উপরে দেশপ্রেম!

টিকে