ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৬ ১৪৩১

প্রমাণ দিয়ে বিচার চাইলেন ছাত্রলীগ নেত্রী (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১০:১২ পিএম, ৪ মে ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১১:০৯ পিএম, ৪ মে ২০১৮ শুক্রবার

সরকারি বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিক।

সরকারি বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিক।

রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী শুভ্র মাহামুদ জ্যোতি। যুক্ত আছেন ছাত্র রাজনীতিতেও। দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সহ-সভাপতি। বিচার চাইছেন নিজ সংগঠন বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান অনিকের। কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিচার চেয়ে।

শুভ্র মাহামুদ জ্যোতি অভিযোগ করে বলেন, “গত বছরের ২৪ অক্টোবর আমার বাসায় ঢুকে আমাকে বেধড়ক মারধর করেন মুজিবুর রহমান অনিক। এসময় তার সাথে সাদেক প্রোধানিয়া, ফয়েক আহমেদ নিঝুসহ বেশ কয়েকজন সঙ্গীও ছিল। ঘটনার পরদিন দারুস সালাম থানায় মামলা দায়ের করি। (মামলা নং-৩৭/২০১/ তারিখঃ ২৫/১০/১৭)।”

মামলার প্রেক্ষিতে সংগঠন থেকে বহিষ্কারও করা হয় অনিককে।  কিন্তু প্রমাণ না থাকায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে অনিকের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘোরা জ্যোতি এবার নিজ অভিযোগের স্বপক্ষে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ইতোমধ্যে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় যে, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি অনিক ও তার একজন সঙ্গী জ্যোতি এবং জ্যোতির সাথে থাকা অন্য আরেক তরুণীকে বেধড়ক মারধর করছেন। বার বার অনুরোধ করেও, রেহাই পাচ্ছিলেন না এই দুই তরুণী।

এক পর্যায়ে, এক তরুণীকে খাট থেকে টেনে হিচড়ে মেঝেতে নামিয়ে পায়ের তালু এবং উরুতে লাঠি দিয়ে অগত্যা মারধর করা হয়।

ভিডিওটির পোস্টে জ্যোতি লেখেন, “এই সেই "মুজিবুর রহমান অনিক"-(বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি) আর তার সহযোগী "সাদেক প্রধানীয়া"- আমায় অত্যাচার করেছিল। কে কি বলবেন বলুন। আমি মিথ্যা বলিনি, আজ আমি প্রমাণ দিয়েছি, আমি এবার বিচার চাই, সোহাগ ভাই, জাকির ভাই পুরো ছাত্রলীগের কাছে আজ বিচার চাই আমি। আমার বাসায় এসে এভাবে মেরেছিল আমায়, আমি এর বিচার চাই! চিৎকার করে বলেছিলাম, কেউ বিশ্বাস করেন নি, আজ কার কি বলার আছে বলুন। আমি শুনতে চাই”।

মারধরের এই কাহিনী সম্পর্কে ইটিভি অনলাইনকে জ্যোতি বলেন, “মায়মুনা কামাল নামে একটি মেয়েকে আমার সাথে বাসায় থাকতে দেই। মেয়েটি (মায়মুনা) অনিকের সাবেক গার্লফ্রেন্ড। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ‘ধর্ষণ’ করেছে অনিক। মায়মুনাকে আমার বাসায় রাখাতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর এই অকথ্য নির্যাতন করেছে অনিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা”।

এর আগেও ২০১৫ সালে জ্যোতির ওপর অনিক হামলা করেছিল বলে দাবি তার। বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়। "তবে দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে আমাকে দিয়ে জোর করিয়ে আপোষ করানো হয় মামলায়”- বলেন জ্যোতি।

কোন এক অদৃশ্য শক্তির মদদে অনিক এমনটা করে আসছেন দাবি করে তিনি বলেন, “আট মাস যাবত আমার মামলা ঝুলে আছে। একটি অদৃশ্য লম্বা হাত তাঁকে পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে। এই লম্বা হাতের কারণে তার আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার হবে না বলেই এখন আমার মনে হচ্ছে। আমি চাই সংগঠন থেকে তার বিচার হোক। সংগঠন থেকে তাকে সরিয়ে দিলে আইনও তার বিচার করতে পারবে। সংগঠন যেন তার বিচার করতে পারে সেজন্য এবার আমি প্রমাণও দিলাম”।

অনিকের সাংগঠিক বিচারের দাবিতে জ্যোতি বলেন, “অনিকের মত দুই চার জন সংগঠনে না থাকলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোন ক্ষতি হবে না। ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটিতে যেন এমন মানুষের জায়গা না হয়”।

সংগঠন থেকে পদক্ষেপ না হলে গণভবনের সামনে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে নিজের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

বাংলা কলেজে অবৈধ ভর্তি বাণিজ্য, আশেপাশে দোকান থেকে চাঁদাবাজি এবং নারী কেলেংকারিসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে অনিক জড়িত আছে বলেও অভিযোগ করেন জ্যোতি।

জ্যোতির প্রকাশিত ভিডিও এবং অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান অনিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় ইটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে। তার দুইটি নম্বরে বারং বার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি। পরে নিজেই ফোন দিয়ে ‘ব্যস্ত আছি পরে কথা হবে’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন অনিক। এরপরেও কয়েক বার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে সংগঠনের অবস্থান জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

//এস এইচ এস//টিকে