ওআইসি সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু
প্রকাশিত : ১১:০৬ এএম, ৫ মে ২০১৮ শনিবার
ঢাকায় ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দেবে বাংলাদেশ৷ সম্মেলনের প্রথমদিনই রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপর একটি আলোচনা রয়েছে৷ আজ ঢাকায় শুরু হচ্ছে ওআইসি সম্মেলন। এই সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বিশেষভাবে স্থান পাবে৷ সম্মেলনকালে একটি বিশেষ অধিবেশনে এ বিষয়ে আলোচনা হবে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রেসপন্স, বিশেষ করে ওআইসিভুক্ত ইসলামি দেশগুলোর রেসপন্স, কীভাবে আরও জোরদার করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হবে৷ সেখানে ক্যানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বক্তব্য দেবেন৷
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি আমাদের সমর্থন দিচ্ছে৷ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশও আমাদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে৷
সম্মেলনে প্যালেস্টাইন ইস্যু, মুসলিম বিশ্বের সংঘাত ও চ্যালেঞ্জ, বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মানবিক বিপর্যয়, ইসলামোফোবিয়া, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিষয়সহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতার ক্ষেত্র খুঁজে বের করা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকছে৷
ওআইসি-তে সংস্কার এবং সংস্থার নিজস্ব কনফ্লিক্ট ম্যানাজমেন্ট সেন্টার খোলার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে৷ মুসলিম বিশ্বের মধ্যে একাধিক দেশ আছে, যাদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘাত আছে এবং এ ধরনের একটি কনফ্লিক্ট অ্যান্ড মেডিয়েশন সেন্টার এই সংঘাতকে প্রশমিত করতে সাহায্য করবে৷ ওআইসি-র সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বড় আকারে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে৷ পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে সবাই এটা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে৷
২০১৭ সালের ৪ আগস্ট কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমাদ আল-অথাইমিন৷ তিনি সেখানে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জেলা প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসহ বিভিন্ন এনজিও-র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেঠকও করেন৷ কিন্তু তারপর কোনো শক্ত অফিসিয়াল বক্তব্য শোনা যায়নি৷
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গত তিনটি সম্মেলনে চেষ্টা করেও রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে সামনে আনা যায়নি৷ এমনকি কায়রো সম্মেলনেও চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি৷ ঘেষণায় একটি প্যারা অন্তর্ভূক্ত করাও ছিল আনেক কষ্টের৷ তবে এবার সব দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে রেজোলিউশন গ্রহণে একমত হয়েছে৷
মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল শহীদুল হক (অব.) বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি-র ভূমিকা অতীতে আমাদের নিরাশ করেছে৷ সর্ববেশ (২৫ আগস্ট থেকে) যে সংকট সেখানেও আমরা ওআইসি-র পক্ষ থেকে কোনো শক্ত বক্তব্য দিতে দেখিনি৷ বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন দিয়ে স্ট্রং কোনো অবস্থান ওআইসি-র আমরা দেখিনি৷ এর কারণ হলো, এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেক ডিভিশন আছে৷ তাদের নিজস্ব স্বার্থের বিষয় আছে৷
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি দক্ষিণ এশিয়ার কথাই ধরি, আমরা আশা করি যে রোহিঙ্গারা যেহেতু মুসলমান, পাকিস্তান হয়ত নাড়াচাড়া দেবে৷ কিন্তু তা হয়নি৷ এর কারণ হলো পাকিস্তান জেএফ-১৭ নামে একটি বিমান তৈরি করে৷ নিজেরা ব্যবহার করে৷ কিন্তু দেশের বাইরে মিয়ানমার হলো এই বিমানের প্রথম ক্রেতা৷ মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে খুবই কনসার্ন্ড৷ কক্সবাজারে ওদের হাতপাতাল আছে৷ কিন্তু ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাই এ ব্যাপারে নিরবই বলা যায়৷ ওদের তো কোনো স্ট্রং বিবৃতিও দেখিনি৷ এর কারণ, ইন্দোনেশিয়ায় আসিয়ান-এর সদরদপ্তর৷ আসিয়ান দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে দূরে থাকে৷ ইন্দোনেশিয়া সেই কারণে এবং তাদের প্রভাবে ব্রুনাইও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তেমন সক্রিয় নয়৷ সৌদি আরবের ইয়াঙ্গনে যে মিশন আছে, তাদের কাজই হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নিউট্রালাইজ সিটিজেন করার চেষ্টা৷ সত্তরের দশকে মোট পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে সৌদি আরব নেয়৷ এর মধ্যে আড়াই লাখ বাংলাদেশি পাসপোর্টে এবং আড়াই লাখ পাকিস্তানি পাসপোর্টে৷ কিন্তু এটা বিস্ময়কর যে এবারে বা তার আগের ক্রাইসিসে সৌদি আরকের ভূমিকা ছিল আশাহত৷ তুরস্ক এবং সৌদি আরবের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে৷ এবার তুরস্ক অ্যাকটিভ বলেই সৌদি আরব নিস্ক্রিয়৷
তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ ওআইসি-র ভূমিকাকে ইকিবাচকভাবেই দেখেন৷ তিনি মনে করেন, আগে রোহিঙ্গা সমস্যা এত প্রকট ছিল না৷ তাই ওআইসি-র ভূমিকাও তত প্রবল ছিল না৷ তখন জাতিসংঘও সক্রিয় ছিল না৷ এখন পরিস্থিতির কারণে সবাই সক্রিয় হয়েছে, ওআইসি-ও সক্রিয় হয়েছে৷
তিনি বলেন, এবার ওআইসি-র পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে প্রস্তাব আনা হয়েছে৷ যার ওপর ভোটাভুটি হয়েছে৷ এবার ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে প্রস্তাব পাস হচ্ছে৷ বিষয়টির ব্যাপকতার কারণে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় আজ৷ অনেক দেশই এখন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে৷ আগে তারাও সক্রিয় ছিল না৷ তবে এবার সবাই সক্রিয় হওয়ায় কাজ হচ্ছে বলে আমার মনে হয়৷ কারণ মিয়ানমার চাপের মুখে পড়েছে৷
তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে।
এসএইচ/