ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারের উপকারিতা

মো. মাকসুদ হোসেন

প্রকাশিত : ০৬:০৫ পিএম, ৬ মে ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৯:৫৯ এএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার

প্রিয় পাঠক, আজ আমরা মনোযোগ দেবো আমাদের ইফতারের দিকে। সারদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময়টি আমাদের জন্যে সবদিক থেকে অত্যন্ত মূল্যবান একটি সময়। নবীজী হয়রত মুহাম্মদ (স)-এর আশ্বাস অনুসারে স্রষ্টা এ সময় যেন তাঁর রোজাদার বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন এবং তার একটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে তিনি কবুল করে নেন। সারাদিন রোজা রেখে ইফতার করা স্বাভাবিকভাবেই সবার কাছে অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয় যাকে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি উপভোগ্য করে তুলতে। আর তা উপভোগ করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা যে নিজের শরীর বা স্বাস্থ্যের কী করছি তা অনেক সময় নিজেরাও তা অনুভব করতে পারি না।

কয়েকদিন আগে কথা হচ্ছিলো দেশের প্রখ্যাত একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির একজন ফার্মাসিস্ট জনাব শামিম রেজার সাথে। কথাপ্রসঙ্গে তিনি জানালেন রোজার মাসে কোম্পানির অন্যান্য ঔষধের চেয়ে এন্টাসিড, ওমিপ্রাজল এবং রেনিটিডিন গ্রুপের অর্থাৎ পেটের পীড়া যেমন গ্যাসট্রিক এবং এসিডিটির ঔষধের চাহিদা বেড়ে যায় বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ।  তিনি একটু রসিকতা করেই বললেন আনুমানিক খসরা একটি হিসাবে দেখা যায় বাংলাদেশের মানুষ এই সময়ে ইফতারে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে- এ ধরনের ঔষধের পেছনে ব্যয়টা তার চেয়ে খুব একটা কম নয়। তিনি জানালেন রাতে ও দিনে মিলিয়ে আমরা এখন এ ধরণের ঔষধই বেশী তৈরি করছি।

কী বিশ্বাস হচ্ছে না? ঠিক আছে, রোজার মাসে আপনি শহরের শুধু নয় গ্রামেরও একটা ঔষধের দোকানে যদি সন্ধ্যার পরে মাত্র এক ঘন্টাও বসেন, দেখবেন ঔষধ নিতে যারা আসছে- এসেই দোকানীকে বলে, ‘ ভাই দুইডা গ্যাসের বড়ি দেন ।‘ অর্থাৎ জাতীয়ভাবেই আমাদের পেটের সমস্যা বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশী থাকে রোজার মাসে। তো রোজার মাস এলেই আমাদের গ্যাসের সমস্যা এতো বেড়ে যায় কেন?

কারণ একটাই স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন ইফতার গ্রহণ। ভাজা পোড়া ও তেল সমৃদ্ধ ইফতার পেটে যখন যাচ্ছে কী অবস্থা যে হয় পাকস্থলির, ধরা যাক আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি সাথে সাথেই কী খুব ভারি কোনো কাজ করতে পারি? না, পারি না। একটু সময় লাগে শরীরে পুরো শক্তিটা ধারণ করেতে। এখন সারাদিন না খাওয়া অর্থাৎ কাজ না করা একটা পাকস্থলিতে তেল যা ডাইজেস্ট করা খুবই কষ্টকর। আর এই জটিল একটি প্রক্রিয়া সেই তেল সমৃদ্ধ ভাজা পোড়া যখন একের পর এক পেটে দিচ্ছি স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ এতো ভারী কাজ পেয়ে সে-ও দিশেহারা বোধ করে। আর এই ইফতারেই তো শেষ নয়, এ তো মোটে শুরু। সারাদিন খাই নি বলে রাতের খাবারটাও হওয়া চাই জাঁকজমক। তাই এতো কম সময়ের ব্যবধানে এতো খাবার পাকস্থলি এক পর্যায়ে আর সহ্য করতে পারে না। একটা সময় সে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে যায়। ফলে  পেট ফাঁপা, চরম ক্লান্তি এবং ওমিপ্রাজল বা এন্টাসিডের দ্বারস্থ হই।  

এখন এমনটাই কী হবার কথা ছিল? নবীজী (স) বা তার সাহাবীরা কী এভাবেই ইফতারের নামে ভূরিভোজ বা নিজেকে টর্চার করতেন? আমরা ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখি নবীজী (স) এর প্র্যাকটিস ছিলো শুধু খেজুর আর পানি খেয়ে রোজা ভঙ্গ করা এবং অতঃপর মাগরিবের নামাজ আদায় করা। মাগরিবের নামাজ পড়ে তারা একবারে রাতের খাবার খেয়ে নিতেন।

ইফতার করার এই প্র্যাকটিসটা যে কতোটা সায়েন্টিফিক- আমরা যদি দেখি যে এর বেনিফিট কী? রোজা ভাঙতে প্রথমে খেজুর এবং পানি দেহে সুক্রোজ তৈরী করছে। ফলে মুহূর্তে তৃষ্ণা এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে। এরপর নামাজে যাচ্ছি। পাকস্থলি তখন সারাদিন বসে থাকার পর একটু কাজ পেয়ে ওয়ার্মআপ হয়ে নিল। তখন সে আরো বড় ও কঠিন কাজের উপোযোগী হবার জন্যে পর্যাপ্ত সময় পেল। এবার আপনি রাতের খাবার গ্রহণ করুন। খাবারে পর্যাপ্ত মাছ মাংশ অর্থাৎ আমিষ থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। ইফতারের পর প্রত্যেকদিন রাতের খাবারে ডিম দুধ কলা অর্থাৎ পুষ্টিকর খাবার রাখতে পারি। শরীর ভালো থাকবে মনও চাঙ্গা থাকবে।

তাই ইফতারে ভাজা পোড়া না খেয়ে খেজুর ও পানি খেয়ে রোজা ভঙ্গ করুন এবং তারপর মাগরিবের নামাজ আদায় করে রাতের খাবার খেয়ে নিন। সবোর্পরি রোজার আত্মিক আধ্যাত্মিক প্রাপ্তিও নষ্ট হয়ে যায় এই ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে। কারণ নবীজী (স) বলেছেন, ‘অতিরিক্ত পানাহার খেকে বিরত থাকো। তা না হলে তোমার অন্তরতম সত্তার মৃত্যু ঘটবে।‘ - মুসলিম। অর্থাৎ মনোযোগটা যদি শুধু এরপরে আর কী খাবো এ চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে তা হলে আমরা হয়তো আমাদের হৃদয়ের সুকোমল অনুভূতিগুলোকেই হারিয়ে ফেলতে পারি। তাই ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত খাবার গ্রহণ করুন। পুরো রমজানে আপনি অত্যন্ত ঝরঝরে ও ফুরফুরে থাকবেন। পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে হেদায়াতের সরল পথ প্রদর্শন করুন। আমিন।

লেখক: বি ফার্ম, এম ফার্ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এমএইচ/টিকে