ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

কোটা ২০ শতাংশ থাকাটা ন্যায়সঙ্গত: আমানুল্লাহ ফেরদৌস

প্রকাশিত : ০৬:৪৭ পিএম, ৭ মে ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৭:৪৪ পিএম, ৮ মে ২০১৮ মঙ্গলবার

অধ্যাপক ড. আমানুল্লাহ ফেরদৌস

অধ্যাপক ড. আমানুল্লাহ ফেরদৌস

বিসিএসসহ সরকারি সব ধরণের চাকরিতে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের একপর্যায়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন। যার কারণে ছাত্ররা আন্দোলন স্থগিত করে প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হলেও কোটা বাতিলের ব্যাপারে কোন প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ফলে ছাত্রদের মাঝে কিছুটা হতাশা দেখা দিয়েছে। আশা-নিরাশার দোলাচলে কাটছে চাকরি প্রত্যাশীদের সময়।

এ পরিস্থিতিতে কোটা পদ্ধতির সামগ্রিক বিষয়, প্রশ্নফাঁস, পরীক্ষা পদ্ধতি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা, কোচিং বাণিজ্য, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান ও ছাত্রদের নীতি-নৈতিকতার নানাবিধ বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আমানুল্লাহ ফেরদৌসের। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ২০ শতাংশ কোটা রেখে ৮০ শতাংশ সাধারণকে দিয়ে দিলে আমার মনে হয়, সামাজিক সাম্য, ন্যায় বিচার ও সংবিধানের চার মূল নীতির সঙ্গে সঙ্গতি থাকবে। এটা করলে একজন রিক্সাওয়ালার ছেলে, একজন ধনীর ছেলেও ধনীর ছেলের মতো সমান সুযোগ সুযোগ পাবেন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোটা পদ্ধতি সংস্কারে জোর দাবি উঠেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন। আসলে কোটার সংস্কারটা কিভাবে হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

আমানুল্লাহ ফেরদৌস: পৃথিবীর যেকোনো দেশে একটা নিয়ম হলে সেটা সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক ভেবেচিন্তে চালু করেছিলেন। যেখানে পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্ছিতদের জন্য কোটার সুযোগ রাখা হয়েছিল। একজন মুক্তিযোদ্ধা, তার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী এই সুযোগ পায়। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি, যার চার ছেলে ও তিন মেয়ে। ওই সাত জনের ছেলে-মেয়ে ২৪জন; যাদের সবাই কোটার সুবিধা পেয়েছে। এখন একজন মুক্তিযোদ্ধার একটি পরিবার থেকে যদি নাতি-নাতনী ও ছেলে-মেয়েসহ ৩০জন কোটার সুযোগ পায়, তবে সাধারনের জন্য কি থাকবে?

ভারতে দেখা যায় একটি পরিবার থেকে যদি একবার কোটা সুবিধা পায়, দ্বিতীয়বার সে পরিবার আর সেই সুযোগ পাবে না। আমাদের দেশে সেই পদ্ধতি নাই। ভারতে কোটা সুবিধা দেওয়া হয় দলিত শ্রেণীকে। প্রদেশভিত্তিক কোটা সুবিধাও আছে। নারীদেরকে কোটা সুবিধা দেওয়া হয়। তারপরও সেখানে ৭৬ শতাংশ সাধারণের জন্য থাকে। ২৪ শতাংশ কোটার দখলে।

এমনকি শ্রীলঙ্কাতেও কোটা সংস্কার করে তামিলদের জন্য রাখা হয়েছে। ভিয়েতনাম, কম্পোডিয়াতেও কোটা পদ্ধতি আছে। সম্প্রতি তারাও তাদের কোটা পদ্ধতির সংস্কার করেছে। তাই স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসে, আমরা যদি কোটা পদ্ধতিকে বাতিল নয়, সংস্কার করতে পারি, তবেই একটা যুযোগযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।সংস্কারের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ৩ শতাংশ, নারী কোটা ২ শতাংশ, আদিবাসী কোটা ৩ শতাংশ, আর ২ শতাংশ যদি রাখা হয় প্রতিবন্ধী কোটা, তবে মোট কোটা দাঁড়ায় ২০ শতাংশ। অর্থাৎ ২০ শতাংশ কোটা রেখে ৮০ শতাংশ সাধারণকে দিলে আমার মনে হয়, সামাজিক সাম্য, ন্যায়বিচার ও সংবিধানের চার মূল নীতির সঙ্গে সঙ্গতি থাকবে। এটা করলে একজন রিক্সাওয়ালার ছেলে, একজন কেরানীর ছেলেও ধনীর ছেলের মতো সুযোগ পাবেন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রধানমন্ত্রী কোটা বাদ দেওয়ার কথা বলার পর বেশ কিছু দিন পেরিয়ে গেল। এখন প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টিকে কিভাবে দেখবেন?

আমানুল্লাহ ফেরদৌস: সংসদে দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বলছেন যে, কোটা বাদ, তখনি কোটা বাতিল হয়ে গেছে।সংসদে দাঁড়িয়ে কোনো সরকার দলীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে কোনো একটা কথা বলেন, বা কোন একটা সিদ্ধান্ত দেন, সেটা সংসদীয় প্রক্রিয়ায় কার্যপ্রণালীর অংশ হয়ে যায়। সেটা রেকর্ডও থাকে আবার লিখিতও থাকে। জাতির সামনে তিনি কমিটমেন্টও করছেন যে, কোটা বাতিল করে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যখনই বলছেন তখনই ওটা হয়ে গেছে। তবে প্রজ্ঞাপন নিয়ে এখন যে বিলম্ব করছে আমার মনে হয় সচিবরা এ বিষয়ে একটু হোমওয়ার্ক করছেন। সচিবদের হোমওয়ার্কে একটু সময় লাগে, এটা অসম্ভব কিছু না। তবে সচিব বা আমলারা অন্য সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যেমন সকালের সিদ্ধান্তে বিকেলে প্রজ্ঞাপন দেন কোটার ক্ষেত্রে তা করছেন না। এতো সময় নেওয়া তাদের উচিত হচ্ছে না। যেহেতু এ বিষয়ে আন্দোলন হয়েছিল। ছেলে-মেয়েরাসহ আমরা আন্দোলনে শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আজকে ৭ মে একটা প্রজ্ঞাপনের কথা ছিল, কিন্তু হলো না। তবে এ ব্যাপারে অনেকে যে সন্ধেহ করছেন সেটা ঠিক নয়। আমি মনে করি, বিশ্বাস করি, উনি (প্রধানমন্ত্রী) যা বলেন তা করেন। উনার কথা ফিরিয়ে নেন না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমলারা যদি এভাবে আরও সময়ক্ষেপন করতে থাকেন, তবে এর ভবিষ্যৎটা আসলে কি?

আমানুল্লাহ ফেরদৌস: প্রজ্ঞাপন বিলম্ব হলে, আমলাদের সময় ক্ষেপন বেশি হলে ছাত্ররা আবার রাস্তায় নামবে বলে মনে হয়। কারণ এরা কোনো শিক্ষকের কথা শুনে না। এদের কোনো অ্যাডভাইজারি বডি নাই। এদের কোটা আন্দোলনে আমরা যারা সমর্থন দিয়েছিলাম তাদের ওপর তারাই এখন বিরক্ত যে, শিক্ষরা তাদের পর্যাপ্ত সাপোর্ট দেয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার শিক্ষকের সাপোর্ট তারা পায়নি। যখন আন্দোলন সফল হতে গিয়েছিল তখন শিক্ষক সমিতি তাদের সঙ্গে সমর্থন ব্যক্ত করে। শিক্ষকদের সেই যে অবহেলা, সেটার কারণে তারা কোনো শিক্ষকের কথা শুনবে বলে মনে হয় না। তাই এটার প্রজ্ঞাপন দেরি হলে তারা আবার আন্দোলনে নামবে বলে আমার ধারণা।

/ এআর /