ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির

প্রকাশিত : ১০:১২ এএম, ১১ জুন ২০১৬ শনিবার | আপডেট: ০১:৩৯ পিএম, ১১ জুন ২০১৬ শনিবার

বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী। তার জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত লোকগাঁথা আজও মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। সে সময়ের সাক্ষী হয়ে আজও কিশোরগঞ্জের পাতুইয়ার গ্রামে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির। ইতিহাসপ্রিয় মানুষ ছুটে আসেন মন্দিরটি দেখতে। সেখানেই ফুটে ওঠে চন্দ্রাবতীর বিরহজীবনের গল্প, তার কবি হয়ে ওঠার কাহিনি। প্রতিভাদীপ্ত কবি চন্দ্রাবতী। ১৫৫০ সালে কিশোরগঞ্জের কাচারি গ্রামে জন্ম। তাঁর পিতামহের নাম যাদবানন্দ, বাবা পন্ডিত দ্বিজ বংশীদাস ও মাতা সুলোচনা। সাহিত্যের প্রতি চন্দ্রাবতীর অনুরাগ ছিলে কৈশোর থেকেই। ‘দস্যু কেনারাম’ ও ‘মলুয়া’ রচনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার অসমাপ্ত রচনা ‘রামায়ন । বাবা দ্বিজবংশী দাশ ‘মনসা মঙ্গল’ লেখার সময় চন্দ্রাবতীর সহযোগিতা নিয়েছিলেন। এ দুটি পালাকাব্যই ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’য় স্থান পেয়েছে। একসময় চন্দ্রাবতীর সাথে প্রণয় গড়ে উঠে খেলার সাথী জয়ানন্দের। চন্দ্রাবতীর বাবা জানার পর সানন্দে তাদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করেন। আর তখনই ঘটে চন্দ্রাবতীর জীবনের সবচেয়ে নির্মম ঘটনা। জানা যায় জয়ানন্দ এক মুসলিম নারীর প্রেমে পড়েন। ধর্মান্তরিত হয়ে তাকে বিয়েও করেন। একথা শুনে অভিমানী কবি চন্দ্রাবতী স্থির করেন, সংসারের সব মায়া ছেড়ে শিবপূজা করে বাকী জীবন কাটিয়ে দেবেন। বাবাকে এই ইচ্ছার কথা জানালে তিনি ফুলেশ্বরী নদীর তীরে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ওদিকে আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীর সঙ্গে দেখা করতে এলে অভিমানী চন্দ্রা মন্দিরের দরজা না খুললে জয়ানন্দ আত্মাহুতি দেন ফুলেশ্বরীর জলে। জয়ানন্দের প্রাণহীন দেহ ভাসতে দেখে অনুশোচনায় চন্দ্রাও প্রাণ বিসর্জন দেন। মন্দিরটি দেখতে এখনও ভীড় করেন দর্শনার্থীরা। কালের বিবর্তনে এখন আর ফুলেশ্বরী নদীর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু শিবমন্দির আজও চন্দ্রাবতী-জয়ানন্দের করুন প্রেম কাহিনীর সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ভগ্নপ্রায় মন্দিরটি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৭ সাল থেকে সংরক্ষণ করছে।