উচ্চ কর হারে ব্যাহত প্রবৃদ্ধি
প্রকাশিত : ১১:১০ পিএম, ৮ মে ২০১৮ মঙ্গলবার
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনভিত্তিক যেকোন সেবার জন্য গ্রাহককে প্রতি ১০০ টাকায় কর দিতে হয় প্রায় ২২ টাকা। আবার মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতি ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে গড়ে ৪৭ টাকা কর হিসেবে সরকারকে দিতে হয়। এশিয়ার প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের করহার অনেক বেশি। উচ্চ করহারের কারণে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণে তা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের করহার নিয়ে এমন মূল্যায়ন উঠে এসেছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএম অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ)’ এক গবেষণা প্রতিবেদনে। জিএসএমএ’র পক্ষে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন খাতের করহার সংস্কার শীর্ষক এ গবেষণাটি করেছে কর বিষয়ক আন্তর্জাতিক পরার্শক প্রতিষ্ঠান আর্নেষ্ট অ্যান্ড ইয়াং (ইওয়াই)।
ইওয়াইয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রাপ্তির বিষয়টি মাথায় রেখেই একটি দেশের করনীতি নির্ধারণ করা হয। কিন্তু বাংলাদেশে করনীতিতে স্বল্প সময়ের রাজস্ব প্রাপ্তিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমন করনীতি স্বল্প আয়ের মানুষের মোবাইল ফোনসেবা প্রাপ্তিতে বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র লোকের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো খরচ। এ দেশে সবচেয়ে কম আয় করা ২০ শতাংশ লোকের জন্য ১ গিগাবাইট ইন্টারনেট ডেটা কেনার ব্যয় তাদের মাসিক আয়ের ১১ শতাংশের সমান। তাই মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাওয়া এসব মানুষের পক্ষে ইন্টারনেট ব্যবহার করা কঠিন। ইন্টারনেটের সেবার ওপর উচ্চ করও এ ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। ১০০ টাকার ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারে বাংলাদেশে এখন প্রায় ২২ টাকা কর হিসেবে দিতে হয়।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোট আয়ের ৪৭ মতাশ কর হিসেবে দিতে হয়। ভারত ও পাকিস্তানে এই করহার ৩৫ শতাংশ, ভুটান ও নেপালে ৩০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৮ শতাংশ।বাংলাদেশে এ ধরনের উচ্চ করহারের কারণে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে অপারেটররা বিনিয়োগ বাড়াতে পারছেন না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর বলেন, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে সরকার একদিকে টেলিযোগাযোগ খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে, অন্যদিকে রাজস্ব বিভাগ মুঠোফোন সেবার ওপর ইচ্ছে মতো করহার বাড়াচ্ছে। এমন সাংঘর্ষিক করনীতি অভ্যাহত থাকলে দেশে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারিত হবে না। এ খাতের টেকসই প্রবৃ্দ্ধি ধরে রাখতে করহার পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
আরকে//টিকে