ঢাকা, সোমবার   ১৩ জানুয়ারি ২০২৫,   পৌষ ৩০ ১৪৩১

ইরানের পারমাণবিক চুক্তিতে যা আছে

প্রকাশিত : ১০:২৫ এএম, ৯ মে ২০১৮ বুধবার

পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে ইরান এমন অভিযোগে দেশটির ওপর পশ্চিমা শক্তি অবরোধ আরোপ করতে থাকে সেই ৮০ দশকের শুরু থেকেই। দেশটিতে আয়তুল্লাহ আল খোমেনির নেতৃত্বে বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার পর থেকেই দেশটির ওপর ক্রমাগত অবরোধ আরোপ করতে থাকে পশ্চিমা শক্তি। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

তবে ২০১৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রচেষ্টায় ইরান বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে তার পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আসতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়া পরাশক্তিগুলি ছিল এই চুক্তির অংশীদার। তবে গোপনে ইরান চুক্তি লঙ্ঘন করে পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে এমন অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

দেশটি তার পরমাণু কর্মসূচির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলে আসলেও পশ্চিমা বিশ্বগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ইউরেনিয়াম ও প্লোটোনিয়াম সমৃদ্ধ করে আসছিল। তবে ২০১৫ সালের চুক্তির পর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে ইরান। ওই চুক্তির পর থেকে দেশটি তার ইউরেনিয়ামের মজুদ ৮০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরান সংবেদনশীল পরমাণু কর্মকাণ্ড সীমিত করতে রাজি হয় এবং দেশটির বিরুদ্ধে আনা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নে‌ওয়ার শর্তে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পরমাণু কর্মকাণ্ড পরিদর্শনে অনুমতি দেয়।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী-জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ`র পরিদর্শকরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন- সে ব্যাপারে সম্মতি দেয় তেহরান। সেসময় বারাক ওবামা প্রশাসন আত্মবিশ্বাসী ছিল যে এর অধীনে ইরান কোনো ধরনের গোপন পারমাণবিক কর্মকাণ্ড চালাবে না। ইরানও তা নিশ্চিত করে।

নানতাজ এবং ফোর্ডো- ইরানের এই দুটি জায়গায় গড়ে ওঠা পারামণবিক কেন্দ্রে জড়ো করা হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়ামের বিশেষ আইসোটোপ ইউ-২৩৫, যা অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।

১৫ বছর পর্যন্ত পরমাণু জ্বালানি রাখার পরিমাণ, সেন্ট্রি-ফিউজসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সীমারেখা টেনে দেওয়া হয়। শর্ত থাকে ইরান সেন্ট্রি-ফিউজ দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করবে।

বর্তমানে ইরানের কাছে যে ইউরেনিয়াম রয়েছে- তা থেকে ৯৮ শতাংশ কমিয়ে ৩০০ কেজিতে নামিয়ে আনতে হবে। ফোর্ডো কেন্দ্রের ভূ-গর্ভস্থ অংশকে বানাতে হবে পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র। সেখানে কেবলমাত্র চিকিৎসা, কৃষি ও বিজ্ঞান গবেষণায় ব্যবহৃত রেডিও আইসোটোপ তৈরি করা যাবে।

আর্ক শহরের কাছে ইরানে একটি পারমাণবিক একটি চুল্লি ছিল। যেখান থেকে প্লুটোনিয়াম পাওয়া যায় যা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। বিশ্ব পরাশক্তিগুলো বেশকিছু দিন ধরেই ইরানের এই কর্মসূচির বিরোধিতা করে আসছিল। চুক্তি অনুযায়ী ইরান সম্মত হয় যে তারা অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম প্লুটোনিয়াম উৎপাদন বন্ধ রাখবে।

ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছিল- তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হিসেব অনুযায়ী ৮-১০টি পরমাণু বোমা তৈরি করা সম্ভব। আর সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে অর্থাৎ চাইলেই ২-৩ মাসের মধ্যেই বোমা তৈরি সম্ভব বলে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল। এই সময়সীমাকে বলা হতো `ব্রেক-আউট টাইম`।

চুক্তির অধীনে পরমাণু বোমা তৈরির সহায়ক গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলো সরিয়ে ফেলা হয় যাতে `ব্রেক-আউট টাইম` হয় এক বছরেরও বেশি। আর ইরানের এসব শর্ত মেনে নেওয়ার বিনিময়ে দেশটির বিরুদ্ধে আরোপ করা বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয় । দেশটি আবারো ফিরে পায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেল বিক্রি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সুযোগ।

শর্ত অনুযায়ী, ২০৩১ সালের মধ্যে ইরান যদি চুক্তির কোনো শর্ত লঙ্ঘন করে তাহলে একটি যৌথ কমিশন গঠিত হবে। কমিশন যদি সমাধান করতে ব্যর্থ হয় তাহলে বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উঠবে।

সূত্র: বিবিসি
এমজে/