ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিবিসির বিশ্লেষণ

যে তিন কারণে ইরান-চুক্তি বাতিল

প্রকাশিত : ১১:৩৩ এএম, ৯ মে ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:৩৭ এএম, ৯ মে ২০১৮ বুধবার

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কখনো সরগরম দেখা যায়নি। এ ছাড়া ভোটের রাজনীতিতেও ইরান ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাহলে হঠাৎ করে কেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন, এ নিয়ে বিশ্লেষক মহলে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফ্রান্স ও ব্রিটেনসহ সব পশ্চিমা শক্তি-ই চুক্তিটি বজায় রাখতে ট্রাম্পকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। এমনকি ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যসহ রিপাবলিকান নেতারাও ট্রাম্পকে চুক্তি বাতিল না করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সব বিরোধীতা সত্ত্বেও ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে গেলেন।

চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, ‘একটি আদর্শ চুক্তি করতেই আমরা এটা বাতিল করছি। ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া-উত্তর কোরিয়ার মতো ইরানের সঙ্গে নতুন করে সমঝোতায় পৌঁছে নিজেকে প্রমাণ করতে চান বলেও মনে করেন অনেকে।

 ওবামার অর্জন ধূলিসাৎ টার্গেট:

চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন ওবামা প্রশাসনের সবকিছুই বাতিল করতে চান ট্রাম্প। ওবামা প্রশাসনের কোনো কিছুই সহ্য করতে পারেন না ট্রাম্প। এর আগে ওবামা প্রশাসনের নেওয়া স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প, অভিবাসী তরুণদের নিয়ে প্রকল্পসহ ও মেক্সিকো সীমান্তে শিথীলিকরণ নীতি সবই বাতিল করে দিয়েছেন ট্রাম্প।

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প ক্ষমতার দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যায়। এমনিক তিনি দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিতে চান বলেও মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। এরই অংশ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় ট্রাম্প।

গত জুনে বিশ্ব জলবায়ু চুক্তি থেকে (প্যারিস চুক্তি) নিজেদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কেবল প্যারিস চুক্তি-ই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেটও কমিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প।

এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার পরই মুসলিম দেশগুলোর উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প। ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হন ওবামা। এরই অংশ হিসেবে তিনি ইরাক যুদ্ধকে ভুল ছিল বলেও রিপাবলিকানদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিলেন।

নেতানিয়াহুর সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক:

প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে নির্বাচনী যে ইশতেহার তিনি প্রকাশ করেছিলেন, সেখানে তেহরান সম্পর্কে কোনো শব্দও ছিল না। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এরপরই ট্রাম্প সেই চুক্তির বিষয়ে মুখ খোলেন।

২০১৫ সালে সাত জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চুক্তিটি হওয়াকালে ইসরায়েল এর চরম বিরোধীতা করেছিল। তখন দেশটি লবি নিয়োগ করেও ওবামা প্রশাসনের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। তবে তাই বলে আশা ছাড়েনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।

এদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই আরব ইসরায়েলের মধ্যে সমঝোতা করতে ট্রাম্প উঠেপড়ে লাগে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের জনগণ ও ফিলিস্তিনের জনগণের মধ্যে তিনি কখনো পার্থক্য করবেন না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই দেশটির দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়ে ফিলিস্তিনের বুকে প্রথম পেরেক মারেন ট্রাম্প।

কেবল ফিলিস্তিন ইস্যু-ই নয়, মধ্যপ্রাচ্যসহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর ব্যাপারেও ট্রাম্পকে প্রভাবিত করছেন নেতানিয়াহু। এরই জেরে তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প প্রশাসনে নতুন মুখ:

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়। অনেক জনপ্রিয় সিনেটর থেকে শুরু করে কূটনৈতিক পাড়ার অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেন। আবার অনেককেই ট্রাম্প সরিয়ে দিয়েছেন। তেহরান চুক্তিসহ ট্রাম্পের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধীতাকারী হিসেবে পরিচিতি দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাকম্যাটিস ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস তেহরান চুক্তি থেকে সরে না যেতে ট্রাম্পকে বারবার চাপ প্রয়োগ করছিল। এরপরই ম্যাটিস ছাড়া বাকি দুজনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প। দুই মুখকে সরিয়ে দিয়ে ইহুদিপন্থী মাইক পম্পেইকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জন বোল্টনকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ দেন ট্রাম্প। এরপরই এই নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একমত হয়ে তেহরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে ট্রাম্পকে পরামর্শ দেন। এর ফলেই ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান।

সূত্র: বিবিসি
এমজে/