তুরস্কের সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ যুদ্ধ
প্রকাশিত : ১২:৩৮ পিএম, ১০ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার
১৫ বছর ধরে তুরস্কের শাসনভারে থাকা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছে। দেশটিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের তারিখ ২৪ জুন ঘোষণার পর নতুন করে এই রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হলো।
মঙ্গলবার এরদোগান পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, যদি একদিন দেশের জনগণ বলে ওঠে যথেষ্ট হয়েছে। তাহলে আমরা সরে দাঁড়াবো।
এরদোগানের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অসংখ্য তুর্কি হ্যাশট্যাগ #তামাম যার অর্থ ‘যথেষ্ট’ লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছে, যার মানে দাঁড়ায় তারা ১৫ বছর ধরে যথেষ্ট সহ্য করেছে।
মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে এই হ্যাশট্যাগ প্রায় ২০ লাখ বার ব্যবহার হয়। সেখানে অনেকেই প্রেসিডেন্ট ও তার ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির তীব্র সমালোচনা করে।
বিষয়টি জনমনে সাড়া তোলায় ওই রাতেই সরকারি অ্যাকাউন্টগুলো এক হয়ে হ্যাশট্যাগ #দেভাম লিখে পাল্টা প্রচারণা শুরু করে, যার অর্থ ‘চালিয়ে যাও’। এটি এখন পর্যন্ত ৩ লাখ বার ব্যবহার হয়েছে।
অর্থনীতি ও বৈদেশিক নীতি গবেষণা কেন্দ্রের সাইবার গবেষক অধ্যাপক আকিন উভার, এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রচারাভিযানকে ইন্টারনেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হ্যাশট্যাগ যুদ্ধগুলোর একটি বলে আখ্যা দেন।
এক ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী এই #তামাম এবং #দেভামের মধ্যে যুদ্ধকে সুপারহিরোদের লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করেন।
বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মুহাররেম ইন্স মন্তব্য করেছেন, এরদোয়ানের সময় শেষ হয়ে এসেছে।
সিরিয়ান কার্টুনিস্ট ইয়াদ ওয়াউইল এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একটি ছবি শেয়ার করছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘এরদোয়ান হয়তো এই তামাম মন্তব্যে ভয় পেয়েছেন।’
হাজার হাজার মানুষ কেবল হ্যাশট্যাগ #তামাম লিখেই টুইট করেছেন। আবার অনেকে এরদোয়ান বিরোধী স্লোগান যুক্ত করে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে পোস্ট শেয়ার করেছেন। কেউ খুব কড়া ভাষা ব্যবহার করেছেন। কেউবা ভদ্রতার সঙ্গে ক্ষোভ উগ্রে দিয়েছেন।
হ্যাশট্যাগের এমন ভাইরাল প্রচারণা এবং এরমধ্যে কিছু তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল পোস্ট থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার কারণে এখনও বেশ জনপ্রিয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভোসৌলু হ্যাশট্যাগ #দেভাম ব্যবহার করে জানান, সরকার আমাদের শুভকামনা নিয়ে আরও সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী তুরস্ক গঠনে কাজ করে যাবে।
অনেক এরদোগান সমর্থকরা হ্যাশট্যাগ # দেভাম পোস্ট করে প্রেসিডেন্টের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। জানতে চেয়েছেন তারা যথেষ্ট বলতে কি বোঝাতে চাইছে? সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যথেষ্ট হয়েছে? তুরস্ক স্বাধীনভাবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেটা যথেষ্ট? মাতৃভূমি? রাষ্ট্র? কোনটা যথেষ্ট আছে?
অনেকে এই এরদোগানবিরোধী #তামাম প্রচারণার সঙ্গে ২০১৩ সালের সরকারবিরোধী গেজি পার্ক আন্দোলনের তুলনা দিয়েছেন। বিপণিকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ইস্তাম্বুলের গেজি পার্ক দখলকে কেন্দ্র করে সে বছর দেশব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিলো। সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ #আয়াগাকাল্ক বা রুখে দাঁড়াও প্রচারণা ব্যাপক সাড়া ফেলে।
তায়লান কুলাচৌলু পোস্টে জানান, কর্তৃপক্ষ এই তামাম ইস্যুটি নিয়ে ক্ষেপে গেছে। কারণ এটি তাদের গেজি পার্ক নিয়ে টুইটারের সেই ভাইরাল প্রচারণার কথা মনে করিয়ে দেয়।
তুরস্কে সেন্সরশিপ বেশ কড়া হওয়া সত্ত্বেও সরকারের সমালোচনায় এই হ্যাশট্যাগ তামাম ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। টুইটারের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন ২০১৭ থেকে জানা যায়, সামাজিকমাধ্যম থেকে কন্টেন্ট মুছতে বলার জন্য তুরস্ক প্রথম সারির দেশ ছিলো।
বিশিষ্ট আইনজীবী কারিম আল্টিপারমাকে মতে, সরকারের এমন নিয়ন্ত্রণ আরোপের মধ্যেও যদি ১০ লাখ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই তামাম শব্দটি ব্যবহার করে, তাহলে একই ধারণা পোষণ করে চুপ থাকা মানুষের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
তুর্কি কর্তৃপক্ষ এর আগে টুইটার এবং ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটগুলোতে প্রবেশের সুযোগ সীমিত করার পাশাপাশি উইকিপিডিয়ায় প্রবেশের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিলো।
পরে উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস, সেই হ্যাশট্যাগের উদাহরণ টেনে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে উইকিপিডিয়া অবরোধ তুলে নিয়ে জনগণের কথা শোনার আহ্বান জানান।
সূত্র: বিবিসি
একে// এআর