যুদ্ধাপরাধের মামলা থেকে তুরিন আফরোজকে অব্যাহতি
প্রকাশিত : ১২:৪৩ পিএম, ১০ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এক আসামির সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ট্রাইব্যুনালের সব মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগ, গত বছরের ১৮ই নভেম্বর তিনি মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর (অব) ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে টেলিফোন করে গোপনে বৈঠক করতে চান। পরদিন ১৯ নভেম্বর তিনি গুলশানের একটি রেঁস্তোরায় ওয়াহিদুল হক, তার স্ত্রী ও একজন স্বজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি আসামীর কাছে ঘুষও চেয়েছেন। সেই বৈঠকের কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করেন ওয়াহিদুল হক।
চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু জানিয়েছেন, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর এখন সেটির তদন্ত চলছে। তাই আপাতত তাকে মামলা পরিচালনা না করার জন্য বলা হয়েছে। আর মামলার সব নথিপত্র প্রসিকিউশনে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৪শে এপ্রিল মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয়। তখন তার মোবাইল ফোনে সেই রেকর্ড পায় পুলিশ। তাদের কাছ থেকে তদন্ত সংস্থা সেটি জানতে পারে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল একজন প্রসিকিউটর।
সেই বৈঠকের তথ্যপ্রমাণ ও অডিও রেকর্ড চীফ প্রকিকিউটরের কাছে দেওয়ার পর প্রথমে এই মামলা পরিচালনা থেকে তুরিন আফরোজকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার তুরিন আফরোজকে মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন এবং তার কাছে থাকা নথিপত্র চেয়ে পাঠান। পাশাপাশি এ ঘটনায় একটি তদন্তও শুরু করা হয়েছে। গতকাল বুধবার এসব অভিযোগের একটি কপি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়েও।
মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। একাত্তর সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে চালানো গণহত্যায় তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় ১৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন। ১৯৭১ সলের এপ্রিলে বদলি হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান এবং সেখানে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে মানবতা বিরোধী ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। অভিযোগ গঠনের পর ১১ই নভেম্বর এই মামলার প্রসিকিউটরের দায়িত্ব দেওয়া হয় তুরিন আফরোজকে।
বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও। তিনি বলেন, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে অভিযোগ সংক্রান্ত নথি দেখে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তুরিন আফরোজ। জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আজমের মামলাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা তিনি পরিচালনা করেছেন। প্রসঙ্গত, পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এর আগে ২০১৪ সালের আগস্টে প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকেও মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সূত্র : বিবিসি।
একে// এআর