ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

মাহাথিরের উত্থান যেভাবে

প্রকাশিত : ০৪:৩৯ পিএম, ১০ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

মালয়েশিয়ায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির পর প্রথমবারের মতো দেশটিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে দেন তিনি। এই একটি কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার অনুকরণীয় রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হয়েছিলেন মাহাথির। যদিও নিজ দেশে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

রাজনীতিতে মাহাথির মোহাম্মদের হাতেখড়ি ১৯৪৬ সালে। তখন তাঁর বয়স ছিল মোটে ২১ বছর। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তখন উত্তাল মালয়েশিয়া। ওই সময়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন তিনি। ওই দলের মূল আদর্শ ছিল জাতীয়তাবাদ। এটি এখনো মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। সেই থেকে ৭২ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার মাহাথিরের।

ইউনিভার্সিটি অব মালয় থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশোনা করেছেন মাহাথির। এরপর জন্মভূমি কেদাহ রাজ্যে সাত বছর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। মাহাথির ধীরে ধীরে ‘ডক্টর এম’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ইউএমএনও দলের হয়ে ১৯৬৪ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তবে ১৯৬৯ সালে ঘটে ছন্দপতন। তৎকালীন সরকার প্রধান টেংকু আব্দুল রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পার্লামেন্ট আসন হারান তিনি। মালয় সম্প্রদায়কে অবহেলার অভিযোগ তুলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টুংকু আব্দুল রহমানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন মাহাথির। এতেই ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়েন তিনি।

রাজনৈতিকভাবে একঘরে হওয়ার পর বই লেখায় মনোনিবেশ করেছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। নিজের আদর্শ ও চিন্তাভাবনা নিয়ে একটি বিতর্কিত বই লেখেন তিনি। বইটির নাম ছিল ‘দ্য মালয় ডিলেমা’। ওই বইয়ে তিনি লিখেছিলেন, ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকেই মালয় সম্প্রদায়কে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছিল। আর এই বিষয়টি মেনে নিতে মালয় সম্প্রদায়কে বাধ্য করা হয়েছিল।

দ্য মালয় ডিলেমা প্রকাশিত হওয়ার পর রাজনীতিবিদ হিসেবে ডক্টর এমের পুনরুত্থান ঘটে। পশ্চিমা নব্য ঔপনিবেশিকদের প্রতি মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে-তা ঠিক করতে বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর ইউএমএনও দলের তরুণ নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মাহাথির। দলে ফিরেই ১৯৭৪ সালে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। এরপর মন্ত্রিসভায় ঢুকে যান মাহাথির। পান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। টেংকু আবদুল রহমান ক্ষমতা ছাড়লে মাহাথিরের প্রমোশন হয়। তিনি দেশের উপ প্রধানমন্ত্রী হন।

মন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার চার বছরের মধ্যে নিজ গুণে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন মাহাথির মোহাম্মদ। ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) দ্বিতীয় প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।

মাহাথির প্রথম ক্ষমতায় আসেন ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে এবং অবসরে যান ১ অক্টোবর ২০০৩ সালে। তিনি যখন অবসর নেন তখন (২০০৩ সালের ১ অক্টোবর) তিনি ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।

অবসর নিলেও রাজনীতির বাইরে বেশিদিন থাকতে পারেননি। নিজ দলের নেতৃত্বের সাথে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি ২০১৬ সালে Malaysian United Indigenous Party গঠন করেন। আর এই দলকে সঙ্গে নিয়েই এবার ১৪তম জাতীয় নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে সংখ্যাগরিষ্টতা পায় মাহাথিরের দল।

৭২ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মাহাথির আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। রয়টার্স জানিয়েছে, মাহাথিরকে এখন তার নতুন জোটের চার দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার জন্য কাজ করতে হবে এবং কারগারে থাকা বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমকে করে করার পথ বের করতে হবে। দেশের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। আগের ভুলগুলো শুধরে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। একজন চিকিৎসক থেকে রাষ্ট্রনায়ক হওয়া মাহাথির মোহাম্মাদ শুধু মালয়েশিয়া নয়, পৃথিবীর ইতিহাসের একজন অন্যতম সফল চরিত্র হিসাবে স্বমহিমায় ভাস্বর থাকবেন এই প্রত্যাশাই সাধারণ মালয়েশিয়ানদের।