৪০০ বছরে একটি শিশুরও জন্ম হয়নি যে গ্রামে
প্রকাশিত : ০১:৫৫ পিএম, ১২ মে ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০২:৫৯ পিএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার
ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজগরের সঙ্ক শ্যাম জী গ্রাম। ভোপাল শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে। গ্রামটিতে অদ্ভূত একটি ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে দিনের পর দিন।গত চারশ’ বছরেও এখানে কোনো শিশুর জন্ম হয়নি।
ভাবছেন, তাহলে কি এই গ্রামে কারোর বাচ্চা হয় না? সব নারী বন্ধ্যা! বিষয়টি তেমন না।
এই গ্রামে যেসব নারী অন্ত:স্বত্ত্বা হন, তারা সন্তানের জন্ম দেন গ্রামের সীমারেখার বাইরে গিয়ে। এই প্রথা চলে আসছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে, যখন এখানে হাসপাতালের সুবিধা ছিল না তখন থেকেই।
কথিত আছে, গ্রামের সীমানার মধ্যে যদি কোনো নারী সন্তান প্রসব করেন, তাহলে মা ও শিশু দুজনেরই ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। শিশুটি হয় মৃত অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মায়। মায়ের ক্ষেত্রেও মৃত্যু বা অঙ্গহানি অবধারিত বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা। তারা বলছেন গ্রামের নারীদের ওপর ঈশ্বরের অভিশাপ আছে।
তাই এরকমটা হয়। তাই কোনো লিখিত আইন না থাকলেও গত ৪০০ বছরে সঙ্ক শ্যাম জী গ্রামে কোনো শিশুর জন্ম হয়নি। জরুরি কোনো কারণে প্রসুতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলে রোদ ঝড় উপেক্ষা করে তাকে কোনোক্রমে গ্রামের সীমানার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রসবের জন্য।
গ্রামটির পঞ্চায়েত প্রধান নরেন্দ্র গুর্জর জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশ শিশুর জন্ম হাসপাতালেই হয়। একান্ত প্রয়োজনে প্রসুতিকে গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামবাসীরা শুধুমাত্র এই প্রয়োজনের জন্যই গ্রামের বাইরে একটি ঘর-ও করে রেখেছেন।
কিন্তু কবে, কিভাবে গ্রামের ওপর এই অভিশাপ এলো? গ্রামের বয়স্করা জানিয়েছেন, এর পেছনে আছে এক কীংবদন্তী। জানা যায় অভিশাপ-এর সূচনা সেই ষোড়শ শতকে। সেসমময় সঙ্ক শ্যাম জী গ্রামের মন্দিরটি তৈরি হচ্ছিল। নির্মাণ কর্মীরা কাজ করছিলেন। সেসময় গ্রামের এক সুন্দরী নারী গম ভানতে শুরু করেন। এতে নির্মাণ কর্মীদের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। নির্মাণের কাজ ছেড়ে তারা এই সুন্দরীর গম ভানা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এতেই প্রবল চটে যান ঈশ্বর। অভিশাপ দেন গ্রামের মহিলাদের। অভিশাপটা ছিল, এই গ্রামে আর কোনো নারী সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না। সেই থেকেই এই প্রথা চালু আছে সঙ্ক শ্যাম জী গ্রামে।
কিন্তু, একুশ শতকে দাঁড়িয়ে ষোড়শ শতকের একটি কল্পকাহিনীকে কেন্দ্র করে এই প্রথা চালিয়ে যাওয়া কুসংস্কার নয় কি? এতদিনে একটি শিশুরও জন্ম হয়নি এগ্রামে, এটাও কী বিশ্বাসযোগ্য? গ্রামবাসীরা কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাসে জানিয়েছেন, না এটা কুসংস্কার নয়। তবে, এ গ্রামের ৪০০ বছরের ইতিহাসে কোনো শিশুই গ্রামের সীমার মধ্যে জন্মায়নি, সেটাও ঠিক না। তারা বলেছেন, কখনও কখনও পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে সন্তানসম্ভবা নারীকে গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়ার উপায় হয়নি। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেছে যে অভিশাপের কার্যকারিতায় তাদের বিশ্বাস আরও বেড়েছে।
গ্রামবাসীদের দাবি, সেসব ক্ষেত্রে হয় মৃত সন্তান প্রসব করেছেন মা, কিংবা প্রসব করতে গিয়ে মায়েরই প্রাণ চলে গিয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাণ না গেলেও মায়ের অঙ্গহানি হয়েছে, বা শিশুটি বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছে। তাই, অভিশাপটিকে কোনও রকম প্রশ্ন না করে তাঁরা চুপচাপ প্রথা মেনে চলাই শ্রেয় বলে মনে করেন।
তবে ঈশ্বর যে গ্রামটিকে কেবল অভিশাপই দিয়েছেন তা নয়, আশির্বাদও আছে। কী সেই আশির্বাদ? ভারতবর্ষে গ্রামীন অর্থনীতিতে পানাসক্তি একটা বড় সমস্যা। এর জেরে, সংসারে অশান্তি, মাপধর, এমনকি খুন-জখমও লেগেই থাকে। গ্রামের এক প্রবীন জানিয়েছেন, সঙ্ক শ্যাম জী গ্রামে একজনও মদ মুখে তোলে না। মাংসও খায় না। এটাই একমাত্র আশির্বাদ।
সূত্র : ওয়ান ইন্ডিয়া।
/ এআর /