এশিয়া প্যাসিফিকের মধ্যে টিউশন ফি বাংলাদেশে বেশি
প্রকাশিত : ১১:৩৪ পিএম, ১২ মে ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১১:৪৯ পিএম, ১২ মে ২০১৮ শনিবার
বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাটা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও বর্তমানে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পরীক্ষায় ভালো ফল। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য সন্তানকে কেবল শ্রেণীকক্ষে পাঠিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারছেন না মা-বাবা, ছুটছেন প্রাইভেট টিউশনের পেছনে।
শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষার ধরন ও শিক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে গত বছর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের কয়েকটি দেশে গবেষণা চালায় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। এর অংশ হিসেবে এ অঞ্চলের নয়টি দেশের বিভিন্ন স্তরের পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন গবেষকরা। পরীক্ষায় প্রস্তুতি নিতে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে শ্রেণীকক্ষের বাইরে প্রাইভেট টিউশন গ্রহণ করতে হয় বলে উঠে আসে তাদের গবেষণায়। এতে দেখা যায়, এশিয়ার প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে প্রাইভেট টিউশন গ্রহণের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সম্প্রতি ‘দ্য কালচার অব টেস্টিং: সোসিওকালচারাল ইমপ্যাক্টস অন লার্নিং ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউনেস্কোর ব্যাংকক কার্যালয়। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীই প্রাইভেট টিউশন গ্রহণ করে। যদিও প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার ৫০ শতাংশ। প্রাইভেট টিউশন গ্রহণের হার সবচেয়ে কম ফিজিতে। দেশটিতে মাত্র ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের বাইরে প্রাইভেট টিউশন গ্রহণ করে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে প্রাইভেট টিউশন গ্রহণের হার কাজাখস্তান ও ভিয়েতনামে ৭০ শতাংশ, রিপাবলিক অব কোরিয়ায় ৬৮ শতাংশ ও ফিলিপাইনে ৩৫ শতাংশ।
ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাইভেট টিউশনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে কোচিং সেন্টারের সংখ্যা খুবই দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এক্ষেত্রে শহর ও গ্রামে সবখানেই সমান প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সন্তানের ভালো ফল লাভে পিতামাতার উচ্চ প্রত্যাশাকেই এর অন্যতম কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণাটির বাংলাদেশ অংশের কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক শাহ্ শামীম আহেমদ।
ইউনেস্কোর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাইভেট টিউশন গ্রহণ মূলত পরীক্ষাকেন্দ্রিক। পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের কোচিংয়ে পাঠাচ্ছেন। এদিকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষা সংখ্যা অনেক বেশি বলে প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে। বাংলাদেশের জরিপে অংশ নেয়া ৬২ শতাংশ শিক্ষক ও ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই পরীক্ষা সংখ্যাকে অনেক বেশি বলে মত দিয়েছেন।
গবেষণায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে কেমন সময় ব্যয় করা হয়— শিক্ষার্থীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান গবেষকরা। তাদের দেয়া উত্তরে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষের ভেতরে সপ্তাহে ৭ ঘণ্টার বেশি সময় পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ব্যয় করে, যা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। আর ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য শ্রেণীকক্ষের বাইরে সপ্তাহে ৭ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করে।
আরকে//এসি