‘মা’ দিবসে তারকাদের অনুভূতি
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ এএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০১:০২ পিএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার
পৃথিবীর অনেক মানুষেরই জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেন তাদের ‘মা’। এই মা কখনো তাদের জীবনে হাজির হয়েছেন আবেগের আশ্রয় ভূমিকায়, আবার কখনো হয়ে উঠেছেন সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, অধ্যবসায় ও সাফল্যের চাবিকাঠি।
জীবনের যেকোনো সাফল্যে মায়ের অবদান সীমাহীন। আর এই বিশ্বের ইতিহাসে যারা মহামানব বা মনিষী হিসেবে স্থান পেয়েছেন, তারা কখনোই নিজের মায়ের এই অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে দ্বিধা করেননি।
আজ বিশ্ব মা দিবস। দিবসটি স্মরণ করে সাধারণ মানুষদের মত দেশের শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ ফেসবুকে নিজের ‘মা’ ও সন্তানদের ছবি প্রকাশ করে বিশ্ব ‘মা’ দিবসকে স্মরণ করছেন।
তারকাদের ফেসবুক থেকে নেওয়া অনুভূতিগুলো দিয়ে ইটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদন।
নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেছেন-
"আমি কখনই একা নই।কারণ,আমি সব সময় বই পড়ি।যার সংগী বই,সে কখনই একা হয়না।"
কথা গুলো কিছুদিন আগে যিনি আমাকে বললেন,তিনি আমার মা।
শিশির কণা ভদ্র।
যার জন্য আমি প্রতিদিন সুন্দর সকাল দেখতে পাই।
যার জন্য আমার প্রতিদিন ঘুম ভাঙে।
আজ তার জন্যই আমার এত সব।
একমাত্র মায়ের ভালবাসাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আর স্বার্থহীন ভালবাসা।
মায়ের ভলবাসার কোন তুলনা হয়না।
তাকে ভালবাসি।ভয়ও পাই।সম্মানও করি।তিনি অনেক নীতিবান মানুষ।তিনি স্কুল টিচার ছিলেন।মনে পড়ে যায়,নভেম্বর মাসে যখন আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে এক মাসের জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে যেতো আমার মামনি ডিসেম্বর মাসের বেতন সহ দুইমাসের বেতন টিচার কে খামে ভরে দিতেন।আমরা যদি বলতাম এক মাস তো পড়িনি।মা উত্তর দিতেন," স্কুল, কলেজ,ইউনিভারসিটি, অফিস আদালত কোথাও যদি বন্ধ থাকে এক মাসের জন্য তারা কী কেটে রাখে বেতন? তাছাড়া টিচারের বেতন কখনই এমন করবেনা।এক মাসে কী আর হবে।
কখনো মিথ্যা বা ভুল বলতে দেখিনির।শুনিনি।
তখনকার সময়ে তিনি ডবল এম এ।
তার কাছ থেকেই আমার যা কিছু অর্জন।আমার যা কিছু ভালো, যদি ভালো কিছু থেকে থাকে,তার কাছ থেকেই পাওয়া।
তার একটাই কথা।তিনি কখনও কোনদিন অপরকে দোষ দিতেন না।কখনই না।আমাদের শাষন করতেন।
মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতেন।ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে উঠতেন।রান্না করতেন নিজ হাতে। অনেক সময় সচেতন তিনি।
মায়ের আর কিছু না পাই, এই একটি গুণ আমি পেয়েছি।খুব ভোরে ওঠা,আর নিজ হাতে প্রতিদিন রান্না করা।
আমার মা অনেক অভিমানী।অভিমান হলে পুষে রাখেন।প্রকাশ করেন না।ভালবাসাতেও প্রকাশ কম।তার সাথে আমার এই এক জায়গাতেই অমিল।ভালবাসা বা কাছের মানুষের সাথে আমি কিছু লুকিয়ে রাখিনা।আর ভলবাসি কথাটা আমি অনেকবার বলতে আর শুনতে ভালবাসি।আমার ধারনা তাতে কনফিডেন্ট বাড়ে,মন বড় হয়।
কিন্তু আমার মা একদম ই উল্টা।
আজ মা দিবস।সকল মায়েদের জন্য রইল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।আপ্নারা সবাই সময় থাকতে ভালোবাসি কথাটা মাকে বার বার বলুন।প্লিজ।পরে আফসোস করবেন।
আপনারা সবাই আমার মায়ের জন্য প্রার্থনা করবেন।প্লিজ।
আর আমার যেন তার আগে মৃত্যু হয়।
মামনি,তোমাকে অনেক ভালবাসি।অনেক। অনেক কিছু ইচ্ছা থাকা সত্তে ও করা হয়ে ওঠেনা।
কিন্ত প্রতি মুহূর্তে আমি তোমাকেই ভাবি।
যখন আমার জ্বর হয়,মাথা ব্যথা হয়, দাত ব্যাথা করে,মাইগ্রেন হয়,তোমাকে মনে পড়ে।কত রাত তুমি না ঘুমিয়ে আমার যত্ন করেছো!!এইতো সেদিন ৩০ এপ্রিল কোলকাতায় আনার জ্বর এ সেন্স ছিল না।তুমি আর বাবা মাথায় জল দিলে,জাউ ভাত রান্না করে খাওয়ালে।
কতদিন নিজে ভালো কিছু না খেয়ে আমাদের জন্য এনেছো!!কখনও অভাব বুঝতে দাওনি।
ছুটির দিন গুলিতে ও রেষ্ট করোনি।
আমাকে ছায়ানটে পাঠিয়েছো।
আজ সব মনে পড়ছে মা।
তুমি ভালো থেকো।সুস্হ থেকো মা।
তোমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসি মামনি।’
অভিনেত্রী শাহানাজ খুশী দুই সন্তানের সঙ্গে নিজের ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন-
মা-কোন একটা দিনের শব্দ,ভালবাসা নয়।বিধাতার পরে বিবিধ বিধাতার রুপ হল জননী। মানুষ কে বিন্দু বিন্দু যত্নে গড়ে দেবার মায়ার নাম-মা। একজন অস্থিচর্মসার নারীও সন্তানের জন্য সর্বক্ষন দশভুজা দূর্গা।স্বার্থ,অর্থে,লোভে বিক্রিত না হওয়া সম্পর্কের নাম-মা। কখনো কোন একটা মা ও হাজারো যুদ্ধের ভেতরও তার সন্তানের হাত ছাড়েনি। মাতৃত্বের প্রথম দিন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আজন্ম বুকছেড়া অনুভব আর সংগ্রামী যোদ্ধার নাম-মা। আধুনিক দিবসের শৃংখল গলিয়ে,আমার অহর্নিশির প্রানের গুন্জন,বেদনা,প্রার্থনা সকল মায়ের তরে......❤️❤️.
চিত্রনায়ক শিপন মিত্র তার ফেসবুকে মায়ের ছবি সহ ছোট্ট অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন-
‘মা ভালবাসি!!’
চিত্রনায়িকা তানহা মৌমাছি মায়ের সঙ্গে ছবি প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন-
‘Love u Sona ammuota amar????????sarajibon avabe saya hoey theko tumi amar pashe ????????ummma happy Mother’s Day ????????Ame ato lucky akta girl j amar atttooooooo lokkhi akta ma ase????????♀️ মায়ের জন্য ভালোবাসা
মায়ের জন্য মমতা
মায়ের জন্য প্রার্থনা মায়ের সুস্থতা
মায়ের জন্য শ্রদ্ধা মা হোক আমার
আমাদের সবার নির্ভরতা
কামনা আর যেন মা বাবার ঠিকানা না হয় বৃদ্ধাশ্রম
এই হোক মা দিবসে সকল সন্তানদের অঙ্গীকার .....’
সঙ্গীতশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল তার ফেসবুকে লিখেছেন-
‘মায়ের কনিষ্ঠ সন্তান আমি। যখন মায়ের পেটে এলাম তার আগেই আরও ৫ সন্তান দিয়ে মায়ের সংসার পরিপূর্ণ। জীবনে ছেলে এবং মেয়ে দুটোর শখই মিটে গেছে, তাই আমি ছিলাম খানিকটা অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত। তার গর্ভে আমার অস্তিত্ব টের পাবার পর তাই আমাকে স্বাগত জানাতে খানিক বিলম্ব হয়েছিলো মায়ের। দু একবার যে আমার আগমন প্রতিরোধ করার কথাও মাথায় এসেছে, এমনটা মা এখন স্বীকার না করলেও আমি বুঝতে পারি। ভাই-বোনেরাও কিছুটা বিব্রত, ৬ষ্ঠ! অপ্রতিরোধ্য গতিতে আমি এলাম। আমার আসা কোনোভাবে আটকানো গেলো না। আমার টিকালো নাক, গোলাপ পাপড়ির মতো ঠোঁট, আর দুধে আলতা গায়ের রঙ দেখে ভূমিষ্ঠ হবার পর মায়ের কোলে আমাকে তুলে দিয়ে ডাক্তার শর্মা বলেছিলো, `ইরানের রাণী।` মা কেঁদে উঠেছিলো আমাকে দেখে, হয়তো ভাবছিলো, `একে পৃথিবীতে না আনলে ভুলই করতাম।` তখন কি মা নিজেও জানতো ৬ সন্তানের মধ্যে তার সবচেয়ে প্রিয় হবো আমিই? আমার ভিতরেই থাকবে তার প্রাণের চাবি? সেই থেকে মায়ের আঁচল ধরে আমার বেড়ে ওঠা। আমার ক্ষেত্রে উলটো ঘটেছে, যতো বড় হয়েছি ততো মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়েছি। উঠতে বসতে চলতে ফিরতে মায়ের আঁচলটা আরও দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছি। এর ফাঁকে কখন যে আমরা দুজন সই হয়েছি মনে নেই। কখন যে প্রজন্মের ব্যবধান ঘুচে গেছে জানি না। মায়ের বয়স কমতে কমতে কখন যে মা আমার সমবয়সী হয়ে গেছে তা ভাবতে বসলে গোলমেলে লাগে। এ যুগের হাবভাব, চালচলন, রীতি প্রকৃতির সাথে কিভাবে যে সে মানিয়ে নিয়েছে তা এক বিস্ময় আমার কাছে। তা না হলে আমিই বা কী করে অবলীলায় অনর্গল বলতে পারি আমার মনের আগল খুলে সমস্ত ভাব? কখনও আমি মা হয়ে যাই, আবার কখনও মা হয়ে ওঠে `পুতুল`। এভাবে চলে ভূমিকা পাল্টাপাল্টি। আমি না থাকলে এ-বয়সে মা`কে যে কে সঙ্গ দিতো ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠি।
মা, পৃথিবীর কাছ থেকে যতোবার ধোঁকা খাই, ততোবার মনে পড়ে আমার তুমি আছো।
আমার একটা মা আছে...।’
ফেসবুকে দেবাশিষ বিশ্বাস লিখেছেন-
‘দুর্গা মা একবার তাঁর দুই সন্তান কার্তিক আর গণেশকে বললেন, যে সবার আগে পৃথিবীর পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে পারবে, সে ই তার প্রকৃত সন্তান! এই কথা শোনার পর কার্তিক তার বাহন ময়ূরে চরে পৃথিবী প্রদক্ষিণে বেড়িয়ে পরলেন! কিন্তু গনেশ সেটা না করে তার মা অর্থাৎ দূর্গা মা`র চারপাশে প্রদক্ষিণ করা শুরু করলেন!কারণ তিনি জানতেন, তাঁর মা ই তাঁর পৃথিবী! আমার কাছেও আমার মা ই আমার পৃথিবী! পৃথিবীতে সুখ-শান্তি`র জন্য সবাই সম্পদের পেছনে দৌড়ায়! আমার কাছে সুখ-শান্তি`র নাম `মা`! আমার কাছে জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদের নাম `মা`! আমি আমার সম্পদকে আগলে রাখতে চাই সারাজীবন!! প্রত্যেক মা ই তাঁর সন্তানের জন্য ভেবে ভেবে তাঁর জীবন পার করে দেয়! কিন্তু আজ এই বিশেষ দিনে আমি চিৎকার করে পুরো বিশ্বকে বলতে চাই, আমার জীবনে আমার মা আমার জন্য যা করেছেন, পৃথিবীর অন্য কোনো মা তাঁর সন্তানের জন্য তা করেন নি, তা করবেন না! মা: তুমি ভালো থেকো আজীবন, জগতের সকল জাগতিক সুখ তোমাকে স্পর্শ করুক! আজকের এই বিশেষ দিনে তোমাকে দেয়ার মত আমার কিছু নেই মা! তোমার আয়ূ`র সাথে আমার আয়ূটাও না হয় তোমার হোক!
সবাইকে বিশ্ব মা দিবসের শুভেচ্ছা!!’
জনপ্রিয় রেডিও জকি (আরজে) সায়েম লিখেছেন-
‘আজ মা দিবসে আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করো " মাকে কি উপহার দেয়া যায় বলো তো ?? " .... আমি শুধু একটি উপহারের কথাই বলবো , আর তা হলো " সময় " .... সময় খুঁজে , সময় করে মাকে সময় দাও .... ভরসা পাচ্ছো না আমার কথায় , তাহলে একদিন অন্যদিনের চেয়ে এক ঘন্টা আগে বাসায় ফেরো , তারপর মায়ের চেহারার দিকে একবার তাকাও , জেনে যাবে , মনের অজান্তে মাকে একটা উপহার দিয়েছো তুমি ....
( নিজের একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বললাম )
- সায়েম
চিত্রনায়ক শাহরিয়াজ লিখেছেন-
মা, একটু একটু করে বুঝতে শিখছি আপনার অবদান।
মা- ই একমাত্র সত্য।
অভিনেত্রী, মডেল ও নৃত্যশিল্পী শানারৈ দেবী শানু তার বাচ্চার সঙ্গে কিছু ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন-
"মা" পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ,শ্রেষ্ঠ অনুভব....
এছাড়া অভিনেত্রী মৌসুমী নাগ,
অভিনেত্রী দীপা খন্দকার ফেসবুকে ছেলের সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করে নিজ নিজ ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।
অপরদিকে অভিনেতা সজল মাকে নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি খুবই মা ভক্ত ছেলে। এখনো আমার সব কলকাঠি নাড়েন মা। আমার বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ছোট বাচ্চাদের মতো মা আমার যত্ন নেন। শুটিংয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আবার বাসায় ফেরা পর্যন্ত। মায়ের সঙ্গে আমার খুবই সুন্দর একটি সম্পর্ক। তিনি আমার সেরা বন্ধু। সবকিছু তার সঙ্গেই শেয়ার করি। তিনি শ্রোতা হিসেবে খুবই ভালো। আমার সব কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শোনেন। আমিও সবকিছু শেয়ার করি, আলোচনা করি। তবে কখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমার উপর তিনি চাপিয়ে দেন না। তবে একাধিক অপশন দেখিয়ে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলেন।’
অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, ‘আমার মায়ের ডাকনাম কবিতা। যখন খুব ছোট ছিলাম, সবাই আমাকে ডাকত জাপানি ডল বলে। পরিচিতজনেরা আদর করে বলতেন, ‘এই পুতুলটা কে রে?’ আমি তখন ডাঁট দেখিয়ে বলতাম, ‘আমি কবিতার মেয়ে ববিতা।’
হ্যাঁ, আমি কবিতারই মেয়ে। মায়ের অংশ থেকেই আমার জন্ম।
মায়ের দিকে তাকিয়ে আজকাল খুব অপরাধবোধ জাগে। আমাদের জন্য এত কিছু করলেন যে মানুষটি, কাজকর্মের ব্যস্ততায় তাঁকে এখন সেভাবে সময় দিতে পারছি না আমি। যদিও কোথাও বেড়াতে গেলে তিনিই আমার ভ্রমণসঙ্গী।’
সত্যিই তাই। মহা মানবরা তাইতো বলেছেন- ‘মানুষের জীবনে মা যে কারো ভূমিকায় হাজির হতে পারেন, কিন্তু অন্য কারো পক্ষে মায়ের ভূমিকায় হাজির হওয়া সম্ভব না। খাটি সোনাকে আরও বেশি খাটি করা সম্ভব, কিন্তু মায়ের সৌন্দর্যকে এর থেকে বেশি সুন্দর করা অসম্ভব।
মা এমন একজন যার ওপর মানুষ নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করতে বাধ্য হয়।
এসএ/