নতুন সরকার গঠনে প্রবাসীদের ক্ষতি হবে না
শেখ আরিফুজ্জামান, মালয়েশিয়া থেকে
প্রকাশিত : ০৬:২৭ পিএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৬:৪৫ পিএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার
মালয়েশিয়ার ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিমের জোট পাকাতান হারাপান সরকার জয়ী হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন রকম গুঞ্জন শুরু হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। নতুন এই সরকারের অধীনে প্রবাসীরা কতটুকু নিরাপদ থাকবে-এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা রকম প্রশ্ন। তবে দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান কর আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত সাধারণ প্রবাসীদের একটি বড় অংশ মনে করছেন নাজিব রাজাক ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রবাসীদের সুবিধার্থে নেওয়া বিভিন্ন রকম পদক্ষেপের মধ্যে প্রবাসীদের জন্য সব থেকে বড় প্রাপ্তি ছিল অবৈধদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া। যেখানে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী হাজার হাজার রিঙ্গিত খরচ করে এই রি-হেয়ারিং-এর আওতায় নিবন্ধিত হয়েছেন। শুধু নিবন্ধিত নয়, এমনও অনেকই আছেন যাদের ইমিগ্রেশন ফিঙ্গার থেকে শুরু করে মেডিকেল পর্যন্ত হয়ে গেছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা ভিসা স্টিকারের জন্য।
এমন মুহূর্তে সরকারের পালা বদলে নতুন সরকার সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে কিনা এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা। কারণ বিগত সরকার অবৈধদের বৈধকরণে যে বিশাল রি-হেয়ারিং প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছিল তা এখনও শেষ হয়নি। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার যদি এ প্রক্রিয়াকে স্থগিত বা বাতিল করে দেয় তাহলে কয়েক লাখ প্রবাসী ভিসা পাবে না। ভিসা বঞ্চিত এসব অবৈধ প্রবাসীদের দেশে ফিরতে হবে।
কয়েক মাস আগে রি-হেয়ারিং প্রক্রিয়ায় মাই ইজি`র মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন এমন কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় তারা বলেন, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন আমাদের নিত্যদিনের ভাবনা বৈধকরণের প্রক্রিয়ায় ভিসা হবে কিনা তা নিয়ে। কারণ মাই ইজি`র মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি ধাপ আমরা পার করেছি। আর এই মাই ইজি কোম্পানিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের স্ত্রীর অংশীদারিত্ব রয়েছে। এখন গুঞ্জন শুনছি এই কোম্পানির মাধ্যমে নাকি ভিসা হবে না। এ নিয়ে বেশ চিন্তিত আমরা।
এদিকে, যে সব ব্যক্তি মালয়েশিয়াতে নিজেরা কোম্পানি খুলে এতোদিন ডিরেক্টর ভিসা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতো তাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে নানা রকম দু:শ্চিন্তা। কারণ বর্তমান সরকারের সময় যদি কোম্পানির ডিরেক্টর ভিসা নবায়ণ না করা যায় তাহলে ব্যবসার মূলধন ফেলে দেশে ফেরা ছাড়া উপায় থাকবে না।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এমন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যাও কম নয়। তারা মনে করছেন, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধার কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার পরিবর্তন হলেও প্রবাসী নীতির খুব একটা পরিবর্তন হয় না। তারা মনে করেন মাহাথির মোহাম্মদ প্রবাসীবান্ধব। তার বর্তমান রাজনৈতিক সহচর আনোয়ার ইব্রাহিম খুব একটা প্রবাসীবান্ধব না হলেও মাহাথিরের আমলে মালয়েশিয়ার উন্নয়নে সাধারণ প্রবাসীদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বড় বড় অট্টালিকা এই প্রবাসীদের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।
কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা কোতারায়ার বাংলাদেশি বিজনেস কমিউনিটির সভাপতি রাশেদ বাদল বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন প্রবাসী নীতি থেকে তারা খুব একটা সরে আসবে না। কারণ দেশটির অভ্যন্তরে প্রচুর মিল, কল-কারখানা রয়েছে যেখানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিকের চাহিদা থাকায় এখনও প্রায় প্রতিদিনই বাইরে থেকে শ্রমিক আসছে মালয়েশিয়ায়। এ অবস্থায় প্রবাসী নীতি থেকে সরে আসার সম্ভাবনা নেই। বরং বৈধকরণের রি-হেয়ারিং প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে ক্ষমতাসীন সরকার কিছু সংস্কার আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইআইইউএম-এ প্রবাসীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন ড. মো. সায়েদ উদ্দিন। তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনে প্রবাসীদের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে সব সময়ই এ ধরনের ভীতি কাজ করে। তবে একটা কথা সবাইকে মনে রাখা উচিত প্রবাসীরা যেমন তাদের ভাগ্য উন্নয়নে মালয়েশিয়ায় এসেছেন ঠিক একইভাবে মালয়েশিয়ার প্রয়োজনে বাইরে থেকে এসব অভিবাসীকে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আনা হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
টিকে