ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যে কারণে কোটা ব্যবস্থা বাতিল চান

প্রকাশিত : ১১:০৪ এএম, ১৫ মে ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৫৫ এএম, ১৫ মে ২০১৮ মঙ্গলবার

বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ২০ হাজার নতুন গ্রাজুয়েট বের হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিলেও চাকরির বাজারে তাদের কদর কম। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার কারণে বঞ্চিত হচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এদিকে কোটা ব্যবস্থার আওতায় মেধাবী শিক্ষার্থী না পাওয়ায় সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোতে কয়েক লাখ শূন্য পদ রয়ে গেছে। অন্যদিকে দেশে সরকারি চাকরিতে আগের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করায় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে সরকারি চাকরির পেছনে। তা ছাড়া দেশে বেকারত্বের মাত্রা আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থা বাতিলের জন্য আন্দোলনে নেমেছে।

কোটা প্রথা: সরকারি চাকরি বিশেষ করে সিভিল সার্ভিসের চাকরিতে ৫৬ শতাংশ প্রার্থীর-ই নিয়োগ হয় কোটা ব্যবস্থার আওতায়। অন্যদিকে বাকি ৪৪ শতাংশ পূরণ করা হয় সাধারণ কোটা থেকে। কোটা ব্যবস্থায় ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য। বাকি ২৬ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ উপজাতি কোটা ও বাকি ১ শতাংশ প্রতিবন্দী কোটা।

আকর্ষণীয় চাকরি: বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিসে চাকরি খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করে। এটিই সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি বছর বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার চাকরি প্রার্থী নিয়োগ দিয়ে থাকে সিভিল সার্ভিস কমিশন। তবে এর জন্য প্রতিবছর ৩ লাখেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। মূলত সিভিল সার্ভিসে চাকরিরতদের সরকার এমন সুযোগ সুবিধা দিয়েছে, যা পাওয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোটা সিস্টেমে কি ভুল আছে: দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। ইকোনোমিস্ট ইন্টিলিজেন্স রিপোর্ট ২০১৪ অনুসারে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশে বেকারত্বের এই হার দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ১০ জন গ্রাজুয়েটের ৫ জনই বেকার। অন্যদিকে পাকিস্তান ও ভারতে প্রতি ১০ জনে বেকারের সংখ্যা ৩ জন করে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে কয়েক বছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি কমে গেছে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ দশমিক এক শতাংশ। অন্যদিকে ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংসদে বলেন, বর্তমানে সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৩ লাখ ৫০ হাজার শূন্য পদ রয়েছে।

এসব কারণেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। তবে কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তাই শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন অব্যাহত রেখেছেন। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কোনদিকে যায়, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

সূত্র: আল-জাজিরা
এমজে/