দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘কিম` নামের তিন ব্যক্তি
প্রকাশিত : ০৩:৪৬ পিএম, ১৫ মে ২০১৮ মঙ্গলবার
কিম জং উন, কিম জং ইল, বা কিম ইল সুং - এসব নাম শুনলে অনেকেরই মনে পড়বে মাত্র তিনজন লোকের কথা- যারা বিভিন্ন সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা ছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন তিনজন লোক রয়েছেন যাদের এই একই নাম রেখেছিলেন তাদের বাবা-মায়েরা।
এই তিন কিম- এরা সবাই দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ নাগরিক। কিন্তু সমস্যা হয়েছে তাদের নাম নিয়ে।
কারণ এই নামগুলো তাদের প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার লোকদের কাছে এই নামগুলোর মালিকেরা গভীর সম্মান, সমীহ এবং অনেক ক্ষেত্রে ভীতির উদ্রেগ করে।
এরা হলেন- কিম জং উন, কিম জং ইল এবং কিম ইল সুং- তিন নেতার নাম। দুই কোরিয়ার দীর্ঘ বৈরিতার ইতিহাসের মধ্যে এরকম তিনটি নাম নিয়ে বড় হয়ে ওঠা তাদের জন্য কেমন ছিল?
দুই কোরিয়ার সেই বৈরিতা যখন ক্রমশ কেটে গিয়ে সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে- তাকেই বা কিভাবে দেখেন তারা?
কিম জং ইল বলছিলেন, আমার বাবা-মা হয়তো তেমন করে ভাবেনইনি যে এই নাম রাখার পরিণাম কি হবে। কিন্তু আমার এই নাম কখনো খুব একটা পছন্দ ছিল না। সত্যি বলতে কি, এই নামের জন্য আমার খারাপ লাগতো। আমি তাদের বলতাম, তোমরা আমার এই নাম রাখলে কেন?"
কিম জং উন বলছিলেন, উত্তর কোরিয়ায় আমার নামে মাত্র একজন লোক আছেন। এটা একটা ছেলের নাম হলেও শোনাতো একটা মেয়ের নামের মতো। এটা খুব সুন্দর কোন নাম নয়। কিন্তু এটা একটা বিখ্যাত নাম এবং একজন প্রভাবশালী লোকের নাম।
উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার বৈরিতার ইতিহাস দীর্ঘ এবং পৃথিবীর অনেকেরই জানা। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই তিনজনের `কিম` নাম নিয়ে বড় হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতাটা ঠিক কেমন?
কিম জং উন বলছেন, কয়েক বছর আগে থেকে আমি দেখলাম লোকে আমাকে লিডার কমরেড বলে সম্বোধন করতে শুরু করেছে। বলছে, "কি হে কিম জং উন - আমার প্রিয় নেতা!
কিম ইল সুং বলছেন, আমি যদি কোন সরকারি চাকরি করতাম তাহলে হয়তো আমার নামটা পাল্টাতে হতো। অথবা যদি রাজনীতিতে নামতাম - তাহলে আমি কিম ইল সুং-এর মতো একটা নাম নিয়ে কিভাবে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইতাম? লোকে তো আমাকে হেসেই উড়িয়ে দিতো! তবে একটা সুবিধে আছে কেউ একবার আমার নাম শুনলে আর কখনো ভুলবে না।
কিম জং ইল বলেন, আমি যখন নিজেকে কিম জং ইল বলে পরিচয় দিই। তখন লোকে চমকে গিয়ে বলে "ওঃ"। তবে আমার নামটা মনে রাখা খুব সহজ।
কিম জং উন বলছেন, আমি একটা গেস্টহাউসের মালিক। তাই কোরিয়ায় বেড়াতে আসা অনেক লোকের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তাদের একজনের নাম ছিল কিম জং ইল। শুনে আরেকজন বললো- শোনো, এই দুজন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর লোক।
কিম ইল সুং বলছিলেন, তার অফিসে একজন সহকর্মী ছিল তার নাম ছিল কিম জং ইল।
আমি ছিলাম তার বস। কাজেই ব্যাপারটা ঠিক উত্তর কোরিয়ার মতোই ছিল। ঠিক যেমন বাবার আদেশ মতো ছেলে কাজ করতো।
সম্প্রতি উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক কেটে যেতে শুরু করেছে। দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ, সফর বিনিময় হচ্ছে। কিম জং ইল গানবাজনার সঙ্গে জড়িত ওয়াই বি নামে একটি ব্যান্ডের তিনি ম্যানেজার। কিছুদিন আগে তিনি একটি গানের দল নিয়ে উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়েছিলেন। সেখানেও তার মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
তিনি বলছেন, কিছুদিন আগে মারা পিয়ংইয়ংএ একটা কনসার্ট করতে গিয়েছিলাম। আমরা সেখানে পৌঁছানোর পর আমাদের নাম চেক করা হলো। লক্ষ্য করলাম, উত্তর কোরিয়ানরা আমাকে শুধু কিম বলে সম্বোধন করছে, আমার পুরো নাম নিচ্ছে না। আমার নাম দেখে তারা খুবই বিস্মিত হয়েছিল।
এই তিন কিমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সম্পর্কে তাদের ধারণা কি?
এদের কথা ছিল এই রকম।
তিনি একজন উদ্যোগী এবং প্রাণ শক্তিতে ভরপুর নেতা। তার মধ্যে উদ্দীপনা আছে এবং তিনি খুবই পুরুষালী। কিম জং উন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে তার নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই।
আমার মতে কিম জং উন কোনো বোকা লোক নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামলানোর ক্ষমতা তার আছে। তার ক্ষমতা আছে ঘটনার ঘটানোর। আমি শুধু চাইবো সে যেন একটু চেষ্টা করে।
দুই কোরিয়ার নেতাদের মধ্যে ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠক হয়ে গেছে। কিছুদিন পরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও বৈঠক হতে যাচ্ছে কি জং উনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে এলে তখন দক্ষিণ কোরিয়ার এই তিন কিমের অভিজ্ঞতাও হয়তো অনেকটা বদলে যাবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।
এসএইচ/