ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

যেমন আছেন লেবাননে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা

প্রকাশিত : ০৯:০২ এএম, ১৭ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

লেবাননে বুর্জ আল বারাজনেহর একটি শরণার্থী শিবির। সেখানে একেকটা বাড়ির মাথায় উড়ছে ফিলিস্তিনি পতাকা। সরু সরু রাস্তা। ওপরে মাকড়সার জালের মতো পেচানো বিদ্যুতের তার।

স্পিকারে খুব জোরে জাতীয়তাবাদী গান বাজিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল একটি গাড়ি। এই শরণার্থী শিবিরে বসবাস করা খুব একটা সুখকর নয়। বেঁচে থাকার অর্থ রোজগারের জন্যে কোনও কাজ নেই। বসবাসের পরিবেশও খুব খারাপ। এই ক্যাম্পে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা নাকবা দিবসে কথা বলছিলো পেছনে ফেলে আসা তাদের বাড়িঘর সম্পর্কে।

একজন শরণার্থী বললেন, আমাদের জন্যে এই নাকবা খুব খারাপ একটি দিন। নিজেদের দেশ ও ভূমির কথা আমাদের মনে পড়ে। এরকম একটা খারাপ পরিবেশে আমরা কেনও বসবাস করছি?

আরেকজন নারী শরণার্থী বলেন, আমার বয়স ১৫। লেবাননেই আমার জন্ম। এখানেই আমি বড় হয়েছি। কিন্তু আমার দাদা দাদী নানা নানী তারা সবাই তাদের ফেলে আসা জীবনের কথা বলেন। আমার বাবা মাও সেসব দেখেননি। কিন্তু তারপরেও তারা ফিলিস্তিনে ফিরে যেতে চান। আমিও চাই ফিরে যেতে।

এটিকে ক্যাম্প বলা হলেও এখানে কোনও তাবু নেই, নেই অস্থায়ী বাড়িঘরের কোনও কাঠামো। কিন্তু তারপরেও এটিকে ক্যাম্প বলা হয় কেনও? কারণ ফিলিস্তিনিরা মনে করেন লেবাননের এই জায়গাটি তাদের অস্থায়ী ঠিকানা। তারা স্বপ্ন দেখেন ৭০ বছর আগে তারা যেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন, কিংবা তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেখানে তারা একদিন ফিরে যাবেন।

একজন বললেন, নিজের ভূমি থেকে দূরে থাকা খুব কঠিন। সেখানে আমরা যেতেও পারি না। আল্লাহ চাইলে আমি আমার নিজের দেশে মরতে চাই। আমি চাই সেখানেই আমার কবর হোক। আমার বিশ্বাস একদিন আমরা ফিরে যাবো এবং সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

লেবাননের এরকম বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করেন প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী। তাদের বেশিরভাগই ১৯৪৮ সালের ইসরায়েল-আরব যুদ্ধের সময় নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন, কিংবা তাদেরকে সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ৭০ বছর আগের ১৫ মে, ফিলিস্তিনিরা যেদিনটিকে পালন করে নাকবা দিবস হিসেবে। শরণার্থীরা বহু বহু বছর ধরে লেবাননে বসবাস করলেও তাদের জীবন যাপন অনেক সীমিত। বঞ্চিত অনেক অধিকার থেকেও।

এরা যে শুধু ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে শরণার্থী হয়েছেন তা নয়। লেবাননেও একটি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ চলছে। দেশটিতে এতোরকমের গোষ্ঠী আছে যে কখন কোন গ্রুপ কার সঙ্গে যুদ্ধ করছে সেটা বুঝতে পারাও খুব কঠিন।

লেবাননের জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন সবসময়ই বিস্ফোরকের মতো। বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে লেবাননের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। তাদের অনেক কাজের ওপরে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।

নির্ধারিত ক্যাম্পের বাইরে আর কোথাও তাদের বসবাসের অনুমতি নেই। তারা জায়গা জমি কিংবা বাড়িঘরও কিনতে পারে না।

জানা আল মাওয়া এই ক্যাম্পেরই একজন শিক্ষক। তিনি বলছেন, ফিলিস্তিনি ছেলেমেয়েরা ছেঁড়া ও ময়লা জামা কাপড় পরে। তারা যখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায় তাদেরকে দেখা হয় বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে।

তিনি বলেন, এখানে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা মনে করে তারা যদি লেবানিজ সমাজের সঙ্গে মেলামেশা করেন তাহলে তারা হয়তো তাদের ফিলিস্তিনি পরিচয় হারিয়ে ফেলবেন।

লেবাননের একজন এমপি নাদিম জামায়েল মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের সমান অধিকার দিতে তার দেশ এখনও প্রস্তুত নয়।

‘ফিলিস্তিনিরা এখানে আছেন শরণার্থী হিসেবে। তাদের নাগরিকত্ব বা অন্যান্য অধিকার দেওয়া সম্ভব নয়। সেরকম কিছু হলে, লেবাননের বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে যে সম্প্রীতি আছে, সেটা নষ্ট হবে। সেটা করতে দেওয়া যাবে না।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

একে// এসএইচ/