স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শেখ হাসিনার অবদান পর্যালোচনা
ড. এম এ মাননান
প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ১৭ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সেদিনটি ছিল বৃষ্টি ঝরা দিন। আজ থেকে সাইত্রিশ বছর আগে। ভোর থেকেই ঝরছিল আকাশ চিরে মেঘভাঙা বৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে রহমতের আব; তিনি সম্ভবত বেছে নিয়েছিলেন এদিনটিকে রহমতের দিন হিসেবে।
বৃষ্টি মাথায় লাখো মানুষের কলকোলাহলে মুখরিত বিমানবন্দরের চত্বরে বিমান থেকে নেমেই এসে দাঁড়ালেন সৌম্যকান্তির সেই মেয়েটি যিনি এখন একজন পরিণত ব্যক্তিত্ব। চোখে তার দুনিয়ার ভালোবাসা এদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য। তুমুল করতালি আর জয় বাংলা স্লোগানের গমগম রবে কেঁপে ওঠা হিমেল হাওয়ায় জনসম্মুখে এসে অকুতোভয় বাবার মতো কান্নাভেজা নির্ভীক কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন ‘আমি নেতা নই। সাধারণ মেয়ে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী।
বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য প্রয়োজন হলে এই সংগ্রামে পিতার মতো আমিও জীবনদান করতে প্রস্তুত।’ জনগণ বুঝল, যাকে যা মানায়, তাকে সে কথাই বলতে হয়। তিনি তা-ই করলেন। তখনকার জটিল-কুটিল-সংঘাতময় বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ মানুষরা বঙ্গবন্ধুর শূন্যস্থানে বসালেন তাকে অতি ভালোবাসায়, মুগ্ধ হৃদয়ে। শুরু হল এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম তারই চৌকস নেতৃত্বে।
নির্বাসন থেকে এসেছিলেন তিনি স্বৈরাচারকবলিত পঁচাত্তরের ঘাতক চক্রের পৃষ্ঠপোষকদের শাসিত বাংলাদেশে। দিনটি ছিল একাশি সালের সতেরো মে। এমন সময় যখন অপসৃত হয়ে যাচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, তিরিশ লাখ শহীদের রক্তরঞ্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক মুক্তির আশা। গণতন্ত্র তো পঁচাত্তরেই নিঃশেষ। চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া হল সেই চার জাতীয় নেতাকেও, যারা ধরতে পারতেন বঙ্গবন্ধুর হাল। এমন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন তিনি, যেখানে বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের জাঁতাকলে ঘাতকদের বিচার বন্ধ, মাফ পেয়ে গেলেন তারা সব দায় থেকে।
পঁচাত্তরের ঘাতকরা পুরস্কৃত আর শাসনক্ষমতার গদিতে সমাসীন, জাতীয় পতাকাশোভিত সরকারি গাড়িতে বসে স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন, দেশের ইতিহাস বিকৃত, লালবাতি গণতন্ত্রের ঘরে, স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঢামাঢোল, সমগ্র জাতি সুনেতৃত্বশূন্য, অর্থনীতি প্রায় বিধ্বস্ত। এমনতর জরাজীর্ণ বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন আবেগময়ী, সংবেদনশীল, দেশপ্রেমী অকুতোভয় সেই কাক্সিক্ষত নেতা, যার জন্য অপেক্ষা করছিল বারো কোটি বাঙালি।
তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, বাইগার নদীর তীরে হাওয়ায় ভেসে ছুটতে ছুটতে সফেদ ঢেউ গুনতে গুনতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া সেই চপলা বঙ্গকন্যাটি। যার মনের কোণে গ্রামের সরলতা আর হৃদয়ে শ্যামল বাংলাদেশ। তিনি কী আর বসে থাকতে পারেন সেনাকুঞ্জের শাসকদের মতো আয়েশী ভঙ্গিতে আরাম কেদারায়? সঙ্গে সঙ্গেই নেমে পড়লেন আসল কাজে, রাষ্ট্রকে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত থেকে বাঁচাতে।
দেশের মাটিতে পা রেখে যা যা করার কথা তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, তা তিনি রক্ষা করেছেন। তার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতৃত্বে অল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। অর্জন তার অনেক। তুলে ধরলাম এখানে কয়েকটি।
এক. জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে যেটি সামনে চলে আসে, তাহল মহাকাশে বাংলাদেশের অবস্থান। এই তো মাত্র এক সপ্তাহ আগে ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে নিজেদের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে শেখ হাসিনার এই অর্জন বাংলাদেশের ইতিহাসে কেবল মাইলফলক হয়েই থাকবে না, এক সময় যারা আমাদের তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অবজ্ঞা করেছিল, তাদের প্রতিও এটি জবাব হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া তার দিকনির্দেশনায় বেশ কয়টি ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত বিশ্বজয় ধরা দিয়েছে। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী জামদানির বুননপদ্ধতি, বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ এবং সর্বশেষে বিশ্ব নির্বস্তুক ঐতিহ্যের তালিকায় বাংলাদেশের শীতলপাটির বয়নপদ্ধতি। এর অনেক আগে তো একুশে ফেব্র“য়ারির জন্য আদায় করেছেন জাতিসংঘের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এতসব অকল্পনীয় অর্জন সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতিকে দিয়েছে কয়েক ধাপ এগিয়ে।
দুই. প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ যুক্ত হল জাতীয় গ্রিডে। ২০০৯ সালের প্রথমদিকে যেখানে মাত্র ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হতো ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, সেখানে বর্তমানে ১১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হচ্ছে ১৬,০০০ মেগাওয়াটের বেশি আর ২০২১ সালের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪,০০০ মেগাওয়াট। উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির যে কমিটমেন্ট তিনি করেছিলেন ক্ষমতায় আরোহণের সময়, তা তিনি পূরণ করে দেখিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, নেতৃত্বের ভিশন আর সবলতা থাকলে অবশ্যই উন্নয়নের দিশা পাওয়া যায়।
তিন. বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী ছিল যে মঙ্গা, আশ্বিন-কার্তিকের ভয়াবহ খাদ্য সংকট, তা এখন জাদুঘরে। খাদ্যে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে অর্জন করেছে প্রায়-স্বয়ংসম্পূর্ণতা। তা হয়েছে অনেক কারণে- সারের দাম কমানো, সাবসিডি দেয়া, গ্রামে গ্রামে কৃষির জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ, সরকারি প্রণোদনার কারণে কৃষিতে নতুন নতুন উদ্ভাবন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ, অভাবী জনপদে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে মজুরি বৃদ্ধি, কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া ইত্যাদি।
চার. নিন্দুকদের চেহারায় ধুলোর ঝাপ্টা দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান। বাংলার সব নাগরিকের নাগালে এসেছে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা। সরকারি তথ্যাবলি আর সেবা জনগণের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। প্রায় সব ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করে সেখান থেকে প্রদান করা হচ্ছে ২০০ ধরনের সেবা। জাতীয় তথ্য বাতায়ন নামে পঁচিশ হাজার ওয়েবসাইটসমৃদ্ধ বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল তৈরির মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে সারা দেশে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার পথ।
পাঁচ. বাংলাদেশে যেসব জনগোষ্ঠী সবচেয়ে অবহেলিত ও সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত, বয়স্ক, শারীরিকভাবে অক্ষম, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, গ্রামীণ দরিদ্র নারী, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী- এদের সবার আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নেয়া হয়েছে ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, যা আগে ছিল অকল্পনীয়।
ছয়. সারা দেশে বল্গাহীন টেন্ডারবাজি কোন্ সুদূরে পালিয়েছে। ই-টেন্ডার সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বস্তি এনে দিয়েছে। কাজকর্মে স্বচ্ছতা এনেছে ই-গভর্ন্যান্স।
সাত. তিনি তার প্রিয় দল আওয়ামী লীগকে উন্নয়নের দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আওয়ামী লীগ এখন কমিটমেন্ট রক্ষা করতে সক্ষম সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। ২০০৮-এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে জাতির সঙ্গে এ দল যেসব ওয়াদা করেছিল- ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার, বিদ্যুৎ ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, শিল্পায়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ইত্যাদি সবই ক্রমান্বয়ে পূরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সবকিছু হয়তো কাঁটায় কাঁটায় মিলবে না; কিন্তু অতীতের তুলনায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মূল্যায়নেও তার প্রমাণ মিলছে।
আট. বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন তিনি। পলাতকদের দেশে আনার প্রক্রিয়া চলমান। এখানেই শেষ নয়। ’৭১-পরবর্তী পশ্চিমাদের অবহেলা আর অবজ্ঞার বুলি ‘বাংলাদেশ ইজ এ বট্মলেস বাসকেট’ আজ দৃষ্টান্ত গড়েছে বিশ্বে। আইনের শাসন, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পরিবেশ উন্নয়ন, নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, সিটমহল সমস্যার স্থায়ী সমাধান, মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের দোরগোড়ায় পৌঁছা, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, ১০১ জন মানুষকে হত্যাকারী মুফতি হান্নানের ফাঁসির মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের নির্মূল করা, নারীর ক্ষমতায়ন, ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন, সমুদ্র জয়ের মাধ্যমে বিশাল সীমানা বৃদ্ধি, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি, প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ ভর্তি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে জেন্ডার সমতা অর্জন, উচ্চশিক্ষায় নারীদের ভর্তির হার প্রায় ৪৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, মেয়ে শিক্ষার্থীদের মাসিক উপবৃত্তি, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই ৩৬ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ, মাদ্রাসাসহ সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন বাধ্যতামূলক করা, এমডিজি সাফল্য বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা আজ নজর কেড়েছে সমালোচকদেরও। এত দ্রুত পরিবর্তন আনতে পারেনি বিশ্বের কোনো দেশ। ফলে আজ বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তারা।
নয়. মাথাপিছু আয় এক হাজার ছয়শ’ মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। নিুমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের দোরগোড়ায়। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা থাকলে প্রত্যাশা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করবে।
দশ. এই প্রথম বাংলাদেশ তার নেতৃত্বে একটি সর্বজনগ্রাহ্য যুগোপযোগী শিক্ষানীতি পেয়েছে, যার বাস্তবায়ন দেশে অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাব্যবস্থার উন্মেষ ঘটিয়েছে এবং কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার পথ সুগম করেছে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংখ্যাগত ও গুণগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ ভর্তি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে জেন্ডার সমতা অর্জন, উচ্চশিক্ষায় নারীদের ভর্তির হার প্রায় ৪৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, মেয়ে শিক্ষার্থীদের মাসিক উপবৃত্তি প্রদান, শতাধিক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ- এসব তারই যোগ্য নেতৃত্বের ফসল। শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই প্রায় ৩৬ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে সারা দেশে পৌঁছে দিয়ে বিরল নজির সৃষ্টি একমাত্র বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয়েছে তারই অনুপ্রেরণায়।
এগার. বাঙালি জাতির গর্ব শেখ হাসিনার আপোষহীন মনোভাব ও নির্দেশনার ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পে-স্কেলে আমূল পরিবর্তন এনে ইনসেন্টিভ প্রদান, রাজনীতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, প্রত্যেক সেক্টরে তথ্য ও প্রযুক্তির ছোঁয়া, নিজ অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ, সবই তার সাহসী পদক্ষেপ। তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে ক্ষমতাসীন হয়েও ক্ষমতায় নির্মোহ। শতভাগ সততা নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী নেতৃত্ব দিয়ে ২১শে ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে বিশ্ব-স্বীকৃতি আদায় করেছেন।
বার. ২০১৭ সালে তিনি তার সততার জন্য পেয়েছেন বিশ্ব-স্বীকৃতি, ৩য় স্থানে অবস্থান সৎ নেতা হিসেবে। মিয়ানমার থেকে দশ লক্ষাধিক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মায়ের মমতা দিয়ে আশ্রয় দেয়ায় বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছেন, আখ্যা পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’। কৌশলী নেতৃত্বের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারেও সহযোগিতা আদায় করেছেন।
বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার বিস্ময়কর ও ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে, সন্দেহ নেই। প্রচুর সম্ভাবনাময় এ দেশটি আগামী তেরো বছরে আটাশতম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে পারে যদি বর্তমান প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখার পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়, বাংলাদেশের পর্যাপ্ত ব্র্যান্ডিং করা যায়, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে সুপ্ত সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় এবং সর্বোপরি, জনগণের মধ্যে স্বস্তির আবহ বজায় রাখা যায়। তবে ব্যাংকিং সেক্টরের ভঙ্গুরতা, সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছু ক্ষেত্রে নাজুকতা, অর্থনীতির প্ল্যানিং ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অপর্যাপ্ততা, দ্রুত নগরায়ণ, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থবহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতির অভাব, দুর্বল অবকাঠামোগত সূচক ইত্যাদি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় হুমকিস্বরূপ। তাই প্রয়োজন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সঠিক মাস্টারপ্ল্যান এবং সরকারের ধারাবাহিকতা, যাতে বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষে জ্ঞাননির্ভর প্রশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। একটি নিু-আয়ের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন উন্নয়ন-উপযোগী নেতৃত্ব। বাংলাদেশে এরূপ নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। ফলে উন্নয়নের মহাসড়কে চলার গতি বেড়েছে, বাড়তে থাকবে যদ্দিন তিনি নেতৃত্বে থাকবেন।
প্রফেসর ড. এম এ মাননান : শিক্ষাবিদ, উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।