কোটা সংস্কার আন্দোলন: একান্ত সাক্ষাৎকারে যা বললেন নুর
প্রকাশিত : ১০:৫৮ পিএম, ১৯ মে ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৪:২৩ পিএম, ২০ মে ২০১৮ রবিবার
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৫৬% কোটা সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি গড়ে উঠে কোটা সংস্কার আন্দোলন। একপর্যায়ে আন্দোলনটি শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে। বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা নেমে আসে রাস্তায়। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও আন্দোলনকারীরা এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে এর মধ্যে প্রজ্ঞাপন না আসলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
গত ১১ মে আন্দোলনের এক মাস পূর্তি হয়। কিন্তু এর মধ্যেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা আবার রাস্তায় নামে। এরই মধ্যে গত ১৫ মে রাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে একত্রিত হয় কোটা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার ও সংরক্ষণ পরিষদের কয়েকজন নেতা। তাদের অন্যতম এ সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নুর।
নুরুল হক নুর কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে প্রথম থেকেই আলোচিত মুখ। ঢাকা সহ সারাদেশে আন্দোলনটি ছড়িয়ে দিতে যারা কাজ করছেন তাদের অন্যতম নুরুল হক নুর। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে এমএ পড়ছেন। হাজী মুহাম্মদ মহসীন হল ছাত্রলীগের গত কমিটিতে তিনি মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী এ তরুণ ছাত্রনেতা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী অতি শিগগিরই কোটা সংস্কার বা বাতিলের প্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাপন আসবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনের জন্য নুরুল হক নুর-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিবেদক আলী আদনান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: গত ১৫ মে রাতে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো প্রতিনিধি দলের সাথে আপনাদের বৈঠক হয়। বৈঠকটি সম্পর্কে বলুন।
নুরুল হক নুর: সরকার আগেও আমাদের দাবি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে প্রজ্ঞাপন না আসায় আমরা রাজপথে নেমেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দল পনেরো থেকে ২০ শতাংশ কোটা রাখার পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরেছিল। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কোটা রাখার পক্ষে মত দিয়েছি। আমরা বলেছি সেটা পাঁচ দফা দাবির আলোকে কোটা সংস্কার করতে হবে। ওনারা আমাদের কথায় সায় দিয়েছেন। পাশাপাশি আশ্বস্ত করেছেন, যতো দ্রুত সম্ভব সবকিছু বাস্তবায়িত হবে। তারা জানিয়েছেন, কাগজ পত্র সবকিছু রেডি। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর দরকার। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে আমরা রাজপথের কর্মসূচী আপাতত স্থগিত করেছি। তবে এটাও বলেছি, প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস- পরীক্ষা দেবোনা। সেজন্য আমাদের ক্লাস- পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচী চলছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের অংশগ্রহণের কথা বলা হলেও অনেক বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
নুরুল হক নুর: দেখুন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট ১০০ ভাগ পড়েনি। ভোট পড়েছে ৬২. ৫ শতাংশ। কিন্তু আমরা ধরে নিই, এটা ফলপ্রসূ নির্বাচন। কোনো জায়গায় শতভাগ পরিপূর্ণতা পাওয়া যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ সাবজেক্টের ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে। শুধুমাত্র দু`তিনটি ডিপার্টমেন্টর শিক্ষকরা জোর করে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে পরীক্ষা আদায় করছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন কোটা থাকবে না। এখন আবার তাঁর পাঠানো প্রতিনিধি দল পনের থেকে বিশ পার্সেন্ট কোটা রাখার কথা বলছেন। বিষয়টা কি সাংঘর্ষিক হয়ে গেলোনা?
নুরুল হক নুর: সেটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছিনা। তিনি মহান সংসদে দাঁড়িয়ে পুরো জাতির সামনে বলেছেন, সরকারী চাকরীতে কোনো কোটা থাকবেনা। কিন্তু তার পাঠানো প্রতিনিধি দল বলছেন, পনেরো ভাগ কোটা থাকবে। তারা এর পক্ষে নানা ধরনের যুক্তিও দেখাচ্ছেন। আমরা বলেছি, কোটা থাকলেও ১০-১০ পার্সেন্ট এর বেশি হবে না। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভর করবে, কোটা কী সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে যাবে নাকি ১৫% থাকবে। আমরা দুটোতেই রাজি। কোটা পুরোপুরি বাতিল করা হলেও আমাদের আপত্তি নেই। আর যদি সংস্কার করে ১৫% রাখা হয় আমরা সেটাকেও স্বাগত জানাবো।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: যদি কোটা সংস্কার করে ১৫% রাখা হয় তাহলে কী সেক্ষেত্রে আপনারা কোনো সুপারিশ বা কাঠামোর প্রস্তাব করবেন?
নুরুল হক নুর: এটা সম্পূর্ণ সরকারের বিষয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর এব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। বা তারা এ ব্যাপারে এখতিয়ার রাখে। তবে যদি সরকার যদি চায় তাহলে আমরা কিছু প্রস্তাবনা বা সুপারিশ করতে পারি। যেহেতু আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি বা দেশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখি। এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও গুণী ব্যক্তিত্বরা কোটা নিয়ে নানা প্রস্তাব করেছেন। মু্ক্তিযোদ্ধ কোটা ৫%, নারী কোটা ৫% এভাবে কিছু প্রস্তাবনা কিন্তু এসেছে। আবার কেউ কেউ সব মিলিয়ে কোটা ১০% রাখার পক্ষপাতি। তবে এখন কোটা নিয়ে প্রস্তাব করার কোনো সুযোগও আসলে নেই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের আশ্বাস দিয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রতিনিধি দল বলেছেন আমাদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়েই কোটা সংস্কার করবেন। সেক্ষেত্রে আর কোনো সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলে কারা কারা ছিলেন?
নুরুল হক নুর: দেখুন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান। তাঁর প্রতিনিধি দল বলেছেন, আলোচনার স্বার্থে আমরা যেন কিছু ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করি। আমরা তাদের সে প্রস্তাবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: যারা কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অভিযোগ আছে তারা জামাত- শিবিরের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
নুরুল হক নুর: আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা এমন এক আবহে চলে বা চলছে যখনই সরকারকে প্রেসার ক্রিয়েট করে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠে বা কোনো দাবি দাওয়ার আওয়াজ উঠে তখন বলা হয় সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য বা বিব্রত করার জন্য এ আন্দোলন। তখন কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে এ ধরনের কথা বলেন। আন্দোলনের গায়ে রাজনৈতিক দলের সীল লাগানোর অপচেষ্টা করেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে প্রথম সারিতে থেকে আমরা যে চারজন নেতৃত্ব দিয়েছি- আমি ( নুর), রাশেদ, ফারুক, মামুন- আমি চারজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। মামুন আমাদের আহবায়ক। বর্তমানে মামুন মহসীন হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি। আমি ( নুর) মহসীন হল ছাত্রলীগে গত কমিটিতে মানব সম্পদ বিষয়ক উপ-সম্পাদক ছিলাম গত কমিটিতে। ফারুক এস এম হলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ছিল। রাশেদ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সে কখনো সক্রিয় ভাবে রাজনীতি না করলেও, ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে। এটা তো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই, এখন হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগ করেই থাকতে হয়। সুতরাং সে ছাত্রলীগ করেই হলে থাকে। যারা আমাদেরকে জামাত- শিবির বলছে তারা পাগলের প্রলাপ বকছে ও ভিত্তিহীন কথা বলছে।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। তার মানে তিনি ছাত্রদের এ আন্দোলনকে সমর্থন দিলেন। মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রদের প্রতিনিধি দলের সাথে সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম দাবি দাওয়ার ব্যাপারে ছাত্রদের সাথে বৈঠক করেছেন। যদি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা জামাত- শিবির বা তাদের এজেন্ট হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কেন এ দাবি মেনে নিলেন বা ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও এনামুল হক শামীম- এর মতো সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা কেন ছাত্রদের সাথে বসলেন, এ প্রশ্ন কী এসে যায়না? এ কথা সত্য, ৯০- এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর এই প্রথম সাধারণ ছাত্রদের দাবি নিয়ে আন্দোলনে একটা গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং এটাকে থামানোর জন্য, এ আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য রাজনীতির গন্ধ লাগানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করবেন, এমন ঘোষণা দিয়েছেন। প্রজ্ঞাপন জারির ব্যাপারেও সকলেই আশাবাদী। কিন্তু আন্দোলন করতে গিয়ে যারা মামলার শিকার হয়েছেন- তাদের মামলাগুলোর কী হবে? বা মামলাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে?
নুরুল হক নুর: যে মামলাগুলো হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। দ্বিতীয়ত, ভিসি স্যারের বাসায় কারা হামলা করেছিল তা এতোদিনে নিশ্চয় প্রশাসন অবগত হয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে নিশ্চয় ঘটনার সাথে জড়িতদের চেহারা ধরা পড়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আগেও বলেছি, যদিও এ আন্দোলনকে সরকার সমর্থন দিচ্ছে, তথাপি একটি গোষ্ঠী এ আন্দোলনকে ব্যবহার করে একদিকে আন্দোলনের নামে অছাত্রদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে সরকারকে বিব্রত করে আন্দোলনের গায়ে নানা ধরণের তকমা লাগিয়ে আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই গোষ্ঠীটি ভিসি স্যারের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খুব সক্রিয় ও দক্ষ। তারা অবশ্যই ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন কারা এই হামলায় জড়িত। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না হয়তো অন্য কোনো কারণে। আর অজ্ঞাতনামা মামলাগুলো দেওয়া হয়েছিল আন্দোলনে নেতৃত্ব যারা দিয়েছিল তাদের হয়রানি করার জন্য। তবে আমি বলবো, যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে তারা একা নন। সারা বাংলার ছাত্র সমাজ তাদের সাথে আছে। সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ তাদের সাথে আছে। যদি এদের একজনকেও অন্যায় ভাবে হয়রানি করা হয় তাহলে আন্দোলনের দাবানল সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এ আন্দোলন করতে গিয়ে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কেমন হুমকী বা হয়রানীর শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন?
নুরুল হক নুর: চরম হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। আপনারা অবগত আছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে, বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। মেসেনজারে হুমকি আসছে খুন করা হবে। পরশুদিন রাতে আমার রুমে আমাকে ও আমার সহযোদ্ধা রাশেদকে আমাদের রুমে হামলা করতে যায়। কিন্তু আমাদের রুমে ও পার্শ্ববর্তী রুমে কয়েকজন থাকায় তারা আমাদের উপর হামলা করতে পারেনি। চলে এসেছিল। এর আগেও আমাকে `কুপিয়ে মেরে ফেলা হবে` এমন হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ফেসবুকে গ্রুপ খোলা হয়েছে, যেখানে আমাকে ও আমার সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক লিখা হচ্ছে। তবে এসব হুমকিতে আমাদের মনোবল নষ্ট হয়নি। এখনো আমরা বলছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা বাংলার ছাত্র সমাজ নিয়ে আমাদের আন্দোলন চলবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনারা কী এসব হুমকির বিষয়টি সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করেছেন?
নুরুল হক নুর: যখনই সরকারের যে কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা বসেছি সেখানেই আমরা বিষয়গুলো সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করেছি। তারা আমাদেরকে আশ্বস্তও করেছেন। তবে আমি মনে করি, তারা সেভাবে ব্যবস্থা নেননি। শুধু মুখেই আশ্বস্ত করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে যারা আমাদের সাথে বসেছেন তাদেরও আমরা বলেছি, আন্দোলনকারীদের যেনো নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কারণ, ছাত্র সমাজ এখন ঐক্যবদ্ধ। এদের একজনকেও যদি হয়রানি করা হয় তাহলে সারা বাংলার ছাত্র সমাজ তার পাশে দাঁড়াবে। সেটা সবার জন্য বিপদের কারণ হবে। ছাত্ররা একটি যৌক্তিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে। তাই কোনো ভাবে যেনো তাদের হয়রানি করা না হয়।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের দাবি দাওয়া উথাপনের জন্য কোনো প্লাটফর্ম না থাকা, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর পেশী শক্তির অপব্যবহার- এসবের জন্য ডাকসু নির্বাচন দাবি করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। আপনারা কী এ দাবির পক্ষে আওয়াজ তুলবেন?
নুরুল হক নুর: একথা স্বীকার করতেই হবে যে, বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্বের একটা সংকটকাল চলছে। আওয়ামী লীগ- বিএনপি`র বড় বড় নেতারা সবাই ছাত্র জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদের দাবি দাওয়া নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তারা তা করার সুযোগ পেয়েছিলেন কারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন তখন ছিল। আমি মনে করি, শুধু ডাকসু নয়, বরং দেশের প্রত্যেকটি কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করা দরকার। এটা আরো অনেক আগেই হওয়া দরকার ছিল। ছাত্রদের অধিকার আদায়সহ সব জায়গায় গণতান্ত্রিক চর্চা থাকতে হবে। সহমর্মিতা থাকতে হবে। ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। ডাকসু থাকলে এসবের চর্চা হতো এবং সত্যিকারের মেধাবী ছেলেরা রাজনীতিতে উৎসাহী হতো। কিন্তু যেহেতু ছাত্র সংসদ নির্বাচন নাই, সেহেতু সাধারণ ছাত্রদের মতামতের কোনো মূল্যায়ন নাই। এর ফলে পেশী শক্তির দৌরাত্ম্য যারা দেখাতে পারছে তারা রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছে। ছাত্রনেতারা তাদের আদর্শের জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ ছাত্রদের কাছেও তারা গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। তাই সাধারণ ছাত্রদের প্রতিনিধি দ্বারা শুধু ডাকসু নয় বরং প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া আজ সময়ের দাবি। আপনি জানতে চেয়েছেন, আমরা এ দাবির পক্ষে আওয়াজ তুলবো কিনা? এর উত্তরে বলবো, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রসমাজের যে দাবি, কোটা সংস্কারের লক্ষে যে দাবি নিয়ে আন্দোলন দানা বেঁধেছে আমরা আপাতত সে আন্দোলন নিয়েই থাকবো। আপাতত আমরা অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনারা যখন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন, তখন একই সময়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ করার দাবিতেও আন্দোলন করছেন অনেকে। তাদের এ আন্দোলনকে আপনি/ আপনারা কতোটা যৌক্তিক মনে করছেন?
নুরুল হক নুর: বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ। মত প্রকাশের অধিকার সকলের রয়েছে। আপনি আপনার একটা দাবি ব্যক্ত করতে পারেন। সেটা যদি কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় তাহলে সেটা তারা একসেপ্ট করবে। গ্রহণযোগ্য মনে না হলে তারা রিজেক্ট করবে। যারা ৩৫- নিয়ে আন্দোলন করছে আমি জানি না এটা কতোটুকু যৌক্তিক। সেটা সরকার ভালো বুঝবেন। তাদের আন্দোলনের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তাদের সমর্থন দেবো না। আমরা একটা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। সেটা পূরণ হোক। আমাদের সাথে যারা আছে তারা এটাই চাচ্ছে। তাই তাদের আন্দোলন নিয় কোনো মন্তব্য করবো না। আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক বিধায় সরকার মেনে নিয়েছে। তাদের আন্দোলন যৌক্তিক হলে সরকার বিবেচনা করবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
নুরুল হক নুর: আপনাকেও ধন্যবাদ। পাশাপাশি ধন্যবাদ একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে যারা শুরু থেকে আমাদের আন্দোলনের সংবাদ প্রকাশ করে আসছে।
এমজে/