যুক্তরাষ্ট্র-ইরান কি যুদ্ধের দিকে ঝুঁকছে?
প্রকাশিত : ১১:২৫ এএম, ২২ মে ২০১৮ মঙ্গলবার
সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইরানি প্রভাবে ভীত হয়ে পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েল। তাই ইরানকে দমাতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ওয়াশিংটন। তেহরানকে একটি নতুন চুক্তির ব্যাপারে বাধ্য করতে কঠিন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চাপ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটিকে মার্কিন প্রশাসনের প্ল্যান `বি` বলা হচ্ছে।
এখন ইরানকে শুধু তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করলেই চলবে না। তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব বিস্তারের নীতি বন্ধ করতে হবে। এসব করা না হলে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হবে।
কিন্তু তেহরানের সঙ্গে নতুন সমঝোতার ক্ষেত্রে এটিকে কি বাস্তবসম্মত নীতি বলা যায়? নাকি এটি উত্তেজনা বাড়ানোর একটি রেসিপি? প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কঠিন কূটনৈতিক অবস্থান থেকে এমন একটি নীতির কথা যে বলছে, এর মুল উদ্দেশ্য কী ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন আনা? যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরানকে নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন হবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব সম্পর্কে মি: পম্পেও বলেছেন, সেই প্রভাব কমিয়ে আনাও সহজ হবে না।
কিন্তু সৌদি আরব এবং ইসরায়েল ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের আর কারা এই নীতি সমর্থন করবে,তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
প্ল্যান বি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাখ্যা কী?
মি: পম্পেও তাদের নতুন নীতির ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতে হয়তো কিছু যুক্তি আছে। ট্রাম্প প্রশাসন কেন ইরানের সঙ্গে বারাক ওবামার করা পরমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে, সে ব্যাপারে মি: পম্পেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওই চুক্তির মৌলিক বিষয়ে ত্রুটি ছিল। সেজন্য তিনি ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, ইরানের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের চুক্তিটি পূর্ণাঙ্গ কিছু ছিল না। সেটি আংশিক বিষয় ছিল বলে তারা মনে করেন।
তিনি মনে করেন, সেই চুক্তি কাজ করেনি। সেকারণে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকেই এগিয়েছে। তিনি এখন ইরানকে ডজন খানেক শর্ত দিয়েছেন। সেই দাবিগুলো মানা না হলে কঠিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।
ব্যবসায় কী প্রভাব ফেলবে?
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলকে তেহরানের বিরুদ্ধে দমন নীতি বলা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে মিত্রদের উপর নির্ভর করবে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে হয়তো তাদের অনেক মিত্র তাতে সমর্থন করবে। কিন্তু বর্তমানে ইউরোপ ইরানের সঙ্গে আগের চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে রয়েছে। কারণ ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠান ইরানে বিনিয়োগ করেছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কারণে ইউরোপ দুই ধরণের সমস্যায় পড়েছে।
একদিকে তাদের ইরানে বিনিয়োগ বাঁচাতে হবে। অন্যদিকে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। তবে অনেক কোম্পানি ক্ষতি স্বীকার করে হলেও ইরানে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। রাশিয়া, চীন এবং ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কাছে কী নতি স্বীকার করবে, সেই প্রশ্নে নিশ্চিত কোন জবাব এখনই নেই। তারা ইরানে দীর্ঘ দিনের তাদের ব্যবসার ক্ষতি কতটা মেনে নেবে তা বলা মুশকিল।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমজে/