নিরক্ষররাও টাকা তুলতে পারবেন চেকে
প্রকাশিত : ০১:৫৯ পিএম, ২২ মে ২০১৮ মঙ্গলবার
ব্যাংক থেকে নিরক্ষর গ্রাহকরাও চেকের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা এ নীতিমালার সার্কুলার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলার অনুযায়ী, নিরক্ষর গ্রাহককে টাকা তোলার ক্ষেত্রে সশরীরে ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হতে হবে। প্রয়োজনে চেক লেখার জন্য নিকট আত্মীয় বা কোনো পরিচিতজনকে সঙ্গে আনা যাবে। গ্রাহক যদি কাউকে সঙ্গে না আনেন তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের চেক লিখে দিতে সহায়তা করবেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তা নিরক্ষর গ্রাহককে চেকে লিখিত টাকার অঙ্ক পড়ে শোনাবেন এবং গ্রাহক সম্মতি দিলে ব্যাংক কর্মকর্তা নির্ধারিত পদ্ধতি পরিপালন করে নগদ পরিশোধের জন্য ক্যাশ কাউন্টারে পাঠাবেন।
ব্যাংক কর্মকর্তা চেক লিখে দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে একটি ঘোষণাপত্র নিতে পারবেন, যা ছক আকারে ব্যাংক শাখায় সংরক্ষিত থাকবে। ওই ঘোষণাপত্রে গ্রাহকের আঙুলের ছাপের পাশাপাশি চেক লেখক ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ নাম, পদবি, আইডি এবং ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন সাক্ষীর স্বাক্ষরসহ নাম, পদবি, আইডি প্রভৃতি থাকবে। এ ক্ষেত্রে চেক লেখার প্রক্রিয়াটি শাখার এমন দৃষ্টিগোচর স্থানে সম্পাদন করতে হবে যেখানে সিসিটিভির কভারেজ রয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, নিরক্ষর গ্রাহকের পরিচিতির সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই প্রক্রিয়া সম্পাদনের পাশাপাশি নিরক্ষর গ্রাহককে সহজেই শনাক্ত করার জন্য আঙুলের ছাপ, আইরিশ শনাক্তকরণ এবং মুখমণ্ডল শনাক্তকরণ পদ্ধতি চালু করতে পারবে ব্যাংকগুলো। টাকা তোলার ক্ষেত্রে নিরক্ষর গ্রাহক সশরীরে ব্যাংক শাখায় উপস্থিত হতে না পারলে গ্রাহকের অনুরোধে শাখা ব্যবস্থাপকের মনোনীত ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের বাড়ি গিয়ে চেক লিখন, পঠন, গ্রাহকের সম্মতি প্রদান নিশ্চিত করতে পারবেন। গ্রাহকের সম্মতি নিয়ে ওই চেকে পরিবারের কোনো সদস্যকে ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা তোলার সুবিধা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে টাকা উত্তোলনকারীর সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করবে ব্যাংক। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে গ্রাহকের শাখায় উপস্থিত না হওয়ার কারণ ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
নিরক্ষর গ্রাহকের চেক ব্যাংক কর্মকর্তা লিখে দিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সামনে চেকের নির্ধারিত স্থানে গ্রাহকের বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ প্রত্যয়ন করবেন এবং ব্যাংকে রক্ষিত ছবির সঙ্গে উপস্থিত গ্রাহকের চেহারা মিলিয়ে নেবেন।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, গ্রাহক যুক্তিসংগত কারণে শাখায় উপস্থিত না হতে পারলেই শুধু নিকট আত্মীয় বা প্রতিনিধির মাধ্যমে চেকটি কাউন্টারে উপস্থাপন করা যাবে। অন্য সব ক্ষেত্রেই গ্রাহককে কাউন্টার থেকে নিজ হাতে টাকা গ্রহণ করতে হবে। নিরক্ষর গ্রাহকদের সেবা প্রদানের কার্যক্রম হেল্পডেস্কের আওতাভুক্ত করতে পারবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আপাতত নিরক্ষর গ্রাহকদের রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আটিজিএস) বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার এবং ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড সুবিধা প্রদান না করাই সমীচীন হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ ছাড়া নিরক্ষর গ্রাহককে চেকের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি বুঝিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বাক্ষর প্রদানে সক্ষম করে গড়ে তুলতে এনজিওর সহযোগিতা নিতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরকে// এআর