দুর্বিসহ যন্ত্রণায় দিন যাচ্ছে মুক্তামণির
প্রকাশিত : ০৭:৩১ পিএম, ২২ মে ২০১৮ মঙ্গলবার
রক্তনালীতে টিউমারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণি এখন তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণায় নির্জীব হয়ে পড়ছে। টানা ছয় মাসের উন্নত চিকিৎসায় যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস গড়া সেই মুক্তামণির ক্ষতস্থানে এখন নতুন করে পচন ধরেছে। রোগ সারা দেহে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ডান হাত থেকে বেরিয়ে আসছে ছোট-বড় পোকা আর রক্ত। তীব্র যন্ত্রণায় মুক্তামণি এখন কাতর।
জন্মের দেড় বছর পর (বর্তমানে ১৩ বছর) মুক্তামনির দেহে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। তার আক্রান্ত হাতটি গাছের গুড়ির আকার ধারন করে প্রচণ্ড ভারি হয়ে ওঠে। এতে পচন ধরে। পোকাও জন্মায়। দিন রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকতো মুক্তামনি। বিকট দুর্গন্ধের কারণে তার বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ও পড়শিদের যাতায়াতও এক রকম বন্ধ হয়ে যায়।
মুক্তামনির বাবা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহিম হোসেন জানান, দেশের অনেক ডাক্তার ও হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসা করিয়ে কোনা লাভ হয়নি।
অবশেষে দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো মুক্তার করুণ চিত্র তুলে ধরে। পরে সরকারি উদ্যোগে তার মেয়েকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে।
সেখানকার ডাক্তাররা বায়োপসি করে জানান, মুক্তামণির রক্তনালীতে টিউমার রয়েছে। পরে তাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেখার পর সিঙ্গাপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুক্তার চিকিৎসায় তাদের অস্বীকৃতির কথা জানিয়ে দেয়।
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি সরকারি খরচে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। গত ২০১৭ সালের ১০ জুলাই তাকে ঢাকায় ভর্তি করার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম টানা ছয় মাস যাবত তার চিকিৎসা দেয়। এ সময় তার দেহে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসায় তার স্বাস্থ্যের আশানুরুপ উন্নতি হয়।
এদিকে ঢাকায় টানা ছয় মাস চিকিৎসা শেষে এক মাসের ছুটিতে মুক্তামণি ২০১৭ এর ২২ ডিসেম্বর বাড়ি ফিরে আসে। এর পর থেকে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। এরই মধ্যে তার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছে।
তার বাবা-মা এমনকি মুক্তামণি নিজেই এখন হতাশ। সব ধরনের ওষুধ খাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন একবার করে ড্রেসিং করতে হয়। এখন মুক্তামনি দাঁড়াতে পারে না। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা তার রোগমুক্তি কামনা করেছেন। মুক্তামনির মা আসমা খাতুন জানান, ডাক্তার বলেছেন ঈদের পর ঢাকায় নিয়ে যেতে।
দিনরাত ২৪ ঘণ্টা শয্যাশায়ী মুক্তামনি জানায়, তার দেহে কোনো শক্তি নেই। সব চিকিৎসা ব্যর্থ হয়েছে। এখন তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণায় ভুগছে। ক্ষত স্থান থেকে রক্ত ঝরে। পোকা বের হয়। বিকট দুর্গন্ধে কেউ কাছে থাকতে পারে না। মুক্তামণি জানায়, একমাত্র আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
আরকে// এসএইচ/