আজ আন্তর্জাতিক ফিস্টুলা দিবস
ভুল চিকিৎসায় বছরে আক্রান্ত হচ্ছেন দুই হাজার নারী
প্রকাশিত : ০১:৩৫ পিএম, ২৩ মে ২০১৮ বুধবার
সন্তান জন্মদান সময় অনেক ক্ষেত্রে মায়ের জীবন বাঁচাতে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। কিন্ত আমাদের দেশে নারী প্ররোচিত হয়ে অদক্ষ ও অযোগ্যদের হাতে জারায়ুর অপরেশন করানো হয়। আর অপারেশনের আঘাতজড়িত বা ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে দিনে দিনে বাড়ছে ফিস্টুলার আক্রান্তে হার।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে বলছে, শুধুমাত্র অসর্তক এবং অক্ষদতার কারণে বছরে প্রায় দুই নারী ফিস্টুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে ফিস্টুলার চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ১০ থেকে ৫০ ভাগই সার্জিক্যাল আঘাতজনিত। গড়ে প্রতিবছর অন্তত দুই হাজার নারী ফিস্টুলায় নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। সে হিসাবে দিনে ৫ জনের বেশি নারী ফিস্টুলায় আক্রান্ত হন।
এ প্রসঙ্গে এনজেন্ডার হেলথ বাংলাদেশের ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্পের দেশীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. এসকে নাজমুল হুদা বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে ভুয়া ক্লিনিক রয়েছে, যেখানে প্রকৃত চিকিৎসকের পরিবর্তে হাতুড়ে ডাক্তার ও অদক্ষ ধাত্রীরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। যাদের সিজারিয়ান বা জরায়ু অপারেশন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কিন্তু এসব অদক্ষ-অপ্রশিক্ষিত লোকদের হাতে অপারেশন করাতে গিয়ে অনেক নারী ফিস্টুলায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে দেশে অপারেশনজনিত ফিস্টুলার হার বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ নারী এতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর মাত্রা বেশি। সর্বশেষ পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রসবজনিত ফিস্টুলা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার। বাংলাদেশে প্রতিবছর অন্তত দুই হাজার নারী ফিস্টুলায় নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি হাজার বিবাহিত নারীর মধ্যে ১ দশমিক ৭ জন ফিস্টুলায় আক্রান্ত। ২০১৪ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, ফিস্টুলায় আক্রান্তদের ৭৬ শতাংশই প্রসবজনিত এবং ২৪ শতাংশ সার্জিক্যাল বা আঘাতজনিত ফিস্টুলায় আক্রান্ত। দেশে প্রতি এক হাজার বিবাহিত নারীর মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ৬৯ জনই প্রসবকালীন ফিস্টুলায় আক্রান্ত। প্রসবকালীন ফিস্টুলায় নারীদের যোনিপথ, মূত্রনালি ও পায়ুপথের মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এতে করে প্রসবের রাস্তা দিয়ে সবসময় প্রস্রাব বা পায়খানা বা উভয়ই ঝরতে থাকে।
ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্প এনজেন্ডার হেলথ বাংলাদেশের তথ্য মতে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৯শ’ থেকে ১১শ’ ফিস্টুলায় আক্রান্ত রোগীর সফল অপারেশন করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ২০ জন অভিজ্ঞ ও দক্ষ ফিস্টুলা সার্জন রয়েছেন। তবে ফিস্টুলা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন ফিস্টুলা সার্জনকে বছর অন্তত ১২০টি সার্জারি করতে হবে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি ১৭টি হাসপাতাল ও সেবা কেন্দ্রে বিনামূল্যে প্রসবজনিত ফিস্টুলায় আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে এ চিকিৎসাসেবা খুবই অপ্রতুল। এছাড়া রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স সংকট।
টিআর/ এআর