ব্যাংকে এক বছরে কর্মী কমেছে ৯ হাজার
প্রকাশিত : ১০:২৯ পিএম, ২৪ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার
ব্যাংকের অপারেটিং খরচ যদি ১০০ টাকা হয় তাহলে এর মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় হয় মাত্র ২৫ পয়সা। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণে বাজেটও কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। একইসঙ্গে ব্যাংকে এক বছরে কর্মী কমেছে ৯ হাজারেরও বেশি। ২০১৬ সালে ব্যাংক কর্মী ছিল ৯০ হাজার ২৬৫ জন। ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ২৪৫ জন। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬১ শতাংশ ব্যাংকার মনে করেন, ব্যাংকিং খাতে নীতিবান নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম এবং দুর্নীতির ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকিং খাতের নীতিবান নেতৃত্ব দরকার বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি দক্ষতার সঙ্গে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে প্রশিক্ষণের ওপর জোরারোপ করেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন- বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. আব্দুল্লাহ, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কোম্পানি সেক্রেটারি জন সরকার প্রমুখ।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক মাসুদুল হক, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রেক্সোনা ইয়াসমিন, বিআইবিএমের প্রভাষক আনিলা আলী, বিআইবিএমের প্রভাষক লামিয়া রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম।
কর্মশালা উদ্বোধন করে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ব্যাংকিং খাতের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রণালয় বেশ কিছু সার্কুলার জারি করেছে। এসব সার্কুলার যথাযথ পরিপালনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নজরদারি করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। এতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নে ব্যয় ৫০ শতাংশ কমিয়েছে। ১০০ টাকা অপারেটিং ব্যয়ের মধ্যে মাত্র ২৫ পয়সা কর্মীদের উন্নয়নে ব্যয় করেছে ব্যাংক, যা খুবই হতাশাজনক। আন্তর্জাতিকভাবে অপারেটিং খরচের ২ থেকে ৩ শতাংশ ব্যয় করা হয়। একই সঙ্গে এক-তৃতীয়াংশ ব্যাংক তাদের মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিআইবিএমের চেয়ার অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নৈতিকতা বজায় রাখতে পারলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। তিনি ব্যাংকের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন।
এসএইচ/