ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিবিসির বিশ্লেষণ

কিমের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত : ১১:০৫ এএম, ২৫ মে ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১১:২০ এএম, ২৫ মে ২০১৮ শুক্রবার

সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ বৈঠকটি বাতিল করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বৈঠক বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

কিম জং-উনের কাছে ট্রাম্প একটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখে বৈঠক বাতিলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, যাকে `ট্রাম্প স্টাইল কূটনীতি` হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ট্রাম্পের চিঠিতে সবচেয়ে আগে যেটা চোখে পড়বে, তা হল, `হিজ এক্সেলেন্সি` বলে সম্বোধন, যা কিম জং-উনের ক্ষেত্রে বিরলই বলা যেতে পারে।

এটা অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক ধরণের চিঠির সূচনার মতো, যেখানে শুরুতে উত্তর কোরিয়ার নেতাকে তার সময়, ধৈর্য আর উদ্যমের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

চিঠিতে প্রথমেই কিমের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে যে, দুই পক্ষের অনেকদিনের আগ্রহ আর আলোচনার পর জুন মাসে সিঙ্গাপুরে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরে বলা হয়, তারা (মার্কিন সরকার) জানতে পেরেছেন যে, উত্তর কোরিয়ার অনুরোধেই বৈঠকটির আয়োজন হয়েছে, যদিও তাদের কাছে (হোয়াইট হাউজ) তা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক।

এরপরে তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকে সাম্প্রতিক ক্ষোভ ও প্রকাশ্যে বিরূপতা প্রদর্শনের কারণে এখন এ ধরণের বৈঠক করা ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন।

তবে এই চিঠির আসল বক্তব্য এসেছে শেষের দিকে, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কলম থেকে আসলে বিষ বের হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা পারমানবিক পরীক্ষা কেন্দ্রের টানেলটি ধসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে তারা আবার পারমানবিক যুদ্ধের হুমকিও দিয়েছে আর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য (একজন রাজনৈতিক পুতুল) করেছে।

ট্রাম্প এর আগে অনেকবারই প্রমাণ দিয়েছেন যে, উত্তর কোরিয়ার কোনও কটূ কথার তিনি ছাড় দেবেন না।

তাদের পারমানবিক হুমকি-ধামকির তিনি জবাব দিয়েছেন তার নিজস্ব ধরণের কথার আরেক দফা গরম ফুলকি ছড়িয়ে। যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল আর শক্তিশালী পারমানবিক অস্ত্রের কথা তুলে লিখেছেন, তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যেন, সেগুলো কখনও ব্যবহার করতে না হয়।

চিঠির শুরুটা কূটনৈতিকভাবে শুরু হয়েছে, কিন্তু তারপরেই ট্রাম্পের ভাষা বেরিয়ে এসেছে। চিঠির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে কূটনৈতিক ভাষা আবার ফিরে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দুই জাতির মধ্যে চমৎকার আলোচনা হয়েছে এবং আলোচনার দরজা এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, কোনও একদিন, তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে বৈঠক করার ব্যাপারে আগ্রহী।

তিনজন আমেরিকান বন্দীকে মুক্তি দেওয়া সুন্দর সৌজন্যতা বলে তিনি বর্ণনা করেছেন, যাদের একজনকে শ্রম শিবিরে পাঠানোর শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে অনেক সমালোচক প্রশ্ন তুলতে পারে, এ ধরণের প্রশংসা করার জন্যে এই চিঠি উপযুক্ত জায়গা কি-না।

শেষ অনুচ্ছেদে আবার ব্যবসায়িক ভাষার ধরণ চলে এসেছে, যেখানে ট্রাম্প লিখেছেন, `আপনি যদি এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি করার ব্যাপারে মনোভাব পাল্টে থাকেন, আমাকে ফোন করতে বা চিঠি লিখতে ইতস্তত করবেন না।`

চিঠিটা শেষ হয়েছে একটি হতাশার কথা জানিয়ে। সেখানে তিনি লিখেছেন, `সারা বিশ্ব, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া, শান্তি, উন্নতি আর সমৃদ্ধির একটি বিশাল সুযোগ হাতছাড়া করলো।`

এই বৈঠকের বিষয়ে সময় আর স্থানের কথা জানিয়ে নিজের টুইটে ট্রাম্প লিখেছিলেন, এই বৈঠকটি হতে যাচ্ছে বিশ্ব শান্তির জন্য খুবই বিশেষ একটি মুহূর্ত। তার সমর্থকরা বলেছেন, তাকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া উচিত। ট্রাম্পও সেটি মেনে নিয়ে বলেছিলেন, `অনেকেই সেটা মনে করে।` আরও বলেছিলেন, `আমি যে পুরস্কার চাই, তা হল, বিশ্বের জন্য একটি বিজয়`।

তবে তার বদলে এখন তাকে লিখতে হচ্ছে, বৈঠক বাতিল হওয়ায় `ইতিহাসের জন্য একটি দুঃখজনক অধ্যায়।`

সূত্র: বিবিসি

একে//