ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

স্মৃতিচারণ:

মেট্রিকে থার্ড ক্লাস পাওয়া ছেলেটাই আজ সফল উদ্যোক্তা

প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ২৫ মে ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০২:০৫ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

সৈয়দ নুরুল ইসলাম

সৈয়দ নুরুল ইসলাম

বন্ধু প্রফেসর তাহের ক`দিন আগে ফোন করে বলল, দোস্ত তোকে ২৪ তারিখ দূপুর ৪ টায় আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে। কারণ জানতে চাইলে বলল, এমবিএ কোর্সে নবাগত ছাত্র ছাত্রীদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে একজন উদ্যোক্তা হিসাবে কিছু বলতে হবে। বন্ধুর অনুরোধে না করতে পারিনি।মনে মনে ভাবলাম হয়ত ছোট খাট কোন অনুষ্ঠান। উপস্থিত থেকে বন্ধু তাহেরকে খুশী করব।

বৃহস্পতিবার ঠিক চারটায় সাউথইস্ট এশিয়া ইউনিভার্সটির অডিটোরিয়ামে হাজির হয়ে দেখি আমার নামের সাথে লেখা প্রধান অতিথি। উপস্থিত  আছেন ভিসি সাহেব,রেজিস্ট্রার সাহেব,আইবিএর একজন সিনিয়র প্রফেসর,বন্ধু প্রফেসর তাহের। আরো উপস্থিত শ`দুয়েক এমবিএর ছাত্র ছাত্রী।সবার সামনে  আমাকে কথা বলতে হবে সবার শেষে।কথা বলতে  আমি কখনো ভয় পাইনা।কিন্তু এত্ত এত্ত ইন্টেলেকচুয়ালদের সামনে কথা বলতে হবে দেখে কিছুটা ভাবনায় ছিলাম।কিন্তু কথা বলতে দাঁডাতে দেখি উপস্থিত ছাত্র ছাত্রীরা নড়ে চড়ে বসছে।

তৃতীয় শ্রেনীতে মেট্রিক পাশ, দ্বিতীয় শ্রেনীতে উচ্চ মাধ্যমিক,সম্মান ডিগ্রীসহ মাস্টার্স করা একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে এ`ধরণের একটি একাডেমীক সেশনে কথা বলার সুযোগ দানের জন্য বন্ধু তাহেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আশির দশকে শূন্য হাতে শুরু করা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠা একজন তরুণ কিভাবে ৩০ বছরে ২৫ হাজারের উপর মানুষের কর্ম সংস্থানের ঠিকানা হতে পারে। যখন তার গল্প বলতে শুরু করলাম তখন দেখি চারিপাশে পিনপতন নিরবতা।

....আমি স্বপ্ন দেখি নির্ঘুম রাতে আর সেই স্বপ্নের পেছনা ছুটে চলি,একটি স্বপ্ন পুরণ হতেই নতুন স্বপ্ন  আবার স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা...কখন যে রাত জেগে দেখা সেই সব স্বপ্নের পিছনে ছুটতে গিয়ে ৩০ টি বছর চলে গেল বুঝতেই পারিনি...এভাবেই তোমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে রাত জেগে  আর সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে হবে  আর একটি স্বপ্ন সৃষ্টির লক্ষে।

....জীবনে এমন একটি গল্প বানাও যে গল্প শুনে তোমাদের পরবর্তী প্রজন্ম নতুন গল্প বানানোর স্বপ্ন দেখবে...। এমবিএ শেষ করে চাকুরীর খোজে ছুটাছুটি নাকরে নিজে চাকুরী সৃষ্টির চেষ্টা করো....

১৭ মিনিট কথা বলে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্টেজ থেকে নামতে গেলে ঘিরে ধরল বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী।একজন জানতে চাইল, ‘স্যার  আপনি কি সত্যি সত্যি মেট্রিকে তৃতীয় শ্রেনীতে পাশ, না   আপনার গল্প বলতে গিয়ে মজা করেছেন।’ হাসতে হাসতে বললাম, না মোটেই মজা করিনি। সর্বমোট ৫৮৬ নাম্বার পেয়েও অংকে পেয়েছিলাম ২৩। এর সাথে ১০ গ্রেস মার্কস যোগ পাশ মার্ক ৩৩ করে  আমাকে তৃতীয় শ্রেনীতে পাশ দিয়েছে কুমিল্লা বোর্ড ।  আমাদের সময় কোন সাবজেক্টে গ্রেস মানেই থার্ড ডিভিশন।

আমি সত্যি সত্যি তৃতীয় শ্রেনীতে মেট্রিক পাশ।

লেখক: সৈয়দ নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী (ওয়েল  গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ)