ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

প্রকাশিত : ১০:২০ পিএম, ২৫ মে ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১০:১৭ এএম, ২৬ মে ২০১৮ শনিবার

রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে আর মাত্র সপ্তাহ তিনেক বাকী। এরই মধ্যে ফুটবল জ্বরে কাপতে শুরু করেছে গোটা বিশ্ব। যার ছোঁয়া থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। দেশের অভ্যন্তরে তাই ফুটবল জ্বরের সে উত্তাপ গিয়ে পড়েছে দর্জি কারিগরদের ওপরও। কারিগররা এখন ফুটবল প্রেমিদের শক্তিধর দুই মেরু আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত।

আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পাশাপাশি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩২ দেশের বিভিন্ন সমর্থকরা ওড়াবেন পছন্দনীয় দলের পতাকা। পতাকাগুলো শোভা পাবে বাড়ির ছাদ, উঠান, রাস্তা, বাজার, মার্কেট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদ, অফিস ও বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু শুধু পতাকা দিয়েই কি সাড়া? প্রিয় দেশের প্রিয় তারকার জার্সি গায়ে পরে ফুটবল বিশ্বকাপ না মাতানো পর্যন্ত চলবে এই প্রতিযোগিতা।

রাজধানীর কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন কারখানায় সরেজমিন দেখা যায়, এ এলাকার কারখানাগুলোতে কারিগরদের এখন নাওয়া, খাওয়া, ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের সমর্থকদের কথা মাথায় রেখেই জার্সি ও গেঞ্জি তৈরীতে এখন মহাব্যস্ত কারিগররা। দিনরাত সমান তালে তারা কাজ করছেন। তবে বেশি তৈরী করা হচ্ছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পর্তুগাল, জার্মানী ও স্পেনের জার্সি ও প্যান্ট। কারখানায় জার্সি ও প্যান্টের জন্য প্রথমেই কাপড় এনে তা কেটে করা হচ্ছে প্রিন্ট। প্রিন্ট শেষে তা চলে যাচ্ছে ডিজাইন কারিগরের কাছে।

তিনি ডিজাইন শেষ করলেই তারপর তা চলে যাচ্ছে কারখানায়। সেই ডিজাইন অনুযায়ী কেউ জার্সি তৈরী করছেন, কেউ তৈরী করছেন প্যান্ট। তারপর তা কেউ প্যাকেটজাত করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন শো রুমে। এভাবেই কয়েক স্তর পেরিয়ে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক জার্সি। সব শেষে এসব জার্সি ও প্যান্ট চলে যাচ্ছে দেশ ছাড়াও বিদেশের মাটিতে।

জানা যায়, এসব জার্সি তৈরীতে প্রায় ছয় মাস আগেই থেকেই প্রস্তুতি চলছে তাদের। প্রথমে জার্সি ও প্যান্টের জন্য ওয়েবসাইডে সার্চ দেয়া, তারপর তা বাছাই, ডিজাইন নামানো, সেই অনুপাতে কাপড়ের অর্ডার, কাপড় কেনা। এসব পোশাক চায়না ও বাংলা কাপড়ে তৈরি। মানসম্মত এসব জার্সি ও প্যান্ট খুবই উন্নত মানের বলে কারিগরদের দাবি।

রাবেয়া গার্মেন্টস কারখানার কাটিং মাস্টার রাজিব জানালেন, সে সাত বছর ধরে এ কাজ করছে। তাদের এ কাজ করতে হয় সারা বছরই। কেননা তারা গোটা বছরই জার্সি ও প্যান্টের কাজ করেন। এ পেশাটা কোন মৌসুমী পেশা নয় তাদের কাছে। একই কারখানার কারিগর জাহাঙ্গীর আলম জানান, তারা দিনরাত কাজ করছেন। কারণ একটাই, তাদের বিশ্বকাপের আগের রাতেই সব কাজ শেষ করতে হবে। তারপর আবার অন্য কোন টার্গেট। চাহিদা ব্যাপক থাকায় তারা এখন কেউ কেউ ওভার ডিউটিও করছেন। এবার ফুটবল বিশ্বকাপের এ বড় আয়োজনের জন্য প্রায় অর্ধ লাখের বেশি জার্সি ও প্যান্ট তৈরির টার্গেট তাদের। তারা ইতোমধ্যেই পঁচিশ হাজারের বেশি পোশাক দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করেছে। তাদের পোশাকের মান ও ফিনিশিং ভাল হওয়ার দরুন এসব জার্সি ও প্যান্ট দেশের মাটি পেরিয়ে কোরিয়া ও জার্মানীতে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রতন শেখ জানান, তাদের এ কারখানায় প্রতিদিনই কাজ চলছে। এজন্য ৭০ জন কারিগর একসঙ্গে কাজ করছে। এবার ব্যাপক চাহিদার জন্য তারা হিমসিম খাচ্ছেন। তাদের জার্সি ও প্যান্ট রাজধানীর বিভিন্ন স্পোর্টসের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদাও অনেক। তারা যা তৈরি করেন তা খুবই ভাল মানের। এক পিচ পোশাক তারা বিক্রি করেন হাজার বারশ টাকায়। তবে এবার আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পোষাকই বেশি বিক্রি হচ্ছেন তারা।

তিনি আরও জানান, আর্জেন্টিনার জন্য তারা ৩০ হাজার ও ব্রাজিলের জন্য ২০ হাজার পিচ জার্সি তৈরী করছেন। বাকী সব অন্যান্য দেশের জন্য। বাকী ১৫ দিন। ইতোমধ্যেই অর্ধেকের বেশি জার্সি ও প্যান্ট তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছেন।

কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ, কালিগঞ্জের নুরু মার্কেট ছাড়াও বাড্ডা, গুমদা, বঙ্গবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এসব পোশাকের কারখানায় পুরো দমে কাজ চলছে। এসব পোশাক তৈরির পরই তা চলে যাচ্ছে সরাসরি দোকানে। সেখানেই দোকানিরা পাইকারী দরে বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন খুচরা দোকানিদের কাছে।

গুলিস্তান ও বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা গেছে, একটি জার্সি বিক্রি ৯০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তারপর তা খুচরা দোকানির হাতে বিক্রি হচ্ছে চারশ থেকে পাঁচশ টাকায়। তবে গুলিস্থান ও বঙ্গবাজারের যেসব কাপড় পাওয়া যাচ্ছে তার মান তেমন একটা ভাল নয় বললেই চলে।

বঙ্গবাজারের মেহেদী গার্মেন্টসের মালিক মেহেদী হাসান জানালেন,তারা এবার প্রায় ৭০ হাজারের মত ফুটবলের পোশাক তৈরির টার্গেট নিয়েছেন। ইতোমধ্যেই অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়েছে। এখনও কাজ চলছে।

আরকে//