ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

কোটার প্রজ্ঞাপন এখনও জারি না হওয়া দু:খজনক: শামীম রেজা

প্রকাশিত : ০৭:২০ পিএম, ২৬ মে ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১০:৪৫ এএম, ২৯ মে ২০১৮ মঙ্গলবার

শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। সরকার প্রধানের ঘোষণার এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়াটা দু:খজনক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামীম রেজা

একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দেশের কয়েক কোটি মানুষ মনস্তাত্ত্বিকভাবে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। তাই একে অবহেলা করা বা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি মনে করেন, কোটা পুরোপুরি বাতিল করা বা বিলুপ্ত করা আমাদের এ বাস্তবতায় সম্ভব নয়। এটি সংস্কার-ই করতে হবে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক আলী আদনান। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো-

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার পরও এখনও কোটার বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন আসেনি। শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলনে আছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?

ড. শামীম রেজা: কোটার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন না আসার কারণটা বাইরের কারো পক্ষে জানা সম্ভব না। প্রজ্ঞাপন জারি করা, প্রজ্ঞাপনের বিষয় ঠিক করা, পুরোটাই সরকারের বিষয়। এখানে অনুমাণনির্ভর কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সাধারণত যেটা আশা করি, প্রজ্ঞাপনের নূন্যতম যে সময় সে সময়ের মধ্যেই কাজগুলো করা উচিত। কোটা সংস্কারের যে দাবি, তা অন্য দশটা ইস্যুর মতো নয়। এই দাবি এতোটাই যৌক্তিক ও জরুরি ছিল যে, শিক্ষার্থীদের দাবি উপলব্ধি করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়াটা দু:খজনক। তবে আমরা আশা করছি দ্রুত এ প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রধানমন্ত্রী নিজে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্রদের কোটা কত শতাংশ রাখা হবে তা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক দরকষাকষি চলছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন ১৫% এর বেশি কোটা নয়। সরকার বলছে ২৫%। পুরো বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

ড. শামীম রেজা: বিষয়টাকে আমি দরকষাকষি হিসেবে দেখিনা। আন্দোলনকারীরা প্রথম থেকে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে এসেছে। কখনো এর বিলুপ্তি চায়নি। জনপ্রশাসন সংক্রান্ত সংস্কার কমিটি বা এর আগে এ বিষয়ে যারা কাজ করেছেন সবগুলোতেই কিন্তু কোটা সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার কমিটিও হয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে। তারা কেউই এটা বিলুপ্তি কথা বলেনি। সময়ের সাপেক্ষে কোটার সংখ্যাটা যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছিল বিভিন্ন সময়। এখানে `সময় উপযোগী` সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ‘সময় উপযোগী’ হচ্ছে এক্ষেত্রে সেটাই, আগে যাদের জন্য কোটা রাখা হয়েছিল ইতোপূর্বে তারা কী পরিমাণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে, কী পরিমাণ আসছে বা কী পরুমাণ আসার সম্ভাবনা আছে সেটাকে বিবেচনায় আনা। অন্যদিকে যারা কোটার আওতায় ছিল না তাদের আগের সংখ্যা কতো ছিল, এখন কেমন সবকিছুকে বিবেচনায় এনে সংস্কার করতে হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও (বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ) কিন্তু একই দাবি করেছে।

এবার আসা যাক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিষয়ে। তাঁর ভাষণে তিনটি দিক ছিল। এক, প্রাথমিকভাবে সব ধরণের কোটা বিলুপ্ত করা হবে। সংসদে এই বক্তৃতাটা তিনি এক বিশেষ পরিস্থিতিতে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রধান। তার সেই অধিকার আছে ঘোষণা দেওয়ার। অনেকক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রজ্ঞাপনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। একই বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন, যদি মনে হয় কোটা রাখার দরকার আছে তাহলে, মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব দিয়ে আমি যে কমিটি করে দিয়েছি তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার তৃতীয় বিষয়টি ছিল, উপজাতি ও প্রতিবন্ধীসহ অন্য যারা অধিকার বঞ্চিত বা সুবিধাবঞ্চিত আছে তাদের জন্য তিনি কোটা সংরক্ষণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, ‘কোনো কোটাই থাকবে না’। আমি মনে করি সেটা এক বিশেষ পরিস্থিতিতে তিনি বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাটা ভালো করে বুঝলে আমরা ধরে নিতে পারি যে, কোটা থাকবে। তবে আগের মতো করে নয়। সময় ও বাস্তবতা অনুযায়ী একটা পুণর্বিবেচনা অবশ্যই করা হবে।

আরেকটি ব্যাপার হলে `দরকষাকষি` যেটা বললেন, সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। প্রথমদিকে যা হয়েছে প্রকাশ্যে হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। তাদের দাবিগুলো গণমাধ্যমে এসেছে। তবে এখন কী হচ্ছে বা কিসের ভিত্তিতে দরকষাকষি তা আমরা অবগত নই। প্রজ্ঞাপন জারি হলে আমরা বুঝতে পারতাম সরকার কী চাচ্ছে, কীসের ভিত্তিতে চাচ্ছে, বা এর যৌক্তিকতা কী। এখনও বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শেষ পর্যন্ত কোটা সংস্কার বা বাতিলের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?

ড. শামীম রেজা: স্পষ্টভাবেই বলা হচ্ছে `কোটা` বিষয়টা শুধুমাত্র সরকারি চাকরীর জন্য প্রযোজ্য। সংস্কার মানে বাতিল না। এটা যুগপোযোগী করণ বা হালনাগাদকরণ করার দাবি উঠে এসেছে। আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে কোটা কখনোই এভাবে বাতিল হয় না। আমরা এখনও ওই পর্যায়ে পৌঁছাই নি যে, কোটা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো যারা কোটা বাতিল করেছে তারা কেউ এটা রাতারাতি করতে পারেনি। পৃথিবীর শীর্ষ ধনী রাষ্ট্রগুলো কারো না কারো জন্য কোনো না কোনোভাবে কোটা সুবিধা রেখেছে। আমাদের আজকের যে বাস্তবতা, নি:সন্দেহে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। ৭০- এর দশকে আমাদের কোটার যে চাহিদা ছিল ৮০-৯০ দশকে তেমন ছিল না। আজকের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্নাতক তৈরী হওয়ার প্রক্রিয়া, স্নাতকের সংজ্ঞা, অর্থনৈতিক মাপকাঠি, আমাদের জনজীবনের মান- সব মিলিয়ে একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আমরা দেখি আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামিজিক জীবনে। তারপরেও কোটা পুরোপুরি বাতিল করার পর্যায়ে আমরা পোঁছাইনি। কোটা লাগবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোটা বাতিল না করে সংস্কারের পক্ষে আপনার যুক্তি কি ?

ড. শামীম রেজা: নারী কোটা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটাসহ নানা কোটা প্রয়োগের ইতিবাচক ফল আমরা ইতোপূর্বে পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়, জনপ্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ সর্বক্ষেত্রে আজ নারীর অংশগ্রহণ আছে। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, নারীরা হয়তো ব্যবস্থাপনায় আছে। কিন্তু সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। সেই বিবেচনায় নারী কোটা বিলুপের কোনো যুক্তি নেই। এবার আসুন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বেলায়। কোনো কোনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হয়তো বেশী সুবিধা পেয়েছে। কোনো কোনো জাতিগোষ্ঠী তার এলাকায় স্কুল - কলেজ থাকার কারণে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছে। তারা এখন দেশের শীর্ষ পদগুলোতে কেউ কেউ কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আবার অনেকে স্কুলে যাওয়ার সুযোগটুকুও পায়নি। তারা এখনো সেই ভয়াবহ পিছিয়ে পড়া অবস্থায়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও আবার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে। যারা বছরের পর বছর নূন্তম প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আসতে পারেনি। তাই আমি বলব, ওই (উপজাতি) কোটার মধ্যেও কোটার বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা আছে। অর্থাৎ আগে যেমন আমরা সমান্তরালভাবে সব উপজাতিকে একচোখে দেখতাম তার আর সুযোগ নেই।

আবার ধরুন জেলা কোটা। আজকের দিনে হয়তো জেলা কোটার দরকার নেই। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্টীকে আপনি কীভাবে অস্বীকার করবেন? আবার প্রান্তিকের মধ্যেও অনেকগুলো শ্রেণী আছে। প্রান্তিকের মধ্যেও প্রান্তিক আছে। মৎস্যজীবী সম্প্রদায়, তাদের মধ্যেও শ্রেণী আছে। এদের অনেকেই একেবারে সহায় সম্বলহীন। কেউ কেউ পড়ালেখার শেখার সুযোগ পেয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছে এটা যেমন সত্য তেমনি সহায় সম্বল কপর্দকহীন অবস্থায় কয়েক পুরুষ পার করছে-এমন সংখ্যাও কম নয়।

প্রতিবন্ধী বলতে একসময় আমরা বুঝতাম দৃষ্টি প্রতিবন্ধি বা শ্রবণ প্রতিবন্ধি। কিন্তু এখন প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে গেছে। আজকের দিনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও সুযোগ দাবি করছে। অর্থাৎ ঢালাওভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। এজন্যই আমি মনে করি, বাতিল নয় কোটা সংস্কার প্রয়োজন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কিন্তু সবচেয়ে বড় বিতর্কটা দেখা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংখ্যা নিয়ে।

ড. শামীম রেজা: একটা দেশের স্বাধীনতা রচিত হয় ওই দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে। তারা বাড়তি সুবিধা পাওয়াটা স্বাভাবিক। এটা নির্ভর করে একটা সোশ্যাল কন্ট্রাক্টের উপর। বিষয়টাকে যদিও রাজনীতিকীকরন করা হচ্ছে, কিন্তু এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক ও না। আবার সামাজিকও না। এটা পুরোপুরি সমন্বয়ের ব্যাপার। আমাদের নাগরিক সমাজ ও মানবিক সমাজের দিক থেকেও প্রস্তাবটা আসা উচিত যে, আমরা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেব। এ বিষয়ে একটা বৃহৎ আলোচনার দরকার ছিল। কিন্তু আলোচনাটা আমরা করিনি। এখন সরকার একটা অবস্থানে আছে। সরকারের জায়গা থেকে একটা প্রস্তাব করেছে। যেটা পুণর্বিবেচনার দাবি রাখে সেটা হলো গত এক বা দুই দশকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো থেকে কী পরিমান সদস্য সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে। আগামীতে কী পরিমাণ সদস্য নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাদের জীবনমান কেমন। বাস্তবতার নিরিখে তারা চাকরি পাওয়ার কতটুকু দাবিদার এসব পুণর্বিবেচনার দাবি রাখে।

বছরের পর বছর ঢালাওভাবে যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা পুণর্বিবেচনার দাবি উঠেছে মাত্র। আর আমি বলব, কোটা বিলোপের সময় এখনো আসেনি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনকে কেউ কেউ রাজনৈতিক রূপ দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, সরকারকে বিব্রত করার জন্য বা সরকার পতনের জন্য এ আন্দোলন। আপনি কী বলবেন?

ড. শামীম রেজা: রাজনৈতিক বক্তব্যগুলোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় কিছু বলা কঠিন। যেকোনো আন্দোলন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে তার ভিন্ন অর্থ হতে পারে। ১০০ লোকের জমায়েতকে একজন রাজনীতিবিদ যেভাবে দেখবেন, আপনি- আমি কিন্তু সেভাবে দেখবো না। একশ’ শিক্ষার্থীকে একজায়গায় আমি দেখলে ভাবব, এটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু রাজনীতিবিদরা সেটার অন্য রকম ব্যাখ্যা খুঁজবেন। আবার একই দৃশ্য শাহবাগ মোড়ে দেখলে পুলিশ অন্য রকম ব্যাখ্যা করবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনটি শাহবাগে গণজাগরন মঞ্চের আন্দোলনের মতো না। শিক্ষকরা বেতনের দাবিতে যে আন্দোলন করল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভ্যাট বিরোধী যে আন্দোলন করলো এটি (কোটা আন্দোলন) সেসব আন্দোলনের মতোও না। মনে করা হচ্ছে, অধিক কোটার কারণে সমান সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে না। এই আন্দোলনের মূল মর্মার্থ হচ্ছে চাকরী জীবনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পথ মসৃণ করা।

আমাদের দেশে একজনের চাকরীর উপর অনেককে নির্ভর করতে হয়। তার মানে যারা চাকরি করছে বা করবে- অর্থাৎ যারা কোটা আন্দোলনকারী তারা তাদের পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছে। প্রত্যেক আন্দোলনকারীর পেছনে আছে তার পরিবারের। পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে আছে আরও অনেকগুলো পরিবার। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে কয়েক কোটি লোক এ আন্দোলনের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিকভাবে জড়িত। একটা আন্দোলনে যদি কারো সম্পৃক্ততা তৈরী হয়, তখন কেউ না কেউ সেটাকে তার প্রতি হুমকি মনে করতেই পারে। আন্দোলনকারীদের যে যৌক্তিক দাবি, তা রাজনীতিবিদরা কখনও অগ্রবর্তী হয়ে চিন্তা করেননি। তাছাড়া সরকার পতনের বিষয়টা তো এতো সহজ না। আমরা এতো সহজ ভাবে দেখি কেন? আমি মনে করি, তরুণদের বক্তব্য শোনা উচিত। তবে হ্যাঁ, এটাও সত্যি একটা বড় আন্দোলন হলে তার সুবিধা নিতে কে না চায়? একটা বড় জমায়েত যখন দীর্ঘদিন টিকে যায় তখন অপরাজনীতি তো আছেই, সুবিধাভোগীরাও তার সুবিধা নিতে তৎপর হয়। বিরোধী রাজনীতির কাজ সুবিধা গ্রহণ করা। তারা সে চেষ্টা করলেও করতে পারে। সেজন্য উচিত, আগেভাগেই তাদের দাবিগুলো শোনা। আলাপ আলোচনা করা। কে অপরাজনীতি করতে চায়, কে সুবিধা নিতে চায় সে দায়ভার তো আপনি আন্দোলনকারীর উপর চাপাতে পারেন না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ৯০ পরবর্তী সময়ে আমরা সম্প্রতি তরুণদের বেশ কয়েকটি আন্দোলন দেখলাম ও দেখছি। গণজাগরন মঞ্চের আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বাড়ানোর আন্দোলন। আন্দোলনমুখী প্রজন্মকে আপনি কীভাবে মূল্যায়িত করবেন?

ড. শামীম রেজা: ৯০’র আন্দোলন আর আজকের আন্দোলনগুলোকে আমি এক মাত্রায় দেখিনা। সব আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে দেখার প্রয়োজন নেই। কিছু কিছু আন্দোলন আছে সামাজিক আন্দোলন। আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা হচ্ছে আন্দোলন মানে রাজনৈতিক আন্দোলন, এ ধারণা ভুল। আন্দোলন সামাজিকও হতে পারে। সাংস্কৃতিকও হতে পারে। বিশেষ কোনো পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন হতে পারে। তরুণদের ভূমিকা বা তারুণ্যের মূল্যায়ন নির্ভর করে ওই সময়ের নিরিখে। এই প্রজন্ম যদি ৬০- এর দশকে জন্মা তো তাহলে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করতো। গনঅভ্যুথান করতো। মুক্তিযুদ্ধ করতো। তরুণদের মূল্যায়ন করতে হবে তাদের আজকের চাহিদা থেকে। প্রসঙ্গ এসে যায়, আমি তরুণদের কী পরিবেশ দিয়েছি। আমি তাকে কেমন শিক্ষা দিয়েছি, তার বিকাশের কেমন সুযোগ দিয়েছি, কতটুকু অধিকার সে ভোগ করতে পারছে। আজকের তরুণরা দেশ বা অঞ্চলের সন্তান না। বিশ্বের সন্তান। তাদের চিন্তার জায়গাটা অনেক উঁচুতে। একটা বিষয় ভাবতে হবে। এই প্রজন্মকে কিছুদিন আগে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একীভূত হতে বলেছি। তারা সে ডাকে সাড়া দিয়ে একীভূত হয়েছে। যাদের বয়স ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে তারাই আমাকে একাধিক নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস লিখিত হচ্ছে তার পাঠক তারা। পুরনো যে জাগরনকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছি তাতে তারা সমর্থন দিচ্ছে। সেই তরুণ যখন তার অধিকার ও চিন্তার জায়গা থেকে আওয়াজ তোলে তখন কেন তাকে অন্যরকম ভাবব? তরুনরা তো ভোট ব্যাংক না। তরুনতো শুধু ভোট দেওয়ার জন্য না। আপনি তরুণের কথা শুনবেন সেই প্রত্যাশাতেই সে আপনির সঙ্গে একীভূত হয়েছে। তাই তরুনদেরকে আমার প্রতিনিধি না ভেবে কালের প্রতিনিধি ভাবা উচিত।

/ এআর /