ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক বন্ধু শাহ আলম হাওলাদার   

শেখ আরিফুজ্জামান   

প্রকাশিত : ১০:৪৩ পিএম, ২৭ মে ২০১৮ রবিবার

‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু...’। মানবিকতাকে জাগিয়ে তুলতেই যেন কালজয়ী গানটি গেয়েছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী ভূপেন হাজারিকা।   

প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে হাজার মাইল দূরে যে বাংলাদেশিদের বসবাস, দূর থেকে দেখলে মনে হবে প্রবাসিরা যা করছে সবই বুঝি তার নিজের ও পরিবারের জন্য। অধিকাংশের বেলায় হয়ত তা সত্য, তবে কারো কারো বেলায় নয়। দূর প্রবাসে থেকেও অসহায় প্রবাসিদের সাহায্যে কিছু একটা করার তাগিদ নিয়ে ছুটে চলেন মালয়েশিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তেমনই একজন মালয়েশিয়া প্রবাসি বাংলাদেশি শাহ আলম হাওলাদার। অসহায় শ্রমিকের সাহায্যার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।   

জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার গ্রামের আব্দুল জলিল হাওলাদারের একমাত্র ছেলে। জীবিকার তাগিদে ২৫ বছর আগে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। জীবনে চলার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজ তিনি সকলের পরিচিত মুখ। অসহায় প্রবাসি শ্রমিকদের আস্থার অপর নাম শ্রমিক নেতা শাহ আলম হাওলাদার।   

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে রাজনৈতিক পরিচিতি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে তিনি শ্রমিক নেতা শাহ আলম হাওলাদার হিসেবে বেশি পরিচিত। বন্ধুত্বপূর্ণ অমায়িক আচরণ। কোনো হামবড়া ভাব নেই।  খুব সরাসরি কথা বলেন আর জ্ঞানের গভীরতা অনেক। 

শ্রমিকদের পাসপোর্ট সমস্যা থেকে শুরু করে অসহায় শ্রমিক, গুরুত্বর অসুস্থ্, দুর্ঘটনায় আহত,নিহত শ্রমিকের লাশ দেশে পাঠাতে বা যেকোনো সমস্যার কথা শুনলেই তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আর এ জন্য মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই-কমিশন তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার পাশাপাশি দলীয় নেতৃবৃন্দ সহযোগিতা করে থাকেন। 

তিনি বলেন, মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, স্নেহমায়া মমতা। সেটা হোক পাশের বাড়ির কিংবা হাজার মাইল দুরের কোনো অপরিচিত ব্যক্তির। তাদের যদি আমরা কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারি, তবেই আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার একটা সংস্কৃতি তৈরি করতে পারব। যেখানে থাকবে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা-সম্মান। আর আমার সামান্য সহযোগিতায় যদি মানুষের উপকার আসে তাহলেই আমার স্বার্থকতা।   

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে জানা যায়, শুরুটা সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। যখন মালয়েশিয়ার মাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বলতে কিছু নেই ঠিক তখনই গঠন করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’।  বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আহাদ জামালের নেতৃত্বে হাতেগোনা কয়েকজনের উদ্যোগে এই সংগঠনটি গড়ে তোলা হয় প্রবাসি বাংলাদেশি শ্রমিকদের সাহায্যার্থে। তার মধ্যে তিনি একজন। দায়িত্ব পান প্রচার এবং প্রকাশনা সম্পাদকের। এরপর ধীরে ধীরে এখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের জন্ম। 

শাহ আলম হাওলাদারের ইচ্ছা ছিল প্রবাসি বাংলাদেশি শ্রমিকদের সাহায্যার্থে কাজ করার। এ জন্য তিনি শ্রমিক লীগে যোগদান করেন । রাজনীতির হাতে খড়ি ছাত্র জীবন থেকেই শুরু । এরপর শুধুই পথ চলা, প্রথমে মহিষার ইউনিয়নের জয়েন্ট সেক্রেটারি, ৯০ দশকে বৃহত্তর সিলেট জেলা দোকান কর্মচারি শ্রমিক লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি, ১৯৯৫ সালে মালয়েশিয়াতে বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রচার এবং প্রকাশনা সম্পাদক, ২০১৫ সালে মালয়েশিয়াতে শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলে তিনি যুগ্ম আহ্বায়কের পদ লাভ করেন।  এরপর ২০১৬ সালে শ্রমিক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে তিনি সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। 

মূলত মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আহাদ জামালের অনুপ্রেরণায় তিনি আত্মমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।   

এসি