ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৫ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ৩০ ১৪৩১

ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেলেন বাস্তবের স্পাইডারম্যান!

প্রকাশিত : ০৭:৪৭ পিএম, ২৮ মে ২০১৮ সোমবার

নিজের দেশ ছেড়ে মাত্র মাস কয়েক আগে ফ্রান্সে আসেন মামোউদোউ গাস্সমা নামের এক যুবক। সেই দেশের একটি শিশুকে বহুতলের বারান্দা থেকে ঝুলতে দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি এই আফ্রিকান তরুণ। রাস্তায় জমে যাওয়া ভিড়ের অন্যরা যখন দমকলে ফোন করা ছাড়া আর কী করা যেতে পারে বুঝতে পারছেন না, তখন নিজের জীবন বিপন্ন করে দেওয়াল বেয়ে চারতলায় উঠে পড়েন ওই তরুণ। উদ্ধার করে আনেন শিশুটিকে। অসাধারণ এই উদ্ধারকাজের ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই অঞ্চলের মেয়র। এমনকি বাহাবা পেয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকেও।

গত রোববার উত্তর প্যারিসে বড় রাস্তার ধারে একটি বহুতলের চারতলার ব্যলকনি থেকে একটি ছোট্ট শিশুকে ঝুলতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন পথচারীরা। কোনোরকমে বারান্দার রেলিং আঁকড়ে রয়েছে শিশুটি। কিন্তু যে কোনো মুহূর্তে হাত পিছলে গিয়ে নীচের রাস্তায় আছড়ে পড়তে পারে সে। আশঙ্কা ও উত্তেজনায় রাস্তায় জমে যাওয়া মানুষজন তখনই ফোন করেন দমকলে।

এরমধ্যেই সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় ভিড় দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন পশ্চিম আফ্রিকার মালি থেকে কাজের সন্ধানে প্যারিসে আসা মামোউদোউ। এই দৃশ্য দেখে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করেননি তিনি। অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় খালি হাতে কারোর সাহায্য ছাড়াই ব্যালকনি বেয়ে উঠতে থাকেন তিনি।

নীচে উত্তেজিত জনতার চিত্‍কার, ওপরে আতঙ্কিত শিশুর কান্না- সব ভুলে তার তখন একটাই লক্ষ্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই শিশুর কাঁছে পৌঁছনো। সেই কাজে খুব একটা দেরি হয় না তার। ভিডিওটি সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মামোউদোউকে স্পাইডার ম্যান খেতাব দিয়েছেন অনেকে।

ছবিতে দেখা যায়, পাশের ব্যালকনি থেকে আরও দু-জন শিশুটির হাত ধরার চেষ্টা করেন। দমকল যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, ততক্ষণে চার বছরের ছেলেটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন মামোউদোউ।

এই সাহস ও শারীরিক সক্ষমতার জন্য ২২ বছরের তরুণকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্যারিসের মেয়র অ্যানি হেডালগো। প্যারিসে যাতে উপযুক্ত চাকরি পেতে তার কোনও সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেয়র।

এরপর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্মানুয়েল ম্যাক্রোঁ তাকে এলিসি প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান এবং ঘোষণা করেন যে, গাসামাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

পাশাপাশি তাকে একটি পদক দেওয়া হয় এবং ফরাসি দমকল বাহিনীতে তাকে চাকরি দেওয়া হবে বলে বলা হয়।

নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে শিশুটিকে রক্ষা করার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগতভাবেও তাকে ধন্যবাদ জানান।

জানা গিয়েছে ঘটনার সময় শিশুটির মা ছেলেকে বাবার কাছে রেখে প্যারিসের বাইরে গিয়েছিলেন। ছেলেকে একলা রেখে কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়েছিলেন তারা বাবা। এত ছোট বাচ্চাকে একলা রেখে যাওয়ার অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

এসএইচ/