নির্বাচন প্রসঙ্গে মাশরাফি
আমি কিছুই জানি না, বলতেও চাই না
প্রকাশিত : ১০:৪১ এএম, ৩০ মে ২০১৮ বুধবার
গতকাল মঙ্গলবার সাবেক বিসিবি প্রেসিডেন্ট ও পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এক তথ্যে ক্রিড়াঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয় মাশরাফি-সাকিব কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে। অনেকে বলছেন ভারতের কিংবদন্তী ক্রিকেটাররা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারলে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে যারা বিশ্ব দরবারের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তারা কেন পারবেন না? কেউ কেউ দ্বিমতও পোষণ করছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে ক্রিকেট বর্তমানে এদেশের মানুষের একটি আবেগেরও জায়গা। এটিই একমাত্র ক্ষেত্র যেখাবে জাতীয় ঐক্যমত্য সম্ভব। সবাই ক্রিকেট ভালোবাসে। ক্রিকেটাররা যদি রাজনীতিতে জড়িয়ে যান তবে ক্রিকেটের প্রতি এক ধরনের অনীহা চলে আসতে পারে।
গতকাল পরিকল্পনা মন্ত্রী ঘটা করেই জানান দেন দেন, দেশের দুই শীর্ষ ক্রিকেট তারকা ও জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং সাকিব আল হাসান এবার আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে সাকিবের বিষয়ে তিনি একটু রাখঢাক করে বললেও, মাশরাফির বিষয়টি একদম খোলামেলা করে দিয়েছেন। মুস্তফা কামাল বলে দিয়েছেন, মাশরাফি নড়াইল থেকে নির্বাচন করবেন। তিনি ভালো মানুষ। তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী।
বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। খেলাপ্রেমী, ক্রিকেট অনুরাগী ছাপিয়ে সর্বস্তরের মানুষের কৌতূহল অভিন্ন। মুখে প্রশ্নও একটাই,‘আচ্ছা! মাশরাফি আর সাকিব কি সত্যি সত্যি এবারই নির্বাচন করবেন?’
সবার আগ্রহ এখন সাকিব ও মাশরাফির বক্তব্য ঘিরে। কিন্তু দু’জনেই এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। সাকিবের মুঠোফোনে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মাশরাফি ফোন রিসিভ করলেও প্রথমে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন নি। পরে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেন খুবই সংক্ষেপে। বলেছেন, ‘আসলে কামাল ভাই (আ হ মুস্তফা কামাল) যা বলেছেন, সেটা তার কথা। আমি সে সম্পর্কে কিছুই জানি না।’
আওয়ামী লিগ তথা নৌকা প্রতীক নিয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচন করবেন কি না- এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মাশরাফির জবাব, ‘এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না আমি। প্লিজ আমাকে কিছু বলতে অনুরোধ করবেন না। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’
সবার জানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খেলার প্রতি অনুরাগ প্রবল। সফল ক্রিড়াবিদ, বিশেষ করে ক্রিকেটার মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক আর তামিম- চারজনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য। বিভিন্ন সময় তিনি তাদের মাতৃস্নেহে কাছে টেনে নেন। জাতীয় দলের নানা অর্জন, প্রাপ্তি ও ঐতিহাসিক সাফল্যে দেশের বাইরে মাশরাফি-সাকিবদের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেন। অনুপ্রেরণা জোগান।
তাই এটা শতভাগ সত্য যে, শেখ হাসিনার প্রতি মাশরাফি-সাকিবের রয়েছে অন্যরকম শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ভালোবাসা। আগেরদিনও মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া উপহার দেন।
বোর্ডের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নিজি মাশরাফি ও সাকিবকে এবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর কথা না বললেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাশরাফিকে নির্বাচনের মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
মাশরাফির ঘনিষ্ট সূত্রেও মিলেছে তেমন আভাস। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ইফতারেও নাকি মাশরাফিকে নির্বাচন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পেশাজীবীদের সম্মানে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে অংশ নেওয়া একাধিক ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব বলাবলি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে সত্যিই মাশরাফির নির্বাচনে দাঁড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লিগের নীতি নির্ধারক মহল থেকেই মাশরাফিকে সামনের নির্বাচনের দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
এখানে আরেকটি বিষয় আলোচনায় চলে আসছে। সেটি হচ্ছে- মাশরাফির বয়স ও সামাজিক কর্মকান্ড। ৩৪ বছর বয়সী মাশরাফির ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ। মাশরাফি ওই বিশ্ব আসর খেলতে মুখিয়ে আছেন। এখন তার ধ্যান, জ্ঞান, চিন্তা-চেতনার সবটুকু জুড়ে বিশ্বকাপ। তার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জড়িয়ে পড়তে নীতিগতভাবে রাজি নন মাশরাফি। আবার মাশরাফি নড়াইলে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডও চালিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে অনেকেই ধরে নিয়েছেন যে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের আগ্রহে শেষ পর্যন্ত এ বছরের নির্বাচনে মাশরাফি নিলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
/ এআর /