নৌবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার নিয়োগ : প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
প্রকাশিত : ০৩:১৬ পিএম, ৩০ মে ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১০:১৮ এএম, ৩১ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার
জনবল নেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ২০১৯-এ ডিইও ব্যাচে কমিশন্ড অফিসার পদে টেকনিক্যাল ও এডুকেশন কোরে এসব নিয়োগ দেওয়া হবে। এ লক্ষে সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দিয়ে যারা দেশসেবায় সরাসরি অংশ নিতে চান তাদেও জন্য এটি সুবর্ণ সুযোগ। শুধু সুযোগই নয়, নৌবাহিনীর চাকরি মানে নিশ্চিত ক্যারিয়ার। এখানে রয়েছে চোখ ধাধানো বেতন সঙ্গে রেশন। এছাড়া বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগও থাকছে মেধাবীদের জন্য। শান্তিরক্ষী মিশনেও অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই নৌবাহিনীকে চাকরি মানেই জীবনের বাঁক পরিবর্তন। প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন এখন থেকেই।
আবেদনের যোগ্যতা
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাধারণত টেকনিক্যাল ও এডুকেশন কোরে কমিশন্ড অফিসার নেওয়া হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রিক্যাল শাখায় আবেদন করতে হলে প্রার্থীকে স্বীকৃত স্বনামধন্য বা পাবলিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেভাল আর্কিটেকচার, মেকানিক্যাল বা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) হতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ লাগবে কমপক্ষে ৪.০০ আর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে লাগবে সিজিপিএ ২.৫০ (৪ স্কেলে) বা দ্বিতীয় শ্রেণি। অবিবাহিত পুরুষ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। অগ্রাধিকার পাবেন উচ্চশিক্ষাসম্পন্নকারীরা।
শিক্ষা শাখায় মনোবিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সম্মান বা সম্মানসহ মাস্টার্স ডিগ্রিধারী হতে হবে। এক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ লাগবে কমপক্ষে ৪.০০। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে লাগবে সিজিপিএ ২.৫০ (৪ স্কেলে) বা দ্বিতীয় শ্রেণি। নারী ও পুরুষ উভয় প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন এডুকেশন কোরে। অগ্রাধিকার পাবেন অভিজ্ঞরা। ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে প্রার্থীর বয়সসীমা ৩০ বছর। চাকরিরত প্রার্থীদের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
শারীরিক যোগ্যতা
নৌবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুরুষ প্রার্থীদের বেলায় দৈহিক উচ্চতা থাকতে হবে কমপক্ষে ১৬২.৫ সেন্টিমিটার বা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। ন্যূনতম ওজন হতে হবে ৫০ কেজি (উচ্চতা অনুসারে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নির্ধারিত স্কেল অনুযায়ী), বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৭৬ সেন্টিমিটার বা ৩০ ইঞ্চি আর প্রসারিত অবস্থায় ৮১ সেন্টিমিটার বা ৩২ ইঞ্চি। আর নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা থাকতে হবে ১৫৫ সেন্টিমিটার বা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি, ওজন কমপক্ষে ৪৬ কেজি, বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৭১ সেন্টিমিটার বা ২৮ ইঞ্চি এবং প্রসারিত অবস্থায় ৭৬ সেন্টিমিটার বা ৩০ ইঞ্চি।
আবেদনের নিয়ম
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ওয়েবসাইটেও www.joinnavy.navy.mil.bd বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইটটিতে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করা যাবে। আবেদন করা যাবে ২৮ জুন পর্যন্ত।
বাছাই
প্রথমে প্রার্থীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সাক্ষাত্কারের মুখোমুখি হতে হবে। পরীক্ষাটি হবে ঢাকার বিএন কলেজে ১০ থেকে ১২ জুলাই। উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। ১৩ জুলাই লিখিত পরীক্ষা হবে বুদ্ধিমত্তা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকা সেনানিবাসে ডাকা হবে আইএসএসবি পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের জন্য।
আইএসএসবিতে সফলভাবে উত্তীর্ণদের চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে ঢাকা সেনানিবাসের বিএনএস হাজী মহসীনে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন নৌবাহিনী সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রাথমিক সাক্ষাত্কার
বাংলাদেশ নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে প্রার্থীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সাক্ষাত্কার পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রার্থীর দৈহিক যোগ্যতা যেমন-উচ্চতা, ওজন, দৃষ্টিশক্তি, স্বাস্থ্য ও শারীরিক সক্ষমতা দেখা হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিনই অংশ নিতে হয় প্রাথমিক সাক্ষাত্কারে। এতে দেখা হয় বাচনভঙ্গি, ইংরেজি দক্ষতা, সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান। ইংরেজিতে নিজের পরিচয়, সাম্প্রতিক বিষয়াবলী কিংবা বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
সর্বশেষ নৌবাহিনীর কমিশন্ড র্যাংকে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের ¯œাতক আনোয়ারুল আজিম প্রস্তুতির বিষয়ে জানান, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকার পর্বে উত্তীর্ণদের অংশ নিতে হবে লিখিত পরীক্ষায়। পরীক্ষা হবে ইংরেজি, বুদ্ধিমত্তা ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর। সাধারণত এসএসসি ও এইচএসসি লেভেলের প্রশ্ন করা হয়। ইংরেজি অংশে গ্রামার থেকে প্রশ্ন হয়। সাধারণত শুণ্যস্থান পূরণ, কারেকশন, পেয়ার অব ওয়ার্ড, ফ্রেইজ অ্যান্ড ইডিয়মস, ট্রান্সলেশন, সেনটেনস মেকিং ও প্যারাগ্রাফ থাকে। বুদ্ধিমত্তা অংশে প্রবলেম সলভিং, ভারবাল রিজনিং, নিউমেরিক্যাল অ্যাবিলিটির ওপর প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকেপ্রশ্ন করা হয় সাধারণ জ্ঞান অংশে। জেনে যেতে হবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীপ্রধানের নাম, র্যাংকের ক্রমধারা, নৌবাহিনীর কার্যক্রম ইত্যাদি। সুতরাং এসব বিষয়ে বিষদ প্রস্তুতি নিতে হবে।
আইএসএসবির প্রস্তুতি
আইএসএসবিতে অংশ নেওয়া জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পড়–য়া আজমল হোসেন বলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হবে ইন্টার সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড (আইএসএসবি) পরীক্ষা ও সাক্ষাত্কারের জন্য। ঢাকা সেনানিবাসে আইএসএসবি কেন্দ্রে থাকতে হয় চার দিন। প্রথম দিন সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হয়। বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষায় দুটি অংশ থাকে-ভাষাগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। এ পরীক্ষার পর পিকচার পারসেপশন অ্যান্ড ডেসক্রিপশন টেস্টে অংশ নিতে হয়। ছবি দেখে ইংরেজিতে একটি গল্প লিখতে হয় এবং এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়। এরপর ফল ঘোষণা। টিকে যাওয়া প্রার্থীদের অংশ নিতে হয় মনস্তাত্তি¡ক পরীক্ষায়। এখানে বাংলা ও ইংরেজিতে বাক্য রচনা, বাক্য সম্পূর্ণকরণ, ছবি দেখে গল্প লিখন, অসম্পূর্ণ গল্প সম্পূর্ণকরণ ও আত্মসমালোচনা থাকে।
দ্বিতীয় দিন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর দলগত আলোচনা, বক্তৃতা এবং শারীরিক সামর্থ্যের পরীক্ষা দিতে হয়। নেওয়া হয় মৌখিক পরীক্ষাও। প্রার্থীর নিজের সম্পর্কে, পরিবার সম্পর্কেসহ নানা বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হতে পারে। এতে প্রার্থীর সাহস, আত্মবিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা, তাত্ক্ষণিক বুদ্ধি ইত্যাদি বিষয় যাচাই করা হয়। তৃতীয় দিন প্রার্থীর প্ল্যানিং ও কমান্ড টেস্ট। এর মাধ্যমে প্রার্থীর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার দক্ষতা যাচাই করা হয়।
শেষ দিন সাধারণত কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। তবে কারো যোগ্যতার বিষয়ে নির্বাচকরা সন্দিহান হলে ফের ভাইভা নেওয়া হয়। এদিন ফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচকরা মিলে প্রার্থীদের তিন দিনের কার্যক্রম পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে নির্বাচিত ও প্রত্যাখ্যাতদের তালিকা করেন। যাঁরা উত্তীর্ণ হন তাঁদের দেওয়া হয় গ্রিনকার্ড। আর যাঁরা উত্তীর্ণ হতে পারেন না, তাঁদের দেওয়া হয় রেড কার্ড। চার দিনের এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। আইএসএসবি প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে িি.িরংংন-নফ.ড়ৎম ওয়েবসাইটে।
সুযোগ-সুবিধা
ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রিক্যাল শাখায় চূড়ান্ত মনোনয়ন শেষে স্থায়ী কমিশন্ড অফিসার হিসেবে অ্যাক্টিং সাব-লেফটেন্যান্ট পদে নিয়োগ পাবেন। শিক্ষা শাখায় চূড়ান্ত মনোনয়ন শেষে অ্যাক্টিং ইনস্ট্রাক্টর সাব-লেফটেন্যান্ট পদে স্বল্পমেয়াদি কমিশনে ৫ বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন। পরবর্তী সময়ে আবেদন ও কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নিয়ম অনুযায়ী চাকরি বর্ধিত বা স্থায়ী করা হবে। নিয়োগপ্রাপ্তরা সশস্ত্র বাহিনীর বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য ভাতা পাবেন। রয়েছে দেশ-বিদেশে সরকারি খরচে উচ্চতর প্রশিক্ষণ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদান, বাসস্থান ও ডিওএইচএসে প্লটপ্রাপ্তি, বিনা মূল্যে চিকিত্সা, সন্তানদের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগসহ অনেক সুবিধা। কমিশন পাওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রিক্যাল শাখায় এককালীন ৫৯১৫০ টাকা ও শিক্ষা শাখায় এককালীন ৪২২৫০ টাকা বিশেষ ভাতা (থোক অনুদান) দেওয়া হয়।
যোগাযোগ
পরিচালক, পার্সোনেল সার্ভিসেস পরিদপ্তর, নৌবাহিনী সদর দপ্তর, বনানী, ঢাকা-১২১৩। ফোন : ০২-৯৮৩৬১৪১-৯, বর্ধিত-২২১৫ হেল্পলাইন : ০১৭৬৯৭০২২১৫ তে যোগাযোগ করতে পারেন।
/ এআর /