ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিশ্বকাপ ও ফুটবলার খুন, স্মৃতিতে এস্কোবার…

প্রকাশিত : ০২:১২ পিএম, ৩১ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

রক্তাক্ত ফুটবলারের ছবিটা এখনও দাগ কেটে যায়৷ গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন কলম্বিয়ার ফুটবলারের দেহ৷ স্তম্ভিত হয়েছিল বিশ্ব৷ দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া বরাবরই শক্তিশালী ফুটবল দল৷ তাদের দেশের এক ছিমছাম খেলোয়াড়কে আত্মঘাতী গোলের জন্য ক্ষমা করেনি পেশাদার খুনিরা৷

বিশ্ব ফুটবলের রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলির জন্য অপেক্ষা করছেন দর্শকরা৷ রাশিয়ার মাটিতে মরণ কামড় দিতে তৈরি হচ্ছে কলম্বিয়া। এ এমন এক দেশ যেখানে মাদক চালান ও খুন নিত্য ব্যাপারা৷ কিন্তু কলম্বিয়াকে ফুটবল প্রেমীরা চেনেন ‘সাদা গুলিট’ এর দেশ হিসেবে। ফুটবল ভক্তদের হৃদয়ে স্থান পেয়েছেন দুরন্ত বিচ্ছু গোলকিপার হিগুইতা৷ এদের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় আন্দ্রে এস্কোবারের নাম৷ তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রক্তাক্ত যন্ত্রণা৷ তেমনই স্মৃতি নিয়ে ফের হাজির হচ্ছে কলম্বিয়া।

দুই দশক আগেকার কথা। ১৯৯৪ সালের ২রা জুলাই। কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরে প্রকাশ্যেই ৬টি গুলি করা হয়েছিল ডিফেন্ডার আন্দ্রে এস্কোবারকে। লুটিয়ে পড়েছিলেন বিশ্বকাপার৷ কী ছিল তাঁর অপরাধ ?

ফিরতে হবে ১৯৯৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপের আসরে। গ্রুপ লিগ থেকে উঠে পরবর্তী পর্বের জন্য লড়াই করতে তৈরি কলম্বিয়া৷ তাদের মুখোমুখি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ঘরের মাটিতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ৷ ফলে দেখা দিয়েছে টানটান উত্তেজনা৷ ২২ জুন ছিল খেলার দিন৷ দুই দেশের সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়েছিল৷ সবকিছু ঠিকঠাক চলছে৷ খেলা শুরু হতেই কলম্বিয়ার আক্রমণ শুরু হয়৷ প্রতি আক্রমণ করে ইউএসএ৷ ম্যাচের বল দখলের লড়াই তারিয়ে উপভোগ করছিলেন দর্শকরা৷ এমন সময় ছন্দপতন৷ খেলার তখন ৩৩ মিনিট পার হয়েছে৷ মার্কিন ফুটবলারদের আক্রমণ রুখতে গিয়েই আত্মঘাতী গোলটি করে ফেললেন এস্কোবার৷

সেই মুহূর্তে গ্যালারির জুড়ে উল্লাস আমেরিকানদের৷ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন কলম্বিয়ান সমর্থকরা৷ শেষে কিনা ক্যাপ্টেনই ধসিয়ে দিল সব৷ হতাশা কাটিয়ে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালে এস্কোবার৷ হলুদ জার্সির উজ্জ্বল কলম্বিয়ান তখন যেন লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন৷ সতীর্থরা ছুটে এলেন৷ তাঁকে সান্ত্বনা জানালেন৷ শুরু হল পিছিয়ে থেকে কলম্বিয়ার নতুন লড়াই৷ তীব্র আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল ইউএসএ গোলবক্সে৷ কিন্তু গোল হচ্ছিল না৷ সেদিন ফুটবল ভাগ্য ভর করেছিল মার্কিনীদের উপরেই৷ ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে নেয় ইউএসএ৷ ব্যাস ছিটকে যেতে হল কলম্বিয়াকে৷

দশদিন পরের ঘটনা৷ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও জমজমাট মেডেলিন শহর চলেছে নিজের ছন্দে৷ দেশে ফিরে একান্তে একটি বারে বসেছিলেন এস্কোবার৷ কে জানতে তাঁর নিয়তি এখানেই অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে আছে৷ ভগ্ন মনে বারে বসেছিলেন এস্কোবার৷ সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি করা হল৷ মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এস্কোবারকে প্রতিবার গুলি করার সময় সেই লোকটা ‘গোল’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল৷ নিশ্চিন্তে খুন করে আততায়ী একটি গাড়িতে করে পালায়৷ তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল৷

আন্দ্রে এস্কোবার নিহত৷ এই খবর ছড়িয়ে পড়ে মেডেলিন শহর থেকে কলম্বিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে৷ ততক্ষণে রক্তাক্ত ফুটবলারের দেহের ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে৷ এস্কোবারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে৷ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়৷

মনে করা হয়, এস্কোবারের আত্মঘাতী গোলের কারণে কলম্বিয়ার জুয়াড়িরা ওই ম্যাচে প্রচুর টাকার বাজি হেরে যায়। দেশে ফিরতেই তারাই খুন করেছিলো এই ছিমছাম খেলোয়াড়কে৷ অনেকের মতে এস্কোবারের মৃত্যুর কারণ ছিলো তাঁরই দেশের তীব্র জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের ভাবাবেগ। যে কারণেই হোক, সেই প্রথম কোনও বিশ্বকাপার ফুটবলার খুন হলেন৷

এস্কোবারের স্মৃতি ফিকে হয়নি৷ তাঁর স্মরণে বিশেষ প্রকল্প চালানো হয় কলম্বিয়ায়৷ রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ ও দারিদ্রে জর্জরিত শিশুরা সেখানে ফুটবল প্রশিক্ষণ নেয়৷ তৈরি হয় ভবিষ্যতের ফুটবলার৷ সেই কলম্বিয়া আবারও বিশ্ব ফুটবলের আসর মাতাতে হাজির হয়েছে রাশিয়ায়৷

এমজে/