অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দেরি ছাত্রলীগের কমিটি
আলী আদনান
প্রকাশিত : ০৬:৩২ পিএম, ৩১ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:৪৩ পিএম, ৩১ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার
অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গিয়েই ছাত্রলীগের বহুল কাঙিক্ষত কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। বিলম্ব হলেও অবশেষে কমিটির নেতৃত্ব প্রায়-ই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই অন্যদের মতামতের ভিত্তিতে শীর্ষ নেতৃত্ব বেছে নিয়েছেন। মূলত নেতৃত্ব বাছাইয়ে ৫ টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। গঠিত কমিটির ঘোষণা যেকোনো সময়ে আসতে পারে। ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে ভূমিকা রাখা সাবেক ছাত্রলীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে এমন আভাসই মিলেছে।
ওই সূত্রের দাবি, কৌশলগত কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এ ছাত্র সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্ব ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। তবে কমিটি প্রায়-ই চূড়ান্ত। এখন শুধু ক্রসচেক করে দেখার পালা। যাদের বেছে নেওয়া হয়েছে তাদের সম্পর্কে অধিকতর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের অভিযোগ আছে কি-না, যা সংগঠনে প্রভাব ফেলতে পারে। ঠিক কখন কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হবে তা বলতে না পারলেও কমিটি যে চূড়ান্ত এ ব্যাপারে একমত তারা।
একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কমিটিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের লোকজনের অনুপ্রবেশে ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠে। এমনকি বিদায়ী কমিটির কয়েকজন নেতার সম্পর্কেও এই অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের কারণে এর আগে যারা কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন তারা যেমন বিব্রত তেমনি বিরক্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বও। সেজন্যই এবার প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী নিজে কমিটি করার ঘোষণা দেন। তিনি নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের বায়োডাটা, পারিবারিক অবস্থান, একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নেতৃত্ব বাছাই করে নিয়েছেন। এমনকি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই তাগাদা দেন বাজেট ঘোষনার সার্বিক ব্যাপারে। তবে সেটি সরকারের কাজ হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার ব্যাপারে তাগিদ দেন। এসময় ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২মে অনুষ্ঠিত হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষণা আসার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারন সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনকে জানান, ‘কাউন্সিলরদের দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যেতে বলো। কমিটি আমি নিজে করব’। প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় ছাত্রলীগের সাধারণ নেতা কর্মীরা খুশি হলেও সিন্ডিকেটমুখী নেতাদের মাঝে নেমে আসে রাজ্যের হতাশা।
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা দাবি করেছেন ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের তুলে আনতে গিয়ে যাচাই বাছাইয়ে সময় ব্যয় হলেও শেষ পর্যন্ত কমিটি গঠন এখন চূড়ান্ত। যেকোনো সময় চূড়ান্ত কমিটি আলোর মুখ দেখবে।
এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা যত দেরি হচ্ছে ততই আকর্ষণ ও আগ্রহ বাড়ছে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে। তবে কেউ কেউ কমিটি নিয়ে পেশন হারিয়ে ফেলছেন। পদ প্রত্যাশী এক নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আসলে এটাই চেয়েছিলেন। সবার মধ্যে এ নিয়ে একটা আগ্রহ থাকুক। যখন উত্তেজনা হারিয়ে ফেলবে তখন হঠাৎ করে কমিটি ঘোষণা আসলে নেতা কর্মীদের মাঝে নতুন করে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে।
এদিকে একটি সূত্রের দাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে কোনো অবস্থাতেই যেন ছাত্রদল কিংবা শিবিরের অনুপ্রবেশ না ঘটে তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়েই ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণায় সময় নেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোতে ব্যাপকহারে অনুপ্রবেশ ঘটছে এমন অভিযোগ করে আসছে দলটির ত্যাগী নেতা কর্মীরা। ছাত্রলীগে ৬০% অনুপ্রবেশ ঘটেছে এমন একটি খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এতে বিরক্ত হন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নিজে কমিটি গঠনে হাত দেন। অধিকতর যাচাই বাছাই করে নেতৃত্ব বেছে নেন। এজন্যই কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে।
অগ্নিপরীক্ষায় পদপত্যাশীরা
ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে আসতে গিয়ে এবার নেতা কর্মীদের দিতে হচ্ছে অগ্নিপরীক্ষা। সেই পরীক্ষা নিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা যায়, নতুন কমিটিতে শুধু সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক নয় বরং পুরো কমিটিতে আসতে পারে সম্ভাব্য এমন নেতা কর্মীদের কঠোরভাবে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন নেতারা ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশীদের তথ্য যাচাই বাছাই করছেন।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করতে গিয়ে পাঁচটি বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছেন। পাঁচটি বিষয় হলো ছাত্র রাজনীতি ছাত্রলীগ করে শুরু হয়েছে কি-না, পরিবারের কেউ অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল কিনা, এলাকায় কোনো প্রকার চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ আছে কিনা, দলের দুর্দিনে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয়তা এবং মাদকসেবী কিংবা ব্যবসায়ী কিনা।
বাদ পড়েছেন অনেক আলোচিত ছাত্রনেতা
দীর্ঘদিন সক্রিয় ভাবে ছাত্র রাজনীতি করলেও শেষ মুহুর্তে এসে নতুন কমিটিতে জায়গা করে নিতে পারছেন না অনেক আলোচিত ছাত্রনেতা। একটি সূত্রে জানা গেছে, পদ প্রত্যাশী হিসেবে সব সময় আলোচনায় থাকলেও নতুন কমিটিতে জায়গা হচ্ছে তাদের- এমন নেতার সংখ্যা কম নয়। আবার মিছিলে অগ্রভাগে ছিলেন না মাঝের সারিতে ছিলেন- এমন অনেকেও জায়গা করে নিচ্ছেন নতুন কমিটিতে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ছাত্ররাজনীতি ছাত্রলীগের হাত ধরে হয়েছে এবং পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন ছাত্রলীগ নেতা- কর্মীদের জন্য এখন সুসময়। তার উপর যদি সে ক্লিন ইমেজের হন, কোন ধরনের চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসের অভিযোগ না থাকে তাহলে তো কথাই নেই। তারাই স্থান পেয়েছেন কমিটিতে।
/ এআর /