বিশ্বকাপের শুরুতে ব্রাজিলের মুখোমুখি লড়াকু তিন দল
প্রকাশিত : ১১:৩৬ পিএম, ১ জুন ২০১৮ শুক্রবার
এবারের বিশ্বকাপের আসর শুরু হতে আর মাত্র ১৩ দিন বাকি। এরই মধ্যে ফুটবল ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আসর শুরুর গ্রুপ পর্ব নিয়ে। কোন দল কোন গ্রুপে পড়েছে এবং কোন গ্রুপ থেকে কোন দলটি নক আউট পর্বে উঠে আসবে, এসব নিয়ে ভক্তদের আগ্রহের যেন শেষ নেই।
বিশ্বকাপের ‘ই’ গ্রুপে আছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। আরও আছে সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ‘ই’ গ্রুপের প্রিভিউ:
ব্রাজিল: ২০১৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমি-ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল ব্রাজিল। তবে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেলেকাওরা। একক নির্ভরতা কমিয়ে মানসম্পন্ন খেলা দিয়ে লড়াইয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে তারা।
কোচ তিতের অধীনে থাকা দলটি বাছাইপর্ব থেকে সবার আগে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে। বাছাই পর্বে ১৩ ম্যাচের সব কটিতেই জয়লাভ করেছে ব্রাজিল। আর প্রীতি ম্যাচে তিনটিতে ড্র এবং আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একটি মাত্র ম্যাচে পরাজিত হয়েছে।
গত আসরে নেইমারের অনুপস্থিতির কারণে ব্রাজিলকে যেভাবে পরাজিত হতে হয়েছিল, এখন আর সেই অবস্থা নেই। তারা এখন আর একজন খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল নয়। কারণ গাব্রিয়েল জেসুস, রবার্তো ফিরমিনো এবং ফিলিপ কুতিনহোর মত ব্রাজিলীয় তারকারা এখন সম্মুখভাগে যে কোনো প্রকারের আক্রমণে পারদর্শী। শুধু তাই নয়, সেলেকাওদের রক্ষণভাগও এখন বেশ সমৃদ্ধ। যেখানে মান সম্পন্ন গোলকিপার ও ডিফেন্ডার রয়েছে।
দলটির শুধু গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পার হওয়া নয়, শিরোপা জয় করারও সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে শীর্ষস্থান নিয়েই ব্রাজিলের গ্রুপ পর্ব পার হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
সুইজারল্যান্ড: ২০০৯ সালে অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপ জয় করেছিল সুইজারল্যান্ড। সেই দলটির জের্ডান শাকিরি এবং গ্রানিট জাকার মত মেধাবী গ্রুপ নিয়েই এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। সাকিরি ও জাকার মত তারকারা নিজেরদের দিনে যে কোনো কিছু ঘটানোর দক্ষতা রাখেন।
দলে আছে কিছু উদীয়মান তারকা ফুটবলারও । এদের মধ্যে ব্রিল এমবোলো,এডমিলসন ফার্নান্দেস ও ম্যান্যুয়েল আকানজি উল্লেখযোগ্য। অভিজ্ঞ সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে এরা দারুনভাবে মানিয়ে খেলতে পারেন। বাছাইপর্বে টানা নয় ম্যাচে জয় লাভ করেছিল সুইজারল্যান্ড। তারপরও বিতর্কিত এক ম্যাচ দিয়ে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে টপকে চুড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে দলটি।
গ্রুপ প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের বিপক্ষে সুইজারল্যান্ড খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে তাদের যে দক্ষতা রয়েছে তাতে কোস্টারিকা ও সার্বিয়াকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি। সব দিক বিবেচনায় গ্রুপ পর্বে তারা দ্বিতীয় অবস্থান লাভ করতে পারে। শুধু তাই নয়, দলটির নকআউট পর্বে পৌছানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
কোস্টারিকা: ২০১৪ বিশ্বকাপে বিস্ময়কর পারফর্মেন্স দেখিয়েছে কোস্টারিকা। চার বছর আগে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ওই আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে অখ্যাত দলটি। সেখানে টাইব্রেকারে হল্যান্ডের কাছে হেরে যায় তারা।
লস টিকোর এই দলটির বড় অনুপ্রেরণা হল বিশ্ব সেরা গোলকিপার কেইলর নাভাস। তবে রক্ষণভাগের কয়েকজন মুখ্য খেলোয়াড় ‘বুড়ো’ পিড়ীত হওয়ায় তাকে বেশ পরীক্ষা দিতে হবে। যেমন দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ রায়ান রুইজের বয়স হয়ে গেছে ৩২, ক্রিস্টিয়ান বোলানোর ৩৪ বছর।
গত আসরের দলে ব্যাপক পরিবর্তন এনে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ স্কোয়াড গঠন করেছে কোস্টারিকা। পরিবর্তন ঘটেছে খেলার পদ্ধতিতেও। তবুও দলটি খুব শক্তিশালী বলা যাবে না। তারা যে হোম ওয়ার্ক করেছে তাতে ইতালি, উরুগুয়ে ও ইংল্যান্ডের মতো ভালো অবস্থানেও নেই। যে কারণে গ্রুপের তলানীতে অর্থাৎ চতুর্থ স্থান নিয়েই শেষ হতে পারে কোস্টারিকার বিশ্বকাপ মিশন।
সার্বিয়া: আট বছর পর বাছাইপর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সার্বিয়া। ২০০৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বিশ্বকাপ আসরে খেলতে যাচ্ছে তারা। দলের বয়স্ক রক্ষণভাগ নিয়ে কিছুটা অভিযোগ রয়েছে। তবে মাঠের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভাঙ্গার দারুন সব কলাকৌশল ও সৃস্টিশীলতা রয়েছে তাদের।
ধারের খেলোয়াড় হিসেবে ফুলহ্যামে যোগ দিয়েই সবার নজর কেড়েছেন আলেক্সান্দার মিত্রোভিচ। দুই মিডফিল্ডার নেমেনজা ম্যাটিচ ও দুসান টেডিচও যথেষ্ঠ দক্ষ। তবে শীর্ষ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা নেই কোচ ম্লাডেন ক্রাস্টাজিচের। বিশ্বকাপে `ই` গ্রুপ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সার্বিয়া আগামী ১৭ জুন সামারায় কোস্টারিকার মোকাবেলা করবে। আর ওই ম্যাচটিই হবে যে কোন পর্যায়ে প্রধান কোচ হিসেবে তার প্রথম প্রতিযোগিতামুলক ম্যাচ।
সার্বিয়া দলটি বেশ লড়াকু মেজাজের। তবে ব্রাজিল বা সুইজারল্যান্ডের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যে কারণে গ্রুপের শীর্ষ দুইয়ে তাদের কোনভাবেই বিবেচনা করা যাচ্ছেনা। গ্রুপের তৃতীয় স্থান নিয়েই হয়তো এবারের আসর শেষ করবে সার্বিয়া।
এসি