রাগী মানুষের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি
প্রকাশিত : ১০:১১ এএম, ২ জুন ২০১৮ শনিবার
প্রতীকী ছবি
প্রবল রাগ ও চেঁচামেচির মুহূর্তে আচমকা হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে এমন রোগীর সংখ্যা কম নয়৷ জেনে রাখা ভালো, প্রচণ্ড রাগ সরাসরি জখম করে হার্ট ও ধমণীকে৷ রাগ ওঠামাত্র শরীরে শুরু হয় ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স৷ তার হাত ধরে প্রচুর স্ট্রেস হরমোন তথা নিউরোকেমিক্যাল বেরোতে শুরু করে৷ তাদের প্রভাবে হার্টরেট ও প্রেশার বাড়ে৷ ফলে এই সময় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড রাগের মুহূর্তে যারা ব্যায়াম করে রাগ কমাতে যান, তাদের আশঙ্কা আরও বাড়ে৷ আবার প্রচণ্ড স্ট্রেসের ফলে হার্টের ইলেকট্রিকাল ইমপাল্স ডিসরাপ্টেড হয়ে সূত্রপাত হয় বিপজ্জনক হার্ট রিদম ডিস্টারব্যান্সের৷ সেখান থেকেও প্রাণ যেতে পারে৷
কথায় কথায় রেগে ফাটাফাটি করেন বা গুম হয়ে বসে থাকেন এমন দেড় হাজার জনের ওপর ৩৬ বছর ধরে গবেষণা হয়েছে৷ দেখা গেছে, এদের অনেকেরই অল্প বয়সে প্রেশার বাড়ে, ইস্কিমিয়া হয়, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ আবার ধরুন হাইপ্রেশার নেই বলে ভাবলেন আপনি ঝামেলামুক্ত, এমনও নয়৷ রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এমন ১২ হাজার ৯৮৬ জন নারী–পুরুষকে স্টাডি করে ২০০০ সালে সার্কুলেশন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যাদের রাগ খুব বেশি তাদের মধ্যে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের আশঙ্কা স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা তিন গুণ৷ স্বাভাবিক মানুষ বলতে একেবারে মাটির মানুষ হতে হবে এমন নয়৷ মাঝেমধ্যে অল্পস্বল্প রাগ করলেন, মানুষকে দু’–চার কথা শেনালেন, কি চুপ করে বসে থাকলেন, তাতে তেমন ক্ষতি নেই৷ বিপদ, রাগ মাত্রা ছাড়ালে৷ বিপদ, ক্রনিকালি রেগে থাকলে৷
এ তো গেল রাগের বায়োলজিকাল এফেক্টের কথা। কিন্তু রাগ তথা যাবতীয় নেগেটিভ ইমোশন, যেমন, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন ইত্যাদি যাদের বেশি তারা সচরাচর খুব একটা স্বাস্থ্যসচেতন হন না বলেও বিপদ হয়৷
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানান, চন্ডাল রাগ এমন একটি জিনিস, যা মানুষকে একা করে দেয়৷ তার হাত ধরে বাড়ে স্ট্রেস–টেনশন৷ কখনও প্রবল ডিপ্রেশন৷ যার সব ক’টিই হার্টের জন্য হানিকর৷ অতএব যে কোনও মূল্যে অ্যাঙ্গার ম্যানেজ করা দরকার৷
অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট
(১) আপনার যে রাগ বেশি সেটা বুঝুন প্রথমে৷ এবং তার জন্য আপনি ছাড়া আর কেউ দায়ি নয়৷ কারণ যে ঘটনায় আপনি রেগে যান, তাতে অন্য অনেকেই দিব্যি মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন৷
(২) এ বার ঠিক করুন রাগ কমাবেন এবং প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন৷
(৩) কোন কোন ঘটনায় রেগে যান তা বুঝে নিন৷ সে রকম পরিস্থিতি যাতে না হয় সে চেষ্টা করুন৷ তার জন্য যদি নত হতে হয় সে-ও ভাল৷
(৪) নত হতে হয়েছে বলে যদি খারাপ লাগে, ভেবে দেখুন এর বিনিময়ে আপনার শরীর, মানসিক শান্তি, সম্পর্ক সবই কিন্তু রক্ষা পেল৷
(৫) চেষ্টা করেও পরিস্থিতি এড়াতে না পারলে প্রতিজ্ঞা করুন, যা-ই ঘটুক আপনি শুধু শুনে বা দেখে যাবেন, রাগবেন না৷ এমন কথা বলবেন না যাতে পরিস্থিতি জটিল হয়৷
(৬) চেষ্টা বিফলে গেলে অস্থির হবেন না৷ অন্য ইমোশনের মতো রাগও খানিক ক্ষণের মধ্যে কমতে শুরু করবে৷ ধৈর্য ধরুন৷ মুখ বন্ধ রাখুন৷ সম্ভব হলে সে জায়গা থেকে সরে যান। হনহন করে হেঁটে আসুন, মাথায় পানি ঢালুন কি ঘরের কাজ করুন বা কারও সঙ্গে কথা বলে মাথা ঠাণ্ডা করে নিন৷
(৭) এ সব কোনওটাই সম্ভব না হলে কাজে আসবে সুইচ অফ–সুইচ অন মেকানিজম এবং ভিস্যুয়াল ইমেজারি৷ এ হল পরিস্থিতির মাঝখানে বসে গভীরভাবে অন্য পছন্দের কিছু ভাবা যাতে মন চলে যায় অন্য কোনও রাজ্যে৷ বিশেষজ্ঞের কাছে শিখে ঘরে প্র্যাকটিস করলে বিপদের সময় কাজে লাগবে৷
(৮) ডিপ বেলি ব্রিদিং, যোগাসন, মেডিটেশনে শরীর–মন ঠাণ্ডা থাকে৷ চট করে রাগ ওঠে না৷ বা উঠলেও সহজে নেমে যায়৷ বিশেষজ্ঞের কাছে শিখে এদের জীবনের অঙ্গ করে নিন৷
(৯) মাত্রাছাড়া রাগের উত্তর হল কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি৷ ভাল বিশেষজ্ঞের কাছে করালে কাজ হয় ম্যাজিকের মতো৷ নিজেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন৷ যার প্রথম ধাপ নিজের মনকে বুঝে নেওয়া৷ যেমন,
(ক) আপনার চাহিদা কি খুব বেশি?
(খ) আপনার কি ইগো খুব বেশি? হতাশা বা দুঃখ এলে তা মানতে পারেন না? তাকে রাগ দিয়ে ঢেকে রাখেন?
(গ) জীবনে যা ঘটছে তাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেন না?
(ঘ) সমস্যা সমাধান করতে না পারলে রাগ হয়ে যায়?
(১০) এই চারটি প্রশ্নের মধ্যে লুকনো আছে রাগের কারণ৷ চাহিদা বেশি হলে তা না মিটলে রাগ হবে৷ ইগো বেশি হলে চাহিদা না মেটায় যে হতাশা বা দুঃখ হয় তা প্রকাশ করতে বা স্বীকার করতে লজ্জা হয়৷ ফলে তা চাপা পড়ে রাগের আড়ালে৷ প্রতিটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিলে হতাশা এবং দুঃখ আসার সম্ভাবনা প্রতি পদে৷ হতাশা এবং দুঃখ জমতে জমতে হয় তা রাগ হিসেবে দেখা দেয়, নয়তো ডিপ্রেশন আসে৷ সমস্যা সামনে, কী করব জানা নেই, এই অবস্থাতেও সঙ্গী হয় রাগ বা ডিপ্রেশন৷ এই সমস্যাগুলির মধ্যে কোনটা আপনার আছে ভেবে দেখুন৷ খুঁজে পেলে একটু ভাবনাচিন্তা করে তাদের সামলাতে হবে৷ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
সূত্র: আনন্দবাজার
একে//