ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিশ্বকাপে ছোট দলের হয়েও বড় তারকা তারা

প্রকাশিত : ০১:৩৩ পিএম, ২ জুন ২০১৮ শনিবার

আর মাত্র ১২ দিন পরই শুরু হচ্ছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন ও ব্রাজিলের মতো বড় দলগুলোর উপর প্রত্যাশার চাপ বেশি। তেমনি প্রত্যাশার চাপ আছে তাদের তারকা খেলোয়াড়দের উপরও। মেসি, নেইমার, রোনালদো ছাড়াও লাইমলাটে থাকলেও ছোট দলের হয়ে দ্যুতি ছড়াবেন, এমন তারকাদের নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

মোহাম্মদ সালাহ (মিশর):
২৮ বছর পর মোহাম্মদ সালাহ এর নৈপুণ্যে রাশিয়াতে যাচ্ছে মিশর। এই মৌসুমে কারিশমা দেখিয়েই চলেছেন লিভারপুলের এই তারকা ফুটবলার। এই মৌসুমে ক্লাবের হয়ে করেছেন ৩২ গোল। গোল্ডেন বুটের জন্য শেষপর্যন্ত টেক্কা দিয়েছেন লিওনেল মেসির সাথে। লিভারপুলকে তুলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালেও। লিভারপুল সালাহ এর উপর কতটা নির্ভরশীল ছিলো, তা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালেই দেখা গেছে। সালাহ এর ইনজুরির পর এক ছন্নছাড়া লিভারপুলকেই দেখা গেছে বাকিটা সময়।

এদিকে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ৫ ম্যাচে ৫ গোল ছাড়াও ২টি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। শেষ ম্যাচে কঙ্গোর সাথে নাটকীয়ভাবে জিতে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় তারা। সেই ম্যাচেও সালাহর জয়জয়কার। ৬৩ মিনিটে ভলিতে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। কিন্তু ৮৬ মিনিটে কঙ্গো সমতায় ফিরলে মিশরের বিশ্বকাপ আশা ফিকে হতে শুরু করে। ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে স্পটকিক থেকে গোল করে মিশরের প্রায় ৩০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটান মোহাম্মদ সালাহ। বিশ্বকাপেও তিনি দ্যুতি ছড়াবেন এটাই আশা করা হচ্ছে।

ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন (ডেনমার্ক)
টটেনহামের মাঝমাঠের কাণ্ডারি ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। বলতে গেলেই একাই দলকে বিশ্বকাপ মঞ্চে এনেছেন তিনি। ইতোমধ্যে পারফরমেন্স দিয়ে বড় বড় ক্লাবগুলোর নজর কেড়েছেন এই ডেনমার্ক মিডফিল্ডার। এই মৌসুমে কমপক্ষে ১০ গোল আর ১০ এসিস্ট করা ১২ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনি একজন।

পাশাপাশি ডেনমার্কের হয়েও আলো ছড়িয়েছেন পুরো বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। মিডফিল্ডার হয়েও ১২ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। সাথে রয়েছে তিনটি অ্যাসিস্ট। এরিকসনের পারফরম্যান্সে পোল্যান্ডের পেছনে থেকে প্লে অফ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ডেনমার্ক। আর প্লে অফের আয়ারল্যান্ডের সাথে একক নৈপুণ্যে ডেনমার্কের রাশিয়া যাত্রা নিশ্চিত করেন তিনি। প্রথম লেগ ০-০ ড্র হওয়ার পর, দ্বিতীয় লেগে আয়ারল্যান্ডের মাঠে গিয়ে ডেনমার্ক তুলে নেয় ৫-১ গোলের বড় জয়। আর হ্যাটট্ট্রিক করে সেই ম্যাচ জেতাতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন।

গিলফি সিগুর্ডসন (আইসল্যান্ড)
আইসল্যান্ড রূপকথার গল্প শুরু হয়েছিলো দু বছর আগেই। অন্য সব পরাশক্তিদের চমকে দিয়ে ইউরো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে ফেলে দলটি। ক্রোয়েশিয়া, ইউক্রেনকে পেছনে ফেলে সরাসরি রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করে দ্বীপ রাষ্ট্রের এ দেশটি। ডি গ্রুপে থাকা আইসল্যান্ডকে বিশ্বকাপে কিছুটা কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার পাশাপাশি তারা মোকাবিলা করবে ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার মতো দলের সাথে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার জন্য দলগত নৈপুণ্যের পাশাপাশি গিলফি সিগুর্ডসনের দিকেও তাকিয়ে থাকবে দেশটির সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ।

কেইলর নাভাস (কোস্টারিকা)
২০১৪ বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে কোস্টারিকা। যার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো ‘বাজপাখি’ খ্যাত কেইলর নাভাসের। বিশ্বকাপের পরপরই রিয়াল মাদ্রিদ কিনে নেয় এই কোস্টারিকান গোলকিপারকে। গ্রুপ-ই তে তাদের সঙ্গী নেইমারের ব্রাজিল, সার্বিয়া এবং সুইজারল্যান্ড। নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে তাদের জন্য। তবে তারা অনুপ্রেরণা পেতে পারে সর্বশেষ বিশ্বকাপ থেকেই। তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ডসহ ডেথ গ্রুপ থেকেও নক আউটের টিকেট কাটতে সক্ষম হয় তারা।

হং মিন সন (দক্ষিণ কোরিয়া)
টোটেনহ্যাম মিডফিল্ডার হং মিন সন শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাণ ভোমরাই নন, একমাত্র তারকা খেলোয়াড়ও বটে। প্রিমিয়ার লিগে নিজের সেরা মৌসুম কাটিয়েছেন এবার। ৩৭ ম্যাচে করেছেন ১২ গোল এবং ৬ অ্যাসিস্ট। হ্যারি কেনের সাথে মিলে ভয়ঙ্কর জুটিও গড়ে তুলেছেন।

প্রিমিয়ার লিগের এই ভয়ঙ্কর হং মিন সনকেই চাইবে দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও করেছেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল। সাত ম্যাচে ৭ গোলের সাথে একটি গোলে সহযোগিতাও করেছেন এই টোটেনহ্যামের মিডফিল্ডার। রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ এফ এ তাদের সঙ্গী বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি, মেক্সিকো, সুইডেন। র‌্যাঙ্কিং গড় হিসেবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে কঠিন গ্রুপটিতেই দক্ষিণ কোরিয়া। এই কঠিন গ্রুপ থেকে উত্তীর্ণ হতে হলে প্রিমিয়ার লিগের বিধ্বংসী রূপ ধারণ করতে হবে হং মিন সনকে। আর সেই প্রার্থনায়ই মগ্ন গোটা দক্ষিণ কোরিয়া।

নেমানজা ম্যাটিচ (সার্বিয়া)
ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩৫ নাম্বারে থাকা দল সার্বিয়ার বড় তারকা নিঃসন্দেহে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিডফিল্ডার নেমানজা ম্যাটিচ। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন ইতোমধ্যেই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে কাটিয়েছেন অসাধারণ মৌসুম। আসছে রাশিয়া বিশ্বকাপে তিনিই হবেন সার্বিয়ার মধ্যমাঠের কাণ্ডারি।

এমজে/