ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ডয়েচে ভেলের বিশ্লেষণ

আরএসএসের আমন্ত্রণ গ্রহণ: তৃতীয় প্লাটফর্ম দাঁড় করাচ্ছেন প্রণব?

প্রকাশিত : ০২:২৯ পিএম, ৩ জুন ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৫:০৮ পিএম, ৩ জুন ২০১৮ রবিবার

ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির যোগ দেওয়া নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তোলপাড়। প্রণব মুখার্জির দল কংগ্রেসের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সব নেতাকর্মীর মুখে মুখে এই প্রশ্ন। দলের এত বড় মাপের নেতা যিনি আজীবন ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করেছেন তিনি কিভাবে চরম উগ্রপন্থি দলের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন? ভারতের রাজনীতির ভেতর বাইরে এই গুঞ্জন জোরালো হচ্ছে যে, তবে কি আরএসএসকে নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপির দ্বিকেন্দ্রিক রাজনীতির বাইরে তৃতীয় প্লাটফর্ম করতে চাচ্ছেন প্রণব?

আগামী ৭ জুন নাগপুরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসের সদর দফতর নতুন প্রচারকদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রণব মুখার্জিকে।

এ নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে তুমুল আলোচনা শুরু হলেও ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তিনি। প্রণব মুখার্জি গত ৫০ বছর ধরে তার দল কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মতাদর্শকে লালন-পালন করে এসেছেন। আরএসএসের মতো সংঘ পরিবারের কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের থেকে শত হাত দূরে থেকেছেন। হিন্দু মৌলবাদীদের সন্ত্রাসী বলতেও বাকি রাখেননি।

২০১০ সালে প্রণব মুখার্জিই সর্বভারতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে আরএসএসের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের যোগ আছে কি-না, তা তদন্ত করে দেখতে বলেছিলেন ইউপিএ সরকারকে। কী এমন হলো যে, ৮২ বছরে এসে তিনি তার মতাদর্শ পাল্টাবেন?

এ নিয়ে অবশ্য নানা তত্ত্ব দাঁড় করার চেষ্টা করা হচ্ছে কংগ্রেস শিবিরের ভেতরে ও বাইরে। অনেকে মনে করছেন, আগামী লোকসভা সামনে রেখে কংগ্রেস ও বিজেপির বাইরে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ দাঁড় করছেন তিনি। তবে কংগ্রেসের মধ্যেই এই নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট। যদিও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য আসেনি।

সমালোচকরা বলছেন, প্রথম ইউপিএ সরকারে কংগ্রেসের সব থেকে যোগ্য নেতা হিসেবে প্রণব মুখার্জিরই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে পাশ কাটিয়ে সাবেক কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বেছে নিয়েছিলেন মনমোহন সিংকে। অনেকের অনুমান, এতে প্রণব মুখার্জির মনে নাকি চাপা অভিমান রয়েই গেছে। এ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন তিনি।

তবে কংগ্রেসের কিছু নেতা বলছেন, সংঘ পরিবারের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেই প্রণব মুখার্জির মানসিকতা বদলে গেছে, এ কথা মনে করার কারণ নেই। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবত বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ভাগবত কয়েকবার তার বাসভবনে গিয়েছিলেন। এভাবেই একটি মসৃণ সম্পর্ক বজায় ছিল উভয় তরফে।

যদিও রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রণব মুখার্জির কাছে কংগ্রেস নেতাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছিল। কেন কমে গিয়েছিল সেটাও একটা প্রশ্ন।

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, প্রণব মুখার্জি দলের প্রতিনিধি হয়ে বা রাষ্ট্রপতি হয়ে যাচ্ছেন না। যাচ্ছেন এক বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে। ব্যক্তি হিসেবে তিনি কোথায় যাবেন না যাবেন, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে প্রণব মুখার্জি সারা জীবন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছেন। সাম্প্রতিক শক্তি হিসেবে বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের সমালোচনা করে এসেছেন। এখন যদি তার মতাদর্শ পাল্টান সেটা তার ব্যাপার।

প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং প্রণব মুখার্জির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ড. অমল মুখার্জি বলেন, প্রণব আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সংবাদপত্রে খবরটা পড়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে জানান, রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সব দল এবং সংগঠনের প্রতি নিরপেক্ষ ছিলেন তিনি। সে সময় আরএসএস তাকে তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তিনি যাননি। এখন পদ থেকে সরে আসার পর, সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করছেন, এটুকুই।

এ বিষয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রণব তাদের অপেক্ষা করতে বলেছেন। আরএসএসের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি কী বলেন, সেটা যেন তারা লক্ষ্য করেন। আরএসএসের অনুষ্ঠানে গেছেন বলেই তিনি বিজেপি হয়ে যাননি।

অবশ্য কংগ্রেস নেতা বীরাপ্পা মইলির মতে, কংগ্রেসের মতাদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত হলে আরএসএসের অনুষ্ঠানে তার যাওয়া অনুচিত।

অন্যদিকে বিজেপি সরকারের কেন্দ্র্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ির মন্তব্য, আরএসএস তো আর নিষিদ্ধ সংগঠন নয় বা পাকিস্তানি সংগঠন নয়। তাহলে গেলে সমস্যা কোথায়?

পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, একটি স্বীকৃত সংগঠনের অনুষ্ঠানে একজন সম্ভ্রান্ত নাগরিক হিসেবে তিনি যাবেন, সেখানে ভাষণ দেবেন ...গণতন্ত্রের তো এটাই দস্তুর।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে।

/ এআর /